জাতীয়

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব অবশ্যই অর্থবহ হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব অবশ্যই অর্থবহ হতে হবে, যাতে, কোনও চ্যালেঞ্জ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনে এসব দেশের অগ্রগতি ব্যাহত করতে না পারে।

রোববার (০৫ মার্চ) ‘সাসটেইনেবল এন্ড স্মুথ ট্রান্সলেশন ফর দ্য গ্র্যাজুয়েটিং কোহোর্ট অব ২০২১’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা, এলডিসি গ্রাজুয়ে দেশগুলো, নিশ্চিত করতে চাই যে, কোনও চ্যালেঞ্জ যেন আমাদের গ্রাজুয়েটিং-এর গতিকে আরও কমিয়ে দিতে না পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মতো স্নাতক দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতার মাধ্যমে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) লাও পিডিআর এবং নেপালের সাথে যৌথভাবে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের (এলডিসি ৫: সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) এর পাশে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ত্বরান্বিতকরণ, মানব পুঁজির উন্নয়ন, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠান নির্মাণে বিনিয়োগ, ইউটিলিটি সেবা ডিজিটালাইজ করা এবং আমাদের প্রবৃদ্ধির লভ্যাংশের জন্য ইক্যুইটি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছি। আমরা দোহা কর্ম পরিকল্পনার মতো আমাদের ভূমিকা পালন করার আশা করি।

তিনি বলেন, যদিও, আমাদের সাফল্যের জন্য, একটি অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের কোন বিকল্প নেই। এই প্রসঙ্গে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, প্রথমত, জরুরি আন্তর্জাতিক সহায়তার ব্যবস্থার জন্য এলডিসি গ্রুপগুলোর জমা দেওয়া আবেদন ডব্লিউটিও সদস্যদের ক্রমাগত যথাযথ বিবেচনা করা উচিত।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আরও বেশি এফডিআই এবং উপযুক্ত প্রযুক্তি নিয়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েট করায় এগিয়ে আসতে হবে।

তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি এড়াতে উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থার ধারণা রূপান্তরে সাহায্য করতে পারে, প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন।

চতুর্থ অগ্রাধিকার হিসেবে, তিনি বলেন, এলডিসি সমন্বিত গ্র্যাজুয়েট করার জন্য জলবায়ু অর্থায়নকে নমনীয় শর্তে উপলব্ধ করা দরকার এবং পঞ্চমত, অভিবাসন এবং রেমিট্যান্স খরচ কমাতে গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা প্রয়োাজন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশন গত ১৪ বছরে সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘ভিশন ২০২১’এর ভিত্তিতে ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছিলাম। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রতিটি খাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপির আকার এখন ৪৬০ বিলিয় মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, অথচ ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে এর আকার ছিল কেবলমাত্র ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তিনি বলেন, জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন ৩৫তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ এবং এ দেশের মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ২০২২ সালে ২,৪২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি গত এক দশকে গড়ে ৬.৫ শতাংশের অধিক হারে টানা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির ঠিক আগে আমাদের জিডিপির হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ এবং এমনকি এই মহামারিকালে ২০২০-২১ অর্থ বছরে এদেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ঘটেছে ৬.৯৪ শতাংশ।

তিনি উল্লেখ করেন, কেবল এক দশকেই দারিদ্র্যের হার ৩১. ৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশ। শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে কমে ২১ এ দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে এবং শিক্ষার হার দাঁড়িয়েছে ৭৫.২ শতাংশে।

সরকার প্রধান বলেন, “অন্যান্য দেশের মতো আমাদের অর্থনীতিও মহামারির কারণে মারাতœক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা এই রোগের বিস্তার রোধে যথাসময়ে বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে সমর্থ হয়েছি এবং মানুষের প্রায় স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করেছি।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সরকার ২৮টি প্রনোদনা প্যাকেজের আওতায় ২০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। এতে প্রায় ৭৩.২ মিলিয়ন মানুষ ও ২,১৩৫০০ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান সরাসরি উপকৃত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দরিদ্র, অনগ্রসর ও প্রান্তিক লোকদের সম্প্রসারিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, ১০.৭ মিলিয়ন দুস্থ মানুষ এখন এ সব কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করছে। তিনি আরো বলেন, তাছাড়া স্বল্প আয়ের পরিবারসমূহের কাছে সা¯্রয়ী মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে নিত্য পণ্য।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সরকার এমন একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এমডিজির সঙ্গে মিল রেখে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা তৃণমূল পর্যাযের ষ্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এসডিজির স্থানীয়করণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশের ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নের ওপরও জোর দিচ্ছে এবং গত বছর সরকার তার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে তা জনগণের জন্য খুলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সেতুটি আমাদের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের এক-তৃতীয়াংশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে। এছাড়াও, এটা আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে আরো সহজ করেছে।’

গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ মেট্রো-রেল যুগে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বহুমুখী প্রকল্পের মতো আরও অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রসর পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে, আমরা জলবায়ুু সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ এবং জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষমতা বাড়ানোকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’

সিভিএফ-এর বাংলাদেশের সভাপতিত্বকালে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার’ কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ চালু করেছি। এই যুগান্তকারী পরিকল্পনাটি পরিচ্ছন্ন শক্তির রূপান্তর, জলবায়ু-স্মার্ট অর্থনীতি ও সবুজ কাজের সুযোগের দিকে একটি পদক্ষেপ উদ্ভাবন করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছ থেকে এলডিসি উত্তরণের জন্য পাঁচ বছরের প্রস্তুতিমূলক সময়সহ চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, “আমরা আমাদের জাতিকে উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমাদের স্বল্প-মেয়াদী লক্ষ্য হল-এলডিসি উত্তরণ ও এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পরবর্তী রূপকল্প হচ্ছে-২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, জ্ঞানভিত্তিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিস্থাপক এবং সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তুলতে আমরা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করেছি। আমাদের রূপকল্প বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে-মসৃণ ও টেকসই প্রজন্ম।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয়, করোনা মহামারি ও অন্যান্য গণ-স্বাস্থ্য ঝুঁকি, জলবায়ু সংকট ও ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর ফলে পাল্টাপাল্টি অবরোধের ফলে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে- তা মোকাবিলা করছে।

এছাড়াও এ সময় নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী নারায়ণ কাজি শ্রেষ্ঠ ও লাও পিডিআর-এর উপ-প্রধানমন্ত্রী সালেমক্সে কোমাসিথ বক্তৃতা করেন।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
На нашем сайте вы найдете множество полезных советов и лайфхаков, которые помогут вам сэкономить время и улучшить качество вашей жизни. Мы делимся рецептами вкусных блюд из финской кухни и даем советы по выращиванию овощей и фруктов на вашем огороде. Подписывайтесь на нашу рассылку, чтобы быть в курсе всех новых статей и секретов! Kissat oppivat Onko kissojen kävely mahdollista pakkasella: asiantuntijan näkemys Kuinka koira valitsee omistajansa: koirankouluttajan näkökulma Vaarallisimmat paikat koirien talvikävelyille nimetty Kissan kynnet leikataan: 4 vinkkiä Voivatko koirat kärsiä vammoja? Kissan ikääntyminen: pitkäikäisyyden salaisuudet päivittäisessä elämässä Hyödyllisiä vinkkejä, herkullisia reseptejä ja puutarhanhoito-ohjeita - löydät kaiken täältä! Opi uusia tapoja tehdä arjestasi helpompaa ja nauttia herkullisista ruoista. Tutustu parhaisiin nikseihin ja käytännön neuvoihin nyt!