নিজস্ব সংবাদদাতা : গাজীপুরে স্বামী পরিত্যক্তা এক নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভুয়া বিয়ের নাটক সাজিয়ে চার বছর নিয়মিত সহবাস (সেক্স) করেন কোনাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার (৪০)। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কলহ বাঁধলে আব্দুল জব্বার তাকে জানায় বিয়ের সময়ে দেয়া কাবিনের কাগজটি আসলে ভুয়া। ওই বিয়ের কোন বৈধতা নেই। এর প্রতিবাদ করলে ভুক্তভোগী নারীকে সন্তানসহ হত্যা ও সহবাসের সময়ে ধারণ করা অশ্লীল ভিডিও প্রকাশের হুমকি দেয় আব্দুল জব্বার।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর গাজীপুর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কায়সারুল ইসলামের আদালতে মামলার আবেদন করেন। এরপর বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড ও অভিযোগ আমলে নেন আদালতের বিচারক। পরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) গাজীপুর শাখাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক।
বাদীর আইনজীবী ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাল-জালিয়াতি চক্রের সদর দপ্তর গাজীপুরের ‘জোড় পুকুর’, আছে ‘ভূয়া এসি ল্যান্ডও’!
ভুক্তভোগী ওই নারী জয়দেবপুর থানার বাড়ীয়া ইউনিয়নের আমুনা বনকড় এলাকার বাসিন্দা। তিনি একসময় গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অভিযুক্ত মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার দক্ষিণ সালনা এলাকার মৃত মহত আলীর ছেলে। তিনি বর্তমানে কোনাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে কর্মরত।
মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে দুই সন্তানসহ তাকে রেখে অন্যত্র চলে যায় স্বামী। এরপর তিনি গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসে অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময় অভিযুক্ত আব্দুল জব্বার ওই ভূমি অফিসে উপসহকারী ভূমি পদে কর্মরত ছিলেন। তখন তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে আব্দুল জব্বার তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই ২০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে তাদের দু’জনের বিয়ে হয়। এরপর দীর্ঘ চার বছর স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা সংসার ও নিয়মিত সহবাস করেতে থাকে। একপর্যায়ে আব্দুল জব্বার ভুক্তভোগীকে মারধর, নির্যাতন এবং অর্থ দাবি করেন। এতে তাদের মধ্যে কলহ শুরু হয়। এরমধ্যে ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর আব্দুল জব্বার ভুক্তভোগীকে জানায় তাদের বিয়ের কোন বৈধতা নেই। তাকে দেয়া কাবিনের কাগজটি আসলে ভুয়া ছিল। সে সময় এর প্রতিবাদ করলে আব্দুল জব্বার ভুক্তভোগী নারীকে ও তার সন্তানদের হত্যার হুমকি ও তাদের সহবাসের অশ্লীল ভিডিও প্রকাশের হুমকি দেয়।
বাদীর আইনজীবী মোঃ সোহেল রানা বলেন, দন্ডবিধি ৪৯৩ এবং ৫০৬ ধারায় অভিযুক্ত আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরে গাজীপুর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কায়সারুল ইসলাম বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগ আমলে নেন এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছেন আদালত।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা থাকলেও ওই দিন প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তীতে আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য করেছেন আদালত।
জানা গেছে, ‘৪৯৩ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
‘৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক হুমকির জন্য শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। কেউ হুমকি-ধমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে বা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়া যায়।’
কোনাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অভিযুক্ত মোহাম্মদ আব্দুল জব্বারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেনি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।