আলোচনায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। তিনি পর পর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী তার আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরইমধ্যে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য যোগ্য প্রার্থী নিয়ে ভাবছে। আর সংসদে অন্য কোনো দল প্রার্থী দেবে এমন কোনো আলোচনা নেই। আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি।
সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক তার জীবনে দুইবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন। এটা পর পর বা যে কোনো সময়ে। দুই বারের বেশি রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। আবদুল হামিদকে ফের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান সংশোধন করার কোনো ইচ্ছা এই সরকারের নাই। তারা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য যোগ্য লোক খুঁজছেন।
রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হলো নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে পাঁচ বছর। এর আগে সরকার পরিবর্তন হলেও সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তিনিই রাষ্ট্রপতি থাকবেন। আর তার উত্তরসূরী দায়িত্ব না পর্যন্ত তিনিই রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি
সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন সংসদ সদস্যদের ভোটে৷ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। তারাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। তবে, যে সংসদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে, ওই সংসদের মেয়াদে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না। আর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম বৈঠকের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে পদ শূন্য হলে শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
রাষ্ট্রপদি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয়না। তবে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থক লাগে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
সংবিধানের ৪৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি-
(ক) পঁয়ত্রিশ বছরের কম বয়স্ক হন; অথবা
(খ) সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য না হন; অথবা
(গ) কখনো সংবিধানের অধীন অভিশংসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদ হতে অপসারিত হয়ে থাকেন৷
আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনে দল প্রার্থী দেবেনা
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি। আওয়ামী লীগের মোট আসন ৩০২টি, জাতীয় পার্টির ২৬, বিএনপির সাত জন পদত্যাগ করায় তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই, গণফোরামের দুইটি এবং স্বতন্ত্র তিনটি আসন। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্রদের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেয়ার সুযোগ আছে।
এ বিষয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী দিয়ে কী লাভ? সংসদে আমাদের ভোট আছে দুইটি। এখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দলের প্রার্থীর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রার্থী দেয়ার জন্য প্রার্থী দেয়ার কোনো মানে হয়না।”
জাতীয় পার্টিও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেবেনা বলে জানা গেছে।
আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘এখানে সংসদে অন্যদল প্রার্থী দিয়ে কী করবে? গোপন ব্যালটে ভোট হলেও তো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফ্লোর ক্রসিংয়ের কোনো সুযোগ নেই।”
রাষ্ট্রপতি পদের গুরুত্ব
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তার তেমন কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নাই। এটা একটি অলংকারিক পদ। তিনি সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই কাজ করবেন। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করতে বাধ্য নন।
মোকাব্বির খান বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা জরুরি। সাবেক রাষ্ট্রপতিরাই তো বলেছেন রাষ্ট্রপতির মাজার জিয়ারত ছাড়া কোনো কাজ নাই।”
তার কথা, ‘‘সংবিধান সংশোধন করে শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনাই যথেষ্ঠ নয়। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদও একজনের জন্য সর্বোচ্চ দুইবার করা উচিত।”
মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভরসাম্য এবং প্রধানমন্ত্রীও দুই মেয়াদের বেশি নয়- এই আলোচনা অনেক দিনের।
কিন্তু করবে কে?’‘
কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি?
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। আর সংবিধানও সংশোধন করা হবেনা। ফলে আবদুল হামিদের পর নতুন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে নানা সূত্রের বরাত দিয়ে সম্ভাব্য বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় থাকার কথা বলা হচ্ছে। তাদের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুসহ আরো অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কে হবেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী এটা প্রধামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা নিয়ে অন্য কারোর কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই৷ কেউ মন্তব্য করতে রাজিও হননি।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্পিকার হিসেবে দুই বার দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সূত্র: ডয়চে ভেলে