গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুর জেলার ৮৮৭টি সরকারি পুকুর রক্ষা এবং দখলদারের তালিকাসহ পুকুরের বর্তমান অবস্থা এবং অবৈধভাবে দখলদারদের উচ্ছেদ ও পুকুর পুনরূদ্ধারে পরিকল্পনা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সাথে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) তথ্য অধিকার আইনে করা আবেদনের নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আদালত।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক রিট শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।
জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেছিল বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। আদালতে বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী এবং তাঁকে সহযোগিতা করেনঅ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না (রিট নং ১০৪৯৩/২০২২)।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বেলা জানিয়েছে, গাজীপুর জেলার আংশিক বা সম্পূর্ণ দখলকৃত ১৯২টি পুকুরে বিদ্যমান দখলদারের তালিকাসহ পুকুরের বর্তমান অবস্থা সম্বলিত প্রতিবেদন তৈরি এবং পুকুরগুলোতে বিদ্যামান দখলদার উচ্ছেদ ও তা পুনরূদ্ধারে একটি কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুতের জন্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এবং গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর উপপরিচালককে এ নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়াও ২০২২ সালের ৩ এবং ৪ জুলাই গাজীপুরের জেলা প্রশাসনের বরাত দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ‘১৯২ সরকারি পুকুর বেদখল’ এবং ”গাজীপুরে ‘নীতিমালা উপেক্ষা’ করে প্রভাবশালীদের পুকুর ইজারা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন!” শিরোনাম প্রকাশিত সংবাদ তদন্ত করে দখল করা ১৯২টি পুকুরসহ গাজীপুর জেলার ৮৮৭ টি সরকারি খাসপুকুরের অবস্থানসহ (মৌজার নাম, দাগ নং সহ) পূর্নাঙ্গ তালিকা, দখলদারদের তালিকা ও ইজারা দেয়া হলে ইজারা গ্রহীতাদের তালিকা চেয়ে অনুরোধ জানিয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো বেলার চিঠির নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রিটে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি আদালত রুল জারি করেছেন। রুলে গাজীপুর জেলার ১৯২টি পুকুরের অননুমোদিত ভরাট, দখল, শ্রেণিপরিবর্তন ও দূষণরোধে বিবাদীগণের ব্যর্থতা কেন আইন বহির্ভূত, জনস্বার্থ বিরোধী এবং অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছে আদালত। সেই সাথে জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে দখলকৃত ১৯২টি পুকুর পুনরুদ্ধার এবং ৮৮৭টি পুকুর সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৩ জুলাই গাজীপুরের জেলা প্রশাসনের বরাত দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ‘১৯২ সরকারি পুকুর বেদখল’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী গাজীপুর জেলায় সরকারি বা খাস পুকুরের সংখ্যা ৮৮৭টি। এর মধ্যে ২২ শতাংশ অর্থাৎ ১৯২টি পুকুর পুরোপুরি বা আংশিক ভরাট করা হয়েছে। এর আয়তন প্রায় ১৫১ একর। ওই সংবাদ অনুযায়ী জেলার ৮৮৭টি পুকুরের মধ্যে মহানগর ও সংলগ্ন এলাকায় পুকুর থাকার কথা ৩৯০টি, রয়েছে মাত্র ২৩৬টি। অর্থাৎ মহানগর ও আশপাশের এলাকার ৩৯শতাংশের বেশি পুকুর (প্রায় ১৫৪টি) পুকুর দখল ও ভরাট করা হয়েছে। পুকুরগুলো ভরাট ও দখল করে সেখানেগড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাড়ি ও মার্কেট।
ওই সংবাদের ভিত্তিতে বেলা জনস্বার্থে রিট মামলা দায়ের করে এবং তথ্য অধিকার আইনে ৮৮৭টি পুকুরের অবস্থানসহ (মৌজার নাম, দাগ নং সহ) পূর্নাঙ্গ তালিকা চেয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে। ওই আবেদনের কোন জবাব না দেয়ায় ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দাখিল করে বেলা। আবেদনের প্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্যপ্রদানকারী কর্মকর্তা তথ্য প্রদান না করায় তাঁর বিরুদ্ধে গত ১৩ নভেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ও আপীল কর্মকর্তার কাছে আপীল করেন বেলা। আপীল আবেদনটি গ্রহণ করে আপীল কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তথ্য প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। এ নির্দেশের পর প্রায় ২ মাস হলেও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা তথ্য প্রদান করেনি। তাই বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০২২ সালের ৩ জুলাই জেলা প্রশাসনের বরাতে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ‘১৯২ সরকারি পুকুর বেদখল’ শীর্ষক সংবাদ তদন্ত করে দখলকৃত ১৯২টি পুকুরসহ গাজীপুর জেলার ৮৮৭টি সরকারি খাসপুকুরের অবস্থানসহ (মৌজার নাম, দাগ নং সহ) পূর্নাঙ্গ তালিকা, দখলদারদের তালিকা ও ইজারা দেয়া হলে ইজারা গ্রহীতাদের তালিকা প্রদানের এবং পুকুরগুলোর ভরাট ও দখলসহ সাম্প্রতিক অবস্থার ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা এবং বেলাকে প্রতিবেদনের কপি প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। বেলার দেয়া ওই চিঠির নিষ্পত্তি করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আরো জানতে…
গাজীপুরে ১৯২ পুকুর দখল: ব্যবস্থা নিতে ১০ সরকারি সংস্থাকে বেলার আইনি নোটিশ
গাজীপুরে ‘নীতিমালা উপেক্ষা’ করে প্রভাবশালীদের পুকুর ইজারা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন!
গাজীপুরে ১৯২ সরকারি পুকুর বেদখল!
‘খাসপুকুরে’ গাছা থানার ওসি’র মৎস্য খামার!