ধর্ম

শবেবরাতের তাৎপর্য ও শিক্ষা

গাজীপুর কণ্ঠ, ধর্ম ডেস্ক : আগামী ৭ মার্চ পবিত্র লাইলাতুল বরাত। আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনার রাত। ইসলামে ‘শবেবরাত’ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ‘শবেবরাত’ ফারসি শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘বরাত’ অর্থ ভাগ্য। দুটো শব্দ একত্রে করলে হয় ‘ভাগ্যের রাত বা ভাগ্যের রজনী।

এই শবেবরাতকে আরবিতে ‘লাইলাতুল বারাআত’ অর্থাৎ মুক্তির রাত বলা হয়। পবিত্র কোরআনে এ রাতকে ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ্’ অর্থাৎ বরকতময় রজনী বলা হয়েছে। আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে লাইলাতুল বারাআত বলা হয়। এই রাত অত্যন্ত বরকতমণ্ডিত এবং আধ্যাত্মিক তাই এই রাত থেকে কেবল সেই ব্যক্তিই পরিপূর্ণভাবে লাভবান হতে পারবে যার রুহ পবিত্র, কারণ আল্লাহপাক পবিত্র আর তিনি পবিত্র আত্মার সন্ধান করেন।

তাই আমরা যদি পবিত্র হৃদয় নিয়ে আল্লাহপাকের দরবারে এ রাতে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে রত থেকে অতিবাহিত করি, তা হলে আল্লাহতায়ালা হয়তো আমাদের ক্ষমা করবেন। এই বিশেষ রাতে আল্লাহপাক চান তার বান্দারা যেন কেবল তারই হয়ে যায়। আমরাও যদি একান্তভাবে আল্লাহর হয়ে গিয়ে এ রাতে তার ধ্যানে মগ্ন থাকি, তা হলে হয়তো আমাদের রুহকেও আল্লাহপাক পবিত্র ও তাজা করে আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে তার প্রিয় বান্দায় পরিণত করবেন। তাই এই রাতকে আমাদের কাজে লাগানো উচিত। রুহকে তাজা করার জন্য এ রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত।

আমরাও যদি আমাদের রুহকে পবিত্র করতে চাই এবং আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভ করতে চাই, তা হলে আসুন না এ রাতকে কাজে লাগাই। নিজ নিজ বাড়িতে থেকে রাতভর ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করি। এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত, বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়, বসে বসে আল্লাহর জিকির করা উচিত। আল্লাহপাকের কাছে আমরা যদি বিগলিত চিত্তে দোয়া করি, তা হলে হয়তো তিনি আমাদের ডাক শুনবেন এবং এই মহামারী করোনা থেকে আমাদের রক্ষা করবেন। যেভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছেÑ ‘তিনি কে, যিনি ব্যাকুল ব্যক্তির দোয়া শোনেন যখন সে তার সমীপে দোয়া করে ও তার কষ্ট দূর করে দেন’ (সুরা নমল, আয়াত : ৬২)।

পুণ্যে পরিপূর্ণ এ রাতের সন্ধান লাভ করা কোনো সাধারণ বিষয় নয় এবং এটি কোনো সাধারণ কাজও নয়। যে ব্যক্তি বছরের প্রতিটি দিবস ও রাত অতিশয় সাধনায় দ্বীনের ইবাদতে ব্রত থেকে পুণ্যতায় পূর্ণ হতে পারবেন, কেবল তিনিই সন্ধান পাবেন এই লাইলাতুল বরাতের সওগাত সম্ভার। মহান আল্লাহপাক তার পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে বলেন, ‘যারা ইমান আনে এবং যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করে প্রশান্তি লাভ করে। স্মরণ রেখো, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে’ (সুরা আর রাদ, আয়াত : ২৮)।

মুমিন মাত্রই এ রাতের পবিত্রতায় আল্লাহ স্মরণের মাত্রাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়, ইবাদতের একাগ্রতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এমন কোনো পুণ্যের কাজ নেই যা কিনা সে হাতছাড়া করে। তখন তার অন্বেষণ মাত্র একটাই, আর তা হলো, আল্লাহতায়ালার সন্ধান লাভ করা। এ প্রাপ্যতার মাঝেই তার আত্মার প্রশান্তি ও জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায়। প্রতিটি বছর শাবানের এই ১৪ তারিখের দিবগত রাতটি তার সেই স্বর্গ-সুধা প্রদানের জন্যই আমাদের প্রত্যেককে আহ্বান করে।

আসুন না, আমরা সবাই এ রাতে ব্যাকুল হয়ে আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের রুহকে পরিষ্কার করে দিয়ে আমাদের আত্মায় যত ময়লা জমেছে তা ধুয়েমুছে স্বচ্ছ করে দেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা যেন শুধু এই একটি রাতের অপেক্ষাই না করি, বরং প্রতিটি রাতই যেন ইবাদতে রত থাকি।

আর কদিন পরই সৌভাগ্যমণ্ডিত রমজান মাস আমরা লাভ করতে যাচ্ছি। তাই মহান এ রাতে আমাদের অনেক বেশি দোয়া করা উচিত, আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সবাইকে পবিত্র মাহে রমজান লাভেরও সৌভাগ্য দান করেন আর আমরা সবাই যেন পুরো মাস রোজা রাখার শক্তি লাভ করি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এ রাতে প্রার্থনাই থাকবে- তিনি যেন আমাদের দোষত্রুটি ক্ষমা করেন।

 

লেখক: মাওলানা এমএম আহমদ, ইসলামি চিন্তাবিদ

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button