গাজীপুর

কালীগঞ্জে মেয়াদ উত্তীর্ণ নথিপত্রে পরিচালিত হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু!

নিজস্ব সংবাদদাতা : নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কালীগঞ্জের জামালপুরে মেয়াদ উত্তীর্ণ নথিপত্রে পরিচালিত “নুবহা জেনারেল হাসপাতালে” অস্ত্রোপচারের (সিজার) মাধ্যমে জন্ম নেয়া এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৪ ফ্রেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।

নিহত নবজাতক বাহাদুরসাদী এলাকার সুমন মিয়ার স্ত্রী তাসনিম আক্তার (২১)‌ প্রসব করেন।

জানা গেছে, গৃহবধূ তাসনিম আক্তারের গর্ভাবস্থায় সন্তানের বয়স ৩৭ সপ্তাহ চলছিলো। সোমবার প্রসব ব্যথা উঠলে দুপুরে তাকে জামালপুরের “নুবহা জেনারেল হাসপাতালে” নিয়ে যায় তার স্বজনরা। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। সে সময় ওই হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক রাহিমা সুলতানার নির্দেশে তাসনিম আক্তারের বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসক জানায় স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করা সম্ভব নয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে অস্ত্রোপচার (সিজার) করা লাগবে। বিকালে ডা. রাহিমা সুলতানা গর্ভবতী তাসনিম আক্তারের সিজার শুরু করলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিছু সময় পরেই নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সে সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নবজাতককে ঢাকায় রেফার্ড করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আনুমানিক রাত ১০টার দিকে নবজাতককে নিয়ে তার স্বজনরা নুবহা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু অবস্থা সংকটাপন্ন থাকায় কোন হাসপাতাল নবজাতকের চিকিৎসা করতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে নবজাতককে নিয়ে পুনরায় নুবহা জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে যায় তার স্বজনরা। পরে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নবজাতককে মৃত্যু হয়।

নিহত নবজাতকের স্বজনদের বরাত দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোকাম্মেল হাসান বলেন, সিজারের পর নুবহা জেনারেল হাসপাতালে কোন চিকিৎসক এবং রাতে কোন নার্সও ছিলো না। সঠিকভাবে সেবা না দেয়ায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

অস্ত্রোপচার করা গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাহিমা সুলতানা বলেন, ওই প্রসূতির সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সময়ে তিনি নিয়মিত কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়নি। হঠাৎ প্রসব ব্যথা উঠলে নুবহা জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখা যায় গর্ভে থাকা সন্তান স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। সে সময় তার স্বজনরা সন্তান প্রসব করাতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অনুরোধে অস্ত্রোপচারের পর কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সে সময় নবজাতক ও প্রসূতি দু’জনেই সুস্থ অবস্থায় ছিলেন।‌ পরে রাতে নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। কিন্তু তারা রাতে পুনরায় নুবহা জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করান। সকালে নবজাতকের মৃত্যু হয়।

নুবহা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মিলন মিয়া বলেন, প্রসব ব্যথা নিয়ে ওই প্রসূতিকে সোমবার দুপুরে হাসপাতালে আনা হয়। পরে বিভিন্ন পরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয় চিকিৎসক। পরে স্বজনদের সম্মতিতে তার অস্ত্রোপচার করলে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পরে রাতে নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। তবে মধ্যেরাতে পুনরায় নবজাতককে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসে তার স্বজনরা। সকালে নবজাতকের মৃত্যু হয়।

তিনি আরো বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন অবহেলা ছিল না।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এস এম মনজুর-এ-এলাহী বলেন, নুবহা জেনারেল হাসপাতালের নথিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ। তাই তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগেও নুবহা জেনারেল হাসপাতালের নথিপত্র নবায়ন কতে কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নুবাহ জেনারেল হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও হয়তো গোপনে তাদের কার্যক্রম চলছিলো। নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

আরো জানতে….

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন

কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, লাখ টাকায় রফাদফা!

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: কবর থেকে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ এবং ঘটনার আদোপান্ত

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: সেই মাসুদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ

কালীগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু: হাসপাতালের পরিচালক বন্যাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

কালীগঞ্জে ‘অ্যানেস্থেসিয়া’ চিকিৎসক দিয়ে সিজারিয়ান, প্রসূতির মৃত্যু: ৬ জন গ্রেপ্তার

কালীগঞ্জে ‘অ্যানেস্থেসিয়া’ চিকিৎসক দিয়ে সিজারিয়ান, প্রসূতির মৃত্যু: ছাড়পত্রে জালিয়াতি!

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button