গাজীপুর

কালীগঞ্জে‌ অপারেশন থিয়েটার থেকেই নবজাতককে ঢাকায় রেফার্ড, পথেই মৃত্যু!

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে এক প্রসূতি সন্তান প্রসবের পর অপারেশন থিয়েটার থেকেই নবজাতককে ঢাকায় রেফার্ড করেন চিকিৎসক। পরে পথেই নবজাতকের মৃত্যু হয়। তাৎক্ষণিক এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল মওকুফ করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে কালীগঞ্জ ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে।

নিহত নবজাতক পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া এলাকার মোঃ সিয়ামের স্ত্রী মিতু আক্তার (২০) প্রসব করেন।

নিহত নবজাতকের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রসূতি মিতু আক্তার গর্ভবতী হওয়ার দুই মাস পর থেকেই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক সানজিদা পারভীনের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চেকআপে ছিলো। রোববার দুপুরে প্রসব ব্যথা উঠলে দুপুর ৩টার দিকে কালীগঞ্জ ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালে কৃর্তপক্ষ তাকে ভর্তি করে। সে সময় তাকে দ্রুত সিজার অপারেশন করতে হবে জানানো হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাকে ৭নং ওয়ার্ডে অপেক্ষায় রেখে দেন।‌ পরে রাত ৯টার দিকে গাইনি চিকিৎসক সানজিদা পারভীনের নেতৃত্বে সিজার করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। এর কিছু সময় পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে। তবে নবজাতককে দ্রুত ঢাকার শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। একথার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে ঢাকায় নেয়ার পথে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। পরে তাৎক্ষণিক এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকল বিল মওকুফ করে দেয়।

নিহত নবজাতকের পিতা সিয়াম বলেন, দুপুরে মিতুর প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে কালীগঞ্জ ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করে। সে সময় তার সিজার অপারেশন করতে হবে বলে জানানো হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি ও সিজার অপারেশন জন্য আনুসাঙ্গিক সকল খরচ মিলে ১৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৬ হাজার টাকা অগ্রিম জমা করা হয়েছে।‌ এরপর দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় রেখে রাত নয়টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই জানানো হয় কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। তবে অবস্থা ভালো নয়। দ্রুত ঢাকার শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পরে তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স এনে ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মিতু গর্ভবতী হওয়ার শুরু থেকেই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক সানজিদা পারভীনের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চেকআপ করা হয়েছে। তিনি নিজেই অপারেশন করেছে। তবু শিশুকে মৃত অবস্থায় বাড়ি নিতে হয়েছে। সঠিক সময়ে অপারেশন করলে হয়তো এ ঘটনা ঘটতো না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে মিতুর সকল চিকিৎসা ব্যয় ও হাসপাতালের বিল তারা বহন করবে।

কালীগঞ্জ ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালের ম্যানেজার প্রদীপ কুমার মিত্র (ভজন) বলেন, মিতু আক্তার নামে ওই প্রসূতিকে দুপুর ৩টার দিকে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার আরো কয়েকটি সিজার অপারেশন থাকায় রাত ৯টায় তার অপারেশন করা হয়। অপারেশন করেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক সানজিদা পারভীন। পরে নবজাতকের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাকে শিশু হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। সে সময় ঢাকায় নেয়ার পথে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের বিল মওকুফ করতে প্রসূতি মিতু আক্তারের স্বজনরা অনুরোধ করেছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

তিনি আরো বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক সানজিদা পারভীন আমাদের হাসপাতালে নিয়মিত চেম্বার করেন।‌ পাশাপাশি সিজার অপারেশন করে থাকেন। আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৬ টি পর্যন্ত অপারেশন করে থাকেন চিকিৎসক সানজিদা পারভীন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক সানজিদা পারভীন বলেন, প্রসূতি মিতু আক্তারের সন্তান প্রসবের নির্ধারিত সময় ছিলো ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখ। কিন্তু তারা নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে গিয়ে প্রায় ২০ দিন অতিবাহিত করে ফেলে। পরবর্তীতে রোববার প্রসব ব্যথা উঠলে দুপুরে কালীগঞ্জ ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সিজার অপারেশনের কথা বলে। সে সময় তাকে ভর্তি করা হয়। তার আগে সকালে থেকে ভর্তি থাকা আরো চার প্রসূতির সিজার অপারেশন করে রাত সাড়ে আটটায় দিকে তার অপারেশন করা হয়। পরে নবজাতকের জন্ম হয় না। সে সময় নবজাতকের শরীর নীল রঙের হয়ে ছিল। সে কান্না করছিল না তবে শ্বাস নিচ্ছিলো। সে সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অক্সিজেন লাগিয়ে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।‌‌ পরে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রসূতি মিতু আক্তার নিয়মিত চেকআপে থাকলেও সর্বশেষ নভেম্বর মাসে আমার কাছে এসেছিলো। এরপর তারা আর আসেনি।

চিকিৎসক সানজিদা পারভিন আরো বলেন, আমি কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি বিভাগে নিয়মিত রোগী দেখি এবং সিজার অপারেশন করে থাকি। পাশাপাশি কালীগঞ্জ ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালে নিয়মিত চেম্বার করি। এছাড়াও ওই হাসপাতালের সকল সিজার অপারেশনও আমিই করে থাকি।

 

আরো জানতে….

কালীগঞ্জে মেয়াদ উত্তীর্ণ নথিপত্রে পরিচালিত হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু!

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন

কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, লাখ টাকায় রফাদফা!

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ এবং ঘটনার আদোপান্ত

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: সেই মাসুদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: হাসপাতালের পরিচালক বন্যাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

কালীগঞ্জে ‘অ্যানেস্থেসিয়া’ চিকিৎসক দিয়ে সিজারিয়ান, প্রসূতির মৃত্যু: ৬ জন গ্রেপ্তার

কালীগঞ্জে ‘অ্যানেস্থেসিয়া’ চিকিৎসক দিয়ে সিজারিয়ান, প্রসূতির মৃত্যু: ছাড়পত্রে জালিয়াতি!

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button