গাজীপুরে প্রতারণার শিকার প্রবাসী, স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা
বিশেষ প্রতিনিধি : প্রবাসী জামাতার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ আসামি রাকিব সিকদারকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। মামলার অপর আসামি প্রবাসীর স্ত্রী, শ্বাশুরি ও মামাশ্বশুর পলাতক থাকার পর গত রোববার আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী প্রবাসী রুবেলের ভাষ্য ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, তাদের বাড়ি মহানগরের সদর থানার ২৮ নম্বর ওয়ার্ড হাড়িনাল এলাকায়। তিনি ২০০৬ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রদেশ দুবাই থাকেন। তার পিতা ও ছোট ভাই সোহেল রানাও দুবাই প্রবাসী। রুবেল বিগত ২০১৮ সালে দেশে ছুটিতে এসে পূবাইল থানার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড বসুগাঁও এলাকার সফুর উদ্দিনের কন্যা সাথী আক্তারকে সামাজিকভাবে বিবাহ করেন। বিবাহের এক সপ্তাহ পর আবার দুবাই চলে যান। স্ত্রী সাথী আক্তারকেও পরবর্তীতে দুবাই নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু কলেজে লেখাপড়ার অজুহাতে সাথীর পরিবার আপাতত সাথীকে দুবাই দিতে রাজি হয়নি। ফলে রুবেল বিদেশ থেকে প্রতিমাসে সাথীর লেখাপড়া ও ভরণপোষণ বাবদ ৪০-৪৫ হাজার টাকা করে পাঠাতেন। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতেও সাথীর পরিবার রুবেলের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিত। শ্বশুর বাড়িতে দোকান করার জন্যও রুবেল মোটা অংকের টাকা পাঠান। রুবেলের টাকায় দোকানঘর নির্মাণ ও মালামাল ক্রয় করে শ্বশুর সফুর উদ্দিন ও সম্বন্ধি রাকিব সিকদার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।
বিবাহের এক বছর পর রুবেল ছুটিতে দেশে আসেন। তিনি নিজের বাড়িতে না গিয়ে স্বর্ণলঙ্কারসহ মূল্যমান মালামাল নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে উঠেন। একমাস শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করার পর আবার দুবাই চলে যান।
বিদেশে অবস্থানকালে বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। অবশেষে শ্বশুর-শ্বাশুরির পরামর্শে ভিসা বাতিল করে গত বছর (২০২২) ১১ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন এবং শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করে নিজের টাকায় গড়া ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান (মুদি দোকান) পরিচালনা করে আসছিলেন। দেশে ফেরার পরও স্ত্রী সাথীর চলাফেরা ও গতিবিধি তার সন্দেহ হচ্ছিল।
পরে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারেন তার স্ত্রী একাধিক পুরুষের সাথে পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে রয়েছে। এমনকি শ্বশুর বাড়ির সকলের আচরণই তার কাছে প্রতারণামূলক মনে হলে তিনি বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা, স্বর্ণলঙ্কার, মালামাল ও দোকানের হিসাব চান। এতে স্ত্রী, শ্বশুর, শ্বাশুরি, মামাশ্বশুর ও সম্বন্ধির সাথে তার বিরোধ দেখা দেয়। এমনকি এ নিয়ে একাধিকবার তাকে মারধরও করা হয়।
একপর্যায়ে গত বছর ১৭ অক্টোবর রুবেলকে ডিভোর্স দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এ ঘটনার ৫ দিন পর রুবেলকে আবার বাড়িতে খবর দিয়ে এনে সকলে দুঃখ প্রকাশ করে এবং নতুন করে ৫ লাখ টাকার দেনমোহরে দ্বিতীয়বার তাদের বিবাহ পড়ানো হয়। আর কখনো ভুল হবে না শ্বশুরবাড়ির স্বজনরা এমন আশ্বাস দিলে রুবেল সরল বিশ্বাসে খুশি হয়ে অবশিষ্ট মালামাল ও স্বর্ণালঙ্কারও তাদেরকে দিয়ে দেন। কিন্তু দ্বিতীয় বার বিবাহের প্রায় এক সপ্তাহ পর আবারো তাকে ডিভোর্স দিয়ে রিক্ত হস্তে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এঘটনায় তিনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। স্থানীয় বিচার সালিশে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা থেকে নগদ ৫ লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মালামাল রুবেলকে ফেরত দেওয়ার রায় হয়। কিন্তু রুবেলের শ্বশুরবাড়ি সামাজিক বিচারের এ রায় প্রত্যাখান করে এবং রুবেলকে বাড়িতে আটকে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে বাড়ি থেকে চিরতরে তাড়িয়ে দেয়। রুবেল এ ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, জেলা প্রশাসক ও জিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে গত ২১ জানুয়ারি গাজীপুর সদর থানায় মামলা (নং-২৯) দায়ের করেন।
মামলায় স্ত্রী সাথী আক্তার, শ্বাশুরী রোকসানা বেগম, মামাশ্বশুর বুলবুল সরকার ও সম্বন্ধি রাকিব সিকদারকে আসামী করা হয়।
পুলিশ রাকিব সিকদারকে গ্রেপ্তার করে গত ২৬ জানুয়ারি আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। অপরদিকে গত ২৯ জানুয়ারি মামলার অন্যান্য আসামীরা আদালতে আত্মসমর্থন করে জামিন লাভ করেন। জামিন পেয়ে মামাশ্বশুর বুলবুল সরকার ও তার সহযোগীরা রুবেলকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এদিকে এসংক্রান্তে অনুষ্ঠিত গ্রাম্য সালিশের সভাপতি ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. বজলুর রহমান বাছির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি জুরিবোর্ড গঠন করে প্রবাসীর টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও জিনিসপত্র ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। কিন্তু বিবাদীরা এক দিন সময় নিয়ে পরবর্তীতে সালিশী রায় প্রত্যাখান করলে আমরা রুবেলকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দিয়েছিলাম।