গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মাদক মামলার আসামির মোটরসাইকেল বিক্রির অভিযোগে রাজশাহীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম সিদ্দিকুর রহমানের পদানবতির আদেশ দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চে নওগাঁর রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মোটরসাইকেল বিক্রির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়। তদন্ত শেষে মামলার বিচারক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হাসানুল হায়দার গত ২৯ জানুয়ারি এ রায় দেন। রায়ের কপি গত ৩০ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগর পুলিশ-আরএমপি কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ নওগাঁর রাণীনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তরিকুল ইসলাম নগরব্রীজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় কুজাইল গ্রামের কেফায়েত হোসেনকে (২৯) হেরোইনসহ আটক করা হয়। আটকের সময় কেফায়েতের আরটিআর এ্যাপাচে ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলটি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। কেফায়েতের বিরুদ্ধে ওইদিনই থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করা হয়। পরদিন কেফায়েতকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
কিন্তু পুলিশ তার মোটরসাইকেলটি জব্দ তালিকার বাইরে রাখে। এ ঘটনার পর ৬ মার্চ এএসএম সিদ্দিকুর রহমান ও মামলার বাদী এসআই তরিকুল ইসলাম মিলে কেফায়েতের মোটরসাইকেলটি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বেলাল হোসেন নামের এক কাজীর কাছে গোপনে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগে পাওয়া যায়। পরে মোটরসাইকেল গোপনে বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হলে কেফায়েতের বাবা আব্দুস সালামকে থানায় ধরে এনে ৭০ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন তারা। এ সময় কেফায়েতের বাবাকে বলা হয়, মোটরসাইকেল বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এই ৭০ হাজার টাকা দিলাম। কোথাও অভিযোগ করলে ছেলের সঙ্গে তোমাকেও জেলে থাকতে হবে।
এ দিকে, মামলার জব্দ তালিকায় মোটরসাইকেল না দেখিয়ে বিক্রির করে দেওয়া সিদ্দিক ও তরিকুলের বিরুদ্ধে কেফায়েতের বাবা আব্দুস সালাম পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি জানান, তার ছেলের মোটরসাইকেলটির বৈধ কাগজপত্র ছিল। সে হিসেবে তিনি মোটরসাইকেলটি জিম্মায় চেয়েছিলেন আদালতের কাছে। কিন্তু আদালত থেকে জানতে পারেন, মামলার সঙ্গে মোটরসাইকেলটি জব্দ দেখানো হয়নি। তবে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, মোটরসাইকেলটি বেলাল কাজীর কাছে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেলটির বাজার দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা। তবে এ বিষয়ে তিনি প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ করেন। ঘটনাটি কয়েকবার তদন্তও হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নওগাঁর পুলিশ সুপারকে ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওসি সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। পরে বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ-আরএমপির মতিহার জোনের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) একরামুল হক। দ্বিতীয়বার তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা মেলায় বিভাগীয় মামলার বিচারক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত আইজিপি হাসানুল হায়দার ২৯ জানুয়ারি এ রায় দেন। রায়ে ওসি সিদ্দিকুর রহমানকে পরিদর্শক পদ থেকে পদাবনতি দিয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) করার আদেশ দেন। এই আদেশ সাময়িক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করতে পারবেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এ ধরনের আদেশের কপি এখনো হাতে পাওয়া যায়নি।
বিভাগীয় মামলার (প্রসিডিং) তদন্ত কর্মকর্তা আরএমপির মতিহার জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার একরামুল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ওই ঘটনা তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগগুলো তদন্ত করে আমি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। তবে শাস্তির বিষয়টি জানা নেই।’
এএসএম সিদ্দিকুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মানে কী? আপনাদের কাছে কি কাগজ গেছে? এসআই তরিকুল মাদকের এক আসামিকে ধরে একটি মোটরসাইকেল সিজ করে নেয়। পরে তাকে শোকজ করা হয়েছিল। পরে তরিকুলের শাস্তি হয়েছে।’