ব্যবসায়ী মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বে অববেহলা পুলিশের, ব্যবস্থা নিতে আইজিপি’র কাছে সুপারিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা : গাজীপুরে ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের (৪৫) মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের দয়িত্বে অবহেলা ছিল। এ কারণে দুইজন এএসআইকে সাময়িক বরখান্ত এবং ওসিকে প্রত্যাহার করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইজিপি’র কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে রবিউল থানায় পুলিশের হেফাজতে নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন এমটাই পুলিশের তদন্তে উঠে এসছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জিএমপি’র সদর দপ্তরে অয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মোল্যা নজরুল ইসলাম।
রবিউল ইসলাম রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শাহাদাতপুর (পোস্ট গুজিপাড়া) গ্রামের বাকি মন্ডলের ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরের বাসন থানাধীন পেয়ারাবাগান এলাকায় বসবাস করে সুতার ব্যবসা করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার বলেন, অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে আটকের পর ১৮ জানুয়ারি রাতে বাসন থানা পুলিশ মুচলেকা নিয়ে সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাসায় ফেরার পথে ঢাকা-বাইপাস সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় গুরুত্বর আহত হয় রবিউল। পরে স্বজনরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই রাতেই তিনি মারা যান। পরে রবিউলের লাশ বিনা ময়নাতদন্তে নেয়ার জন্য আবেদন করে তার স্বজনরা। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মুহিদুল ইসলাম অজ্ঞাত ট্রাক ও চালকের বিরুদ্ধে থানায় বাসন একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনাকে পুঁজি করে একদল লোক পরদিন ভোগড়া এলাকায় মহাসড়কে বিক্ষোভ, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ উপর হামলা এবং পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করে।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে কি না জানতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সোমবার তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত কমিটি নিহতের পরিবারের সদস্যসহ ৮৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তাদের দেয়া স্বাক্ষ্য থেকে তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায় রবিউলের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকও মৃত্যুর কারণ দুর্ঘটনাজনিত বলে উল্লেখ করেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে থানা থেকে আসামি ছাড়া, ভিকটিমকে বাসায় পৌঁছে না দেওয়া এবং থানার সিসি ক্যামেরা বেশকিছু দিন ধরে নষ্ট থাকলেও তা অবহিত না করা ইত্যাদি বিষয়ে দায়িত্বে অবহেলার জন্য এএসআই মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলাম এবং ওসি আবদুল মালেক খসরুকে দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই দুই এএসআইকে সাময়িক বরখাস্ত এবং থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও আইজিপিকে সুপারিশসহ চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইজিপি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন। এ ঘটনায় পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা, পুলিশ বক্স ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ঘটনায় দুইটি আলাদা মামলা হয়েছে। মামলা গুলোও গুরত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে পুলিশের আরো কারো কোন গাফিলতি বা কর্তব্যকাজে অবহেলা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো জানতে……..
গাজীপুরে পুলিশের নির্যাতনে ব্যবসায়ীর মৃত্যু: সড়ক অবরোধ, পুলিশ বক্স ভাঙচুর