ইতিহাস-ঐতিহ্য

প্রাচীন সরাইখানায় যা ছিল

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : খাবার ও বিশ্রাম মানুষকে দেয় বেঁচে থাকার আনন্দ। তার সৃজনশীলতায় যোগ করে জীবনীশক্তি। তাই মানুষ বরাবরই খাবার ও বিশ্রামকে শিল্প হিসেবে দেখে এসেছে। আজকের দুনিয়ার মতো প্রাচীন পৃথিবীর মানুষের মধ্যেও এ প্রবণতা ছিল।

আরো একবার তার প্রমাণ মিলল ইরাকের আল-হিবা নগরীতে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুসন্ধানে খ্রিষ্টপূর্ব দুই হাজার ৭০০ বছর আগের সরাইখানা পাওয়া গেল। অর্থাৎ, আজ থেকে পাঁচ হাজার আগেও মানুষ খাবার ও বিশ্রামকে সৃজনশীলভাবে ভাগাভাগি করতে চেয়েছে।

আল-হিবা নগরই প্রাচীন মেসোপটেমিয় সভ্যতার লাগাশ নগরী। সেখানে খননকার্য পরিচালনা করে গবেষকরা মাত্র ১৯ ইঞ্চি নিচেই বিস্তৃত সরাইখানার চিহ্ন খুঁজে পান। উন্মুক্ত স্থানে অবস্থিত সরাইখানাটি। বেঞ্চ ফেলা ডাইনিং এরিয়া, একটি ওভেন ও প্রাচীন আদলে নির্মিত ফ্রিজও রয়েছে সেখানে। পাওয়া গেছে খাবারের অবশিষ্টাংশ।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক রিড গুডম্যানের মতে, ‘অঞ্চলটি খনন বেশ কঠিন ছিল’। হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা থেকে ইউনিভার্সিটি অব পিসার অধ্যাপক সারা পিজ্জিমেন্তি বলেন, আবিষ্কৃত ওভেনটি অতিকায়। আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য ফ্রিজ রয়েছে। কয়েক ডজন খাবার পাত্র ও কয়েকটি পাত্রে মাছের অবশিষ্টাংশ এখনো বোঝা যায়। ফলে স্থানটি সরাইখানা হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

গুডম্যান দাবি করেছেন, সবচেয়ে অবাক করার বিষয় এখানকার অতিকায় ওভেনটি। ‘একে আমি অসম্ভব সুন্দর বলেই মনে করি। বিভিন্ন সময়ে রান্নার কারণে মাটি লালচে রঙ ধারণ করেছে। ছাই জমে বদলে গেছে গঠন।’

দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার সবচেয়ে পুরোনো নগরীর একটি হিসেবে গণ্য করা হয় লাগাশকে। খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ থেকে দুই হাজার বছর আগে পর্যন্ত জনাকীর্ণ ছিল অঞ্চলটি। বিকাশ হয়েছিল নাগরিক সভ্যতার। প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার জুড়ে সেই চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন প্রত্মবিদরা।

২০১৯ সালে এখানে খনন শুরু হয় গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলে। খননকার্যটি ছিল ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেন মিউজিয়াম ও বাগদাদের স্টেট বোর্ড অব অ্যান্টিকুইটিজ অ্যান্ড হেরিটেজের যৌথ উদ্যোগে। নতুন কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয় এই গবেষণায়। সঙ্গে যুক্ত হয় হাল প্রযুক্তির ড্রোন ফটোগ্রাফি ও জেনেটিক অ্যানালাইসিস।

আগের খননকাজে শুধু ধর্মীয় স্থাপনা ও অভিজাতদের জীবনযাপন বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু লাগাশ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রজেক্টের পরিচালক ও পেন মিউজিয়ামের কিউরেটর হোলি পিটম্যান বলছেন, বর্তমান আবিষ্কার অভিজাত অঞ্চলের বাইরে নতুন কিছু দেখাচ্ছে। রাজা ও দাসদের জীবনের বাইরে জানা যাবে মধ্যবিত্তের জীবন। এ আবিষ্কার প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ইতিহাস ও সমাজ সংস্কৃতি ওপর নতুন করে আলো ফেলবে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button