গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মাদক সেবন, নারী ইউপি সদস্য ও তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে কু-প্রস্তাবের অভিযোগে এক এসআইকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
শুক্রবার (১০মার্চ) রাতে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগড় ইউনিয়নের রাধানগড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ওই এসআইয়ের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তার কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা এবং ঠাকুরগাঁও রুহিয়া থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত। আর ভুক্তভোগী ওই নারী একই উপজেলার রাধানগড় গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগীর স্বামী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আমার স্ত্রী ইউপি সদস্য হবার সুবাদে রুহিয়া থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রায় আমাদের বাড়িতে সে মাদক নিয়ে আসতেন। এর মাঝে আমার স্ত্রীকে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা এবং তার সঙ্গে আপত্তিকর কাজে লিপ্ত হবার জন্য বলতেন। এমনি কি আমার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকেও কয়েকবার খারাপ কাজের প্রস্তাব দেন। আমার মেয়ে ও স্ত্রী রাজী না হওয়ায় জাহাঙ্গীর আরো বেপরোয়া আচরণ করতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, আমি প্যারালাইসিসের রোগী। এসআই জাহাঙ্গীর প্রচুর মাদক সেবন করেন। আমাকে সে মাদক সেবন করতে বাধ্য করতেন। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সে আমার বাড়িতে আসে। মাদক সেবন শেষে ফের আমার স্ত্রীকে খারাপ কাজের প্রস্তাব দেয়। এ সময় আমি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে ঘরে আটকে রেখে গণধোলাই দেয়। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ এসে তাকে আটোয়ারী থানায় নিয়ে যায়।
ওই নারীর স্বামী আরও বলেন, জাহাঙ্গীর অনেক খারাপ লোক। সে এর আগেও অনেক নারীর জীবন নষ্ট করেছে। পুলিশের চাকরি করে বলে ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চায় না। তার মতো নারী লোভী পুলিশ আমি কখনো দেখিনি।
জাহাঙ্গীরের বিষয়ে থানায় অভিযোগ করবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জাহাঙ্গীর নিজেই পুলিশের লোক। তার বিরুদ্ধে কাকে অভিযোগ দিব? কে তার বিচার করবে?
স্থানীয় সংবাদকর্মী আলমগীর, আকাশ ও আনোয়ার সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, পাশের জেলার আটোয়ারী উপজেলার রাধানগড় এলাকায় এক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক করতে গিয়ে গণধোলাই খেয়েছেন এক পুলিশের এসআই এমন তথ্য পেয়ে আমরা কয়েকজন সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি রুহিয়া থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে কয়েকজন আটক করে রেখেছে। পরে আটোয়ারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জাহাঙ্গীর আলমকে থানায় নিয়ে যায়। এরপর রুহিয়া থানার ওসি সোহেল রানা এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে নিজ থানায় নিয়ে আসেন।
তারা আরও জানান, এই পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক ও নারী কেলেঙ্কারির মামালা আদালতে চলমান। তবে বিষয়টি ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মহোদয় গুরুত্ব সহকারে দেখবেন এবং অভিযুক্ত এসআইকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হউক যাতে আগামীতে এমন জঘন্য কাজ না করে।
অভিযুক্ত এসআই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে রাধানগড় ইউপির চেয়ারম্যান আবু জাহেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমি শুনেছি পুলিশের এক এসআইয়ের সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছে। পরে পুলিশ আসলে সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এসআই জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ওই নারী টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকা আনতে তার বাড়িতে যায় জাহাঙ্গীর। এর পর কি হয়েছে তা আমি জানি না। এ বিষয়ে আটোয়ারী থানায় যোগাযোগ করলে তারা ভালো বলতে পারবে।
তবে আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল রানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এর আগেও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থানায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে মাদক সেবন ও বিয়ের নামে ভুয়া কাবিননামায় সাক্ষর করিয়ে এক নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। পরে ওই নারী এসআই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও ঠাকুরগাঁও আদালতে মামলা করেন। নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলমকে পীরগঞ্জ থেকে রুহিয়া থানায় বদলি করা হলে গতকাল রাতে আবারও নারী ও মাদকের ঘটনায় গণধোলাইয়ের শিকার হন তিনি।