গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানের গায়ে আগুন লাগিয়ে হত্যার ঘটনার একমাস পূর্ণ হয়েছে আজ। ঘটনার এক মাস পরে কতটা এগিয়েছে মামলার কার্যক্রম?
“মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে, শীঘ্রই এ মামলার চার্জশীট দেয়া হবে” – বলে জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই এর উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার।
মার্চের ২৭ তারিখে বাংলাদেশে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এক মামলা করেছিল নিহত নুসরাতের পরিবার। সেদিনই অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনারই জের ধরে এপ্রিল মাসের ছয় তারিখে মাদ্রাসার ভেতরের পরীক্ষার হল থেকে ডেকে ছাদে নিয়ে গিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় কয়েকজন। শতকরা ৮০ ভাগ পোড়া শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ১০ই এপ্রিল সেখানেই নুসরাতের মৃত্যু হয়।
মি. মজুমদার বলেন, “আমাদের মাঠের কাজ শেষ, মানে আলামত সংগ্রহ শেষ। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, মানে চারটি বোরকা, কেরোসিনের পাত্র ইত্যাদি আলামত জব্দ করেছি। এ পর্যন্ত পুরো ঘটনায় ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি, এর মধ্যে ১৬ জনই গ্রেপ্তার হয়েছে, ১২জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।”
“এখন আমাদের দাপ্তরিক কিছু কাজ বাকী আছে। সেগুলো শেষ হলেই আমরা চার্জশীট দিতে পারব” বলেন মি. মজুমদার।
নুসরাতের পরিবার জানিয়েছে, মামলার তদন্ত এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের অগ্রগতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। নুসরাত জাহানের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানিয়েছেন, ঘটনার এক মাস পার হলেও এখনো ঘটনার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি তার পরিবার।
“আমরা এ পর্যন্ত মামলার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট। পুলিশ দ্রুত চার্জশীট দিতে চায়, আমরা তাতে খুশী, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যাতে প্রকৃত কোনো দোষী বা আসামির নাম বাদ পড়ে না যায়, সে জন্য সচেতন থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা।”
ঐ ঘটনার সময় ফেনীর সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন এবং একজন উপপরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ।এর আগে ১০ই এপ্রিল তাকে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এই নুসরাত হত্যাকান্ড। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের ক্ষেত্রে এ ঘটনা কি কোন প্রভাব রাখতে পেরেছে?
নারী অধিকার কর্মী নীনা গোস্বামী মনে করেন, একেবারেই কোন প্রভাব নেই, কারণ নির্যাতনের ঘটনা থেমে নেই।
“কয়েক বছর আগে টাঙ্গাইলে বাসে গণধর্ষণ করে রুপা নামের একটি মেয়েকে হত্যা করা হয়েছিল। মাত্র কয়েকদিন আগেও একইভাবে কিশোরগঞ্জে ইবনে সিনার নার্স একটি মেয়েকে একইভাবে হত্যা করা হয়েছে। একটার পর একটা একই ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে চলেছে, কিন্তু কোন প্রতিকার হচ্ছে না।”
“সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন জবাবদিহিতা নেই, আবার বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে মানুষের মনে কোন অপরাধ করা নিয়ে কোন ভীতিও কাজ করে না। যে কারণে এ ধরণের ঘটনা বন্ধও হচ্ছে না” – বলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি