গাজীপুর

সুনির্দিষ্ট অভিযোগেই মাহি গ্রেপ্তার, পরে আদালতের নির্দেশে কারাগারে

বিশেষ প্রতিনিধি : পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা ও স্থানীয় এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা চাঁদাবাজি ও ভাংচুরের মামলায় গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ নিয়েছেন আদালত।

শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে সাত রিমান্ড চেয়ে মাহিকে আদালতে হাজির করলে গাজীপুর মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসেন রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।

অপরদিকে শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লাইভে এসে মাহিয়া মাহি কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, এজন্য মামলা হয়েছে। আমি সবকিছু জানি না, শুনেছি। বিষয়টি ভালো করে জেনে বলতে হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে মাহিয়া মাহি যে অভিযোগ (ঘুষ নেওয়ার) করেছেন সেটা সঠিক কিনা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চিত্রনায়িকা মাহি গ্রেপ্তার হয়েছেন।’

জানা গেছে, পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন করার অভিযোগে শুক্রবার রাতে বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ও ভাংচুরের অভিযোগ পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন।

পুলিশের মামলায় মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রকিব সরকারকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও ইসমাইল হোসেনের মামলায় মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারকে  হুকুমের আসামি করা হয়েছে।

ইসমাইল হোসেনের মামলায় পুলিশ আরো ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ (৩৮), আশিকুর রহমান (৩২), ফাহিম হোসেন হৃদয় (২২), জুয়েল রহমান (২৫), জমশের আলী (৪৪), মোস্তাক আহমেদ (২২), খালিদ সাইফুল্লাহ জুলহাস (৩০), সুজন মন্ডল (৩৪) ও মাহবুব হাসান সাব্বির (১৮)।

এদিকে শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রাকিব সরকার পুলিশ বিভাগ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমাত্মক, মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। একজন চলচিত্র শিল্পীর নিকট থেকে এমন বক্তব্য আশা করি না। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জমি সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে তাদের প্রতিপক্ষের নিকট থেকে পুলিশ টাকা নিয়েছে বলে যে অভিযোগ করেছেন এটা তারা কিভাবে বলতে পারেন ? এসময় তিনি জানান, মামলাগুলোর সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে।

কমিশনার বলেন, মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে এর আগে অস্ত্র, হত্যা ও ধর্ষণের তিনটি মামলা রয়েছে। ওই মামলার ঘটনা সত্য ছিল কিন্তু কেউ সাক্ষী দেয় নি। মামলাগুলো পুনরায় তদন্ত ও সাক্ষী প্রমাণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়িত আমাদের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। তার আরেক ভাই গাজীপুরের পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি ও দখলের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। আমরা গাজীপুরবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহাসড়ক থেকে অননুমোদিত ও অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এতে সড়কে স্বাভাবিক গতি ফিরে এসেছে।

দুই মামলার এজাহারে যা আছে-

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা এজাহারে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে মাহিয়া মাহি ও রকিব সরকার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ভিডিও শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে আইন-শৃঙ্খলার অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য অভিযুক্তরা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসন হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ উত্তর, অফিসার ইনচার্জ বাসন থানাসহ গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশে কর্মরত বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাদের অপমান ও হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করেছে। মামলায় রকিব সরকারকে এক নম্বর আসামি এবং মাহিয়া মাহি সরকারকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন বাসন থানার এসআই মো. রোকন মিয়া।

অপর মামলার বাদী মো. ইসমাইল হোসেনের এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বাসন থানার দিঘিরচালার ভাওয়াাল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে তার (ইসমাইল) রড বাইন্ডিং কারখানা রয়েছে। দীর্ঘদিন তার নিকট আসামীরা চাঁদা দাবি করে আসছিল। কিন্তু তারা চাঁদা না পেয়ে শুক্রবার সৌদি আরবে থাকা রকিব সরকার ও মাহিয়া মাহির নির্দেশে আসামীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে। এতে তিন লক্ষ টাকার আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাদের হামলায় তিনি আহত হয়েছে। এ মামলায় মাহিয়া মাহি ও রাকিব সরকারকে হুকুমের আসামিসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়েছেন।

উল্লেখ্য : শুক্রবার সকালে ফেসবুক লাইভে মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার অভিযোগ করে বলেন, ভোর ৫টার দিকে স্থানীয় ইসমাইল হোসেন লাদেন ও মামুন সরকারের নেতৃত্বে তাদের মালিকানাধীন সনিরাজ কার প্যালেস শো রুমে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা শো-রুমের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দরজা জানালার কাঁচ, চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর এবং শো রুমের সাইনবোর্ড খুলে নেয়। এসময় তারা অফিস কক্ষ তছনছ করে ও টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রকিব সরকারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি পক্ষ ভ’য়া-জাল কাগজ তৈরী করে রাকিব সরকারের মালিকানাধীন জমি জবর দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ জমি পাইয়ে দেয়ার জন্য জিএমপি কমিশনার এক কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এ সময় মাহিয়া মাহি দম্পতি ওরমা পালনের জন্য সৌদি অবস্থান করছিল।

এদিকে বিকেলে অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার একটি মার্কেটে সংবাদ সম্মেলনে দাবী করেছেন, ‘সনিরাজ কার প্যালেস শো রুমের জমিটি আমার (ইসমাইল)। সিএস থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত কাগজ পত্র যাচাই করে ওই জমিটি আমি ক্রয় করি। রাকিব সরকার জমিটি জোর করে দখল করে রেখেছে। সকালে আমি লোকজন নিয়ে ওই জমিতে কাজ করতে গেলে রকিব সরকারের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে ও ভাংচুর করে। হামলায় আমি সহ কয়েকজন আহত হই। আমরা কার প্যালেসে কোন ভাংচুর করি নি। সংবাদ সম্মেলনে অপর অভিযুক্ত মামুন সরকার উপস্থিত ছিলেন।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button