আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু চুক্তি স্থগিত করলেন পুতিন

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার পার্লামেন্টে দেয়া তার ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে তীব্র ভাষায় পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করেছেন।

এই সংঘাতের জন্য তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করে বলেন, ইউক্রেনকে তারা ‘রুশ-বিরোধী’ দেশে পরিণত করতে চাইছে। তিনি আরও বলেছেন, রাশিয়ার অস্তিত্ব সংকটের মুখে।

এই ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘোষণা করেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত রাখছেন।

যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ নামের এই চুক্তিটিই একমাত্র পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি, যা এখন বহাল আছে। ২০২১ সালে এটির মেয়াদ ৫ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট পুতিন এই ভাষণ দিলেন ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীর ক’দিন আগে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ রাশিয়া বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তবে এবারের বসন্তকালে তারা একটা নতুন আক্রমণ শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিবিসির রাশিয়া বিষয়ক সম্পাদক বলছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন তার ভাষণে ইউক্রেন যুদ্ধের একটা মিথ্যে বয়ান দেয়ার চেষ্টা করেছেন যাতে স্বদেশে এই যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন বাড়ানো যায়। পুতিন ধাপে ধাপে এই অভিযান চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি এটিকে ঐতিহাসিক রুশ ভূখণ্ডের মানুষকে রক্ষার মিশন বলে বর্ণনা করেন।

গত দু’বছরের মধ্যে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট পুতিন কোন স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তার এই ভাষণের সময় বার বার পেছানো হয়।

প্রেসিডেন্ট পুতিন দাবি করেন, রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ব ডনবাস অঞ্চলের সংঘাত শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, শান্তির ব্যাপারে পশ্চিমাদের যে অঙ্গীকার, তা আসলে এক ধরণের প্রতারণা। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে কিয়েভ সরকার জীবাণু এবং পরমাণু অস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করছে।

“আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এটি সমাধানের জন্য সবরকমের চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু আমাদের পেছনে ভিন্ন খেলা চলছিল। পশ্চিমারা আসলে সময়ক্ষেপণ করছিল।”

মস্কো থেকে বিবিসির উইল ভারনন বলছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভাষণটি ছিল দেশপ্রেমের বাগাড়ম্বরে পূর্ণ। তিনি আবারও নিজের দেশকে ভিক্টিম হিসেবে দেখিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর জন্য নিজের দায় এড়িয়ে গিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে দোষারোপ করে গেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকা যদি নতুন করে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা চালায়, রাশিয়াও একই কাজ করবে।

তবে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভাষণে ইউক্রেনের খেরসন থেকে যে রুশ সৈন্যদের হটিয়ে দেয়া হয়েছে, তার কোন উল্লেখ ছিল না। এটিকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে বিব্রতকর পরাজয়গুলোর একটি বলে গণ্য করা হয়।

একজন সিনিয়র ইউক্রেনিয়ান কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভাষণে তিনি যে কতটা বিভ্রান্ত এবং কতটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন, সেটাই ফুটে উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক বলেন, রাশিয়া এখন যে অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে, সেটি থেকে উত্তরণ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

“তিনি একেবারেই ভিন্ন এক বাস্তবতার মধ্যে আছেন, যেখানে ন্যায়বিচার এবং আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে কোন ধরণের আলোচনা শুরুর কোন সুযোগ নেই”, বলছেন তিনি।

এলজিবিটি অধিকার
প্রেসিডেন্ট পুতিন তার ভাষণে এলজিবিটি অধিকার নিয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, “পরিবার বলতে বোঝায় একজন নারী এবং একজন পুরুষের মধ্যে মিলন। এই পৃথিবীর সব ধর্মের পবিত্র গ্রন্থেও তাই লেখা আছে। কিন্তু পশ্চিমারা এসব পবিত্র গ্রন্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলে- আমাদের সন্তানদেরকে এই অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে হবে, এবং আমরা সেটা করবো।”

প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই কথাকে তুমুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানায় উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকরা।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button