আলোচিত

মোসাদ-এর সঙ্গে বৈঠক: দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার ভিপি নুর!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর এর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সরকারের অগোচরে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এমন একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার বৈঠকের কারণে দেশে ফেরা মাত্র নূরকে গ্রেপ্তার করা হবে।

তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি পড়তে হবে। ভিপি নূর বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। তার আগে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান। সেখানেই তিনি একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে ভিপি নূরের এমন তৎপরতায় গণঅধিকার পরিষদের কয়েকজন নেতাকেও নজরদারীতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার (৪ জানুয়ারী) রাতে র‌্যাব পুলিশসহ আইশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, ওপেনলি ভিপি নূরু মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে। যা তিনি করতে পারে না, কারণ ওই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, মোসাদ-এর সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের পর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এটা নিয়ে চলে ব্যাপক তোলপাড়। ছবিটি পর্যালোচনা করে এটি এডিট নয় বলেও মতামত দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষজ্ঞ টিম।

এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা খোঁজ খবর রাখছি। আমাদের বিশেষ টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

এদিকে নূর বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় দেশের গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেন। তিনি দাবি করেন, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্যের সঙ্গে আমাদের মিটিং বা সভা করার কোনো প্রয়োজন নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোসাদ-এর সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন নুরুল হক। মেন্দি এন সাফাদি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টিরও সদস্য। গত ২৮ ডিসেম্বর দুবাইয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নূর তার সঙ্গে বৈঠক করেন।

ওই সূত্রটি জানায়, সোমবার রাতে ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি এবং পেজ থেকে তাদের দুই জনের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, একটি রেস্টুরেন্টের সামনে মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। এর আগে ২০১৬ সালে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের ছবি প্রকাশ পেলে তোলপাড় শুরু হয়। এক পর্যায়ে বিএনপির ওই নেতার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি গ্রেপ্তারও হন।

জানা যায়, সম্প্রতি নুরুল হক নূর কাতার যান। সেখান থেকে তিনি দুবাই যান। সেখানে তিনি দেশ থেকে ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠকও করেন। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে নানা ধরনের উসকানিমূলক কথা বলেন। সম্প্রতি তিনি দুবাই থেকে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করেন। এরই মধ্যে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তার ছবি প্রকাশ পায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, ছড়িয়ে পড়া ছবি নিয়ে ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ ছবিটি এডিট করা হয়েছে কিনা জানতে ফটোগ্রাফি বিভাগে দীর্ঘদিন কাজ করা বিশেষজ্ঞ এবং সাইবার ক্রাইমে কাজ করা একাধিক কর্মকর্তা তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। ছবিটির সিমিলার ইমেজ, রিভার্স ইমেজ সার্চ থেকে শুরু করে ওয়েব্যাক মেশিনেও চেক করা হয়।

এ বিষয়ে ফটোগ্রাফি বিভাগ থেকে চারটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়। যার প্রথমটি হলো ‘সাবজেক্ট এজ’ সাধারণ অর্থে বললে, যেই ব্যক্তির ছবি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তার শরীরের বাহিরের বর্ডার লাইনের সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি পিক্সেল পারফেক্ট হবে না। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো চুল। সেটা পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। যা প্রমাণ করে এই ছবিটি এডিট করা নয়।

অপর বিষয়টি হলো সূর্যের আলো। ছবিটিতে বামপাশ থেকে সূর্যের আলো প্রথমে মেন্দি এন সাফাদির গায়ে পড়েছে এবং এই ব্যক্তির শরীরের ছায়া স্পষ্টভাবে পড়েছে নূরের শরীরে যা আসলে এডিট করে বসানো সম্ভব নয়। এমনকি নূরের পায়ের জুতাটিতেও ছিল সূর্যের ছটা। অর্থাৎ এভাবে ছবির আলো এডিট করা সম্ভব নয়।

তৃতীয় বিষয়ে বলা হয়েছে, তাদের উভয়ের দাঁড়ানোর ভঙ্গি। এ ক্ষেত্রে ছবিটিতে স্পষ্ট বোঝা যায়, উভয়ে দাঁড়িয়েছে পাশে কাউকে রেখে। ধরে নেওয়া হোক এটি এডিট করা ছবি।

সেক্ষেত্রে নূরকে যদি অন্যকারো ছবির ওপর প্রতিস্থাপন করা হয়, তাহলে এটি অসম্ভব যে একই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং ভঙ্গিমায় হুবহু আরেক ছবি মিলবে যা এভাবে শতভাগ মিলে যাবে।

সর্বশেষ পয়েন্টে বলা হয়েছে, তাদের উভয়ের দৃষ্টিকে। ছবিটি জুম করলে বোঝা যায়, উভয়ে একই ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এডিট করা ছবিতে যত বেশি জুম করা হবে ততই তাদের তাকানোর পার্থক্য বোঝা যাওয়া উচিত। এখানে সেটি হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি নূরের তোলা ছবিগুলোতেই এই শার্ট পরা অবস্থায় তাকে দেখা গেছে। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, তার জুতো এবং শার্ট এক। কিন্তু এ ধরনের ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো ও এই পোশাক পরা নূরের কোনো ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই। ফলে এই ছবিটি প্রকৃত ছবি। এডিট করা নয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, ছবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন উইং এটি নিয়ে কাজ শুরু করে। সম্প্রতি তার বিদেশে অবস্থান, চলাচল এবং সর্বশেষ মোসাদের এ এজেন্টের সঙ্গে ছবি নিয়ে দেশের বাইরেও খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। ছবিটি এডিট নয় এমন সত্যতা পাবার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে গভীর কাজ করছেন গোয়েন্দারা।

কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে। তিনি দেশে আসা মাত্রই এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়বেন। তিনি যেহেতু এখনো দেশে আসেননি সেহেতু গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম গণঅধিকার পরিষদের একাধিক নেতার ওপর নজরদারী শুরু করেছেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এম হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ভিপি নূরের সঙ্গে সাংবাদিকদের টেলিফোনে কথা হয়।

তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এই দেশটির বাংলাদেশের ক্ষমতার পরিবর্তনের প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্যের সঙ্গে আমাদের মিটিং বা সভা করার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি একটি বিভ্রান্তিকর সংবাদ। গণঅধিকার পরিষদ সরকারের বিরুদ্ধে গোপন কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নয়। আমরা প্রকাশ্যেই সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছি। আওয়ামী লীগের সাইবার টিমের সদস্যরা এই ছবিটি এডিট করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।

 

সূত্র: ঢাকা প্রকাশ

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button