আলোচিত

গরুচুরির মামলায় সেই ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঢাকার ধামরাইয়ে গরুচুরির মামলায় ঢাকা জেলা (উত্তর) ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী বাবলী আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন ধামরাই থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম। চুরি করা গরু বেচাকেনা করার হোতা ছিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলী। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তার নামে চার্জশিট করা হয়েছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, গত ২৩শে অক্টোবর থেকে ৩০শে অক্টোবর পর্যন্ত সাতদিনে ধামরাই উপজেলার লাড়ুয়াকুন্ডসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে ২০টি গরু চুরি হয়। এর মধ্যে ধামরাইয়ের লাড়ুয়াকুন্ড গ্রামের আব্দুল লতিফের একটি ষাঁড় ও একটি গাভি গত ৩০ অক্টোবর রাতে চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা। ওই রাতেই এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে হাবুল সরদার নামে এক চোরকে আটকের পর গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। হাবুল সরদার বরিশাল জেলার মুলাদী থানার মৃত কদম আলী সরদারের ছেলে। এ ঘটনায় গরুর মালিক আবদুল লতিফ বাদী হয়ে ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ আটক হাবুল সরদারের স্বীকারোক্তিতে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক বাবলী আক্তার ও চোরাই গরু বহনকারী ট্রাকচালক রিপনসহ বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পান। এরপর ধামরাই থানা পুলিশ ৩রা নভেম্বর ভোর রাতে সাভারের রেডিও কলোনির নয়াবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলী আক্তার, রাজু আহমেদ (২৪), রিপন ওরফে আরিফ (২২), শাহাদাৎ হোসেন (২৮)কে গ্রেপ্তার করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধামরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত বাবলী আক্তার সাভারের গণস্বাস্থ্য এলাকার গোলাম মির্জা হাফিজ কলেজের ছাত্র পরিচয়দারী কুষ্টিয়া জেলার তার এক বন্ধু শামিদের মাধ্যমে গরু চোরদের সাথে তার পরিচয় ঘটে।

আর শামিদ ধামরাইয়ের কাচা রাজাপুর এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার ছেলে শাহাদাৎ হোসেন ও মোরশেদ নামে দুই ব্যক্তির তথ্যমতে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন কৃষকের বাড়ি থেকে গরু চুরি করতো। আর চোরাই গরু রিপনের ট্রাকের করে সাভারে ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলীর বাড়িতে তার নিজের হেফাজতে রেখে গরুগুলো বিক্রি করতেন। এ পর্যন্ত পাঁচটি গরু তার হেফাজতে রেখে বিক্রি করেছেন। সর্বশেষ একটি ষাঁড় গরু জবাই করে কসাইয়ের কাছে মাংস বিক্রি করেছেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে বাবলী আক্তার। এরপর বাবলী গরু চুরি মামলায় গ্রেপ্তারের খবর শুনে ঢাকা জেলা (উত্তর) ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২ নভেম্বর বাবলীকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেন এবং সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে। পরেরদিন ৩রা নভেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বাবলীকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করেন। পরে গরু চুরির মামলায় বাবলীসহ গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করেন। আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এদিকে গ্রেপ্তারকৃত রিপনের স্বীকারোক্তি অনুয়ারী ওই সময় ধামরাই থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে গরু চুরির মামলার বাদী আব্দুল লতিফের একটি গাভীসহ পাঁচটি চোরাই গরু উদ্ধার করে ধামরাই থানায় নিয়ে আসেন। এসময় বোর্ড বাজার এলাকা থেকে সাইদুর রহমান নামে আন্তঃজেলা গরু চোর চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন।

তিনি আরও জানান, ৩১শে জানুয়ারী ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলীসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট পাঠানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যক্তি জীবনে বাবলী আক্তার ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নের ফরিঙ্গা গ্রামের বাদশা মিয়ার মেয়ে। ১৪ বছর বয়সে তার মা মারা যান। তার বাবা সাভারের পিএটিসিতে নৈশ প্রহরী পদে চাকরি করেন এবং সাভারের রেডিও কলোনীর নয়াবাড়ি এলাকায় বাড়ি করে সেখানে বসবাস করতেন এবং তার বাবা অন্যত্র বিয়ে করেন। এরপর বাবলী সাভার সরকারি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগে (অনার্স) ভর্তি হন। আর দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে তার বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গেও বনিবনা না থাকায় উঠতি বয়সের যুবকদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন বাবলী এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ঢাকা জেলা (উত্তর) ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নেন। এরই মধ্যে কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা শামিদ নামে এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। পরে শামিদ বাবলীর স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়ে তার বাড়িতে মাঝে মধ্যেই রাত থাকতেন। আর এই শামিদের সম্পর্ক ছিল গরু চোরের হোতা ধামরাইয়ের কাচা রাজাপুর এলাকার মোরশেদ, শাহাদাৎ হোসেন, গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার আন্তঃজেলা গরু চোর সাইদুর রহমান ও বরিশালের হাবুল সরদারের সঙ্গে। এরমধ্যে মোরশেদ আর শাহাদাতের সঙ্গে সখ্যতা ছিল ট্রাক চালক রিপন ওরফে আরিফের সঙ্গে। মোরশেদ ধামরাইয়ের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে কৃষকের গরু টার্গেট করে তার চক্রের সদস্যদের জানায়। এরপর রিপনের ট্রাকযোগে ১০-১২ জনের চক্র রাতে গরু চুরি করে সাভারে বাবলীর বাড়ির একটি টিনের ঘরে তার হেফাততে রেখে বিক্রি করতো।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button