অর্থনীতিআলোচিতজাতীয়

সংকটের মধ্যেও রপ্তানি আয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের রপ্তানি আয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। প্রবাসী আয়ও কাটিয়ে উঠছে খরা।

বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ তারপর এখনো রিজার্ভ ও ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন এই ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে পারলে রিজার্ভ ও ডলারের ওপর চাপ ধীরে ধীরে কমবে।

তারা বলছেন এটা একটা সুখবর। তবে এখনই এটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়া ঠিক হবে না। কমপক্ষে ছয় মাস এই ধারা অব্যাহত থাকলে ইতিবাচক দিকগুলো আরো স্পষ্ট হবে। আর এখন আমদানি কমিয়ে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর কৌশল শেষ পর্যন্ত নেতিবাচক হতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে ডিসেম্বরে ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, গত বছরের একই মাসের তুলনায় যা ৯.৩৩ শতাংশ বেশি। আর ডিসেম্বরের রপ্তানি আয় তার আগের ১১ মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ। এই রপ্তানি আয় বাড়ার পিছনে প্রধান অবদান তৈরি পোশাক খাতের। ডিসেম্বরে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৮.২ শতাংশ। বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই আসে এই খাত থেকে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর( ইপিবি) শেষ হিসাব বলছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট দুই হাজার ৭৩১ কোটি ১২ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৫৮ শতাংশ বেশি।

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গত ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৫৬ শতাংশ।ছয় মাসে পোশাক খাত থেকে দুই হাজার ২৯৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

এই সময়ে এর বাইরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ। ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে প্ল্যাস্টিক খাত। তবে পাট ও পাটজাত পণ্য এক কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় কমেছে।

প্রবাসী আয়

ডিসেম্বরে প্রবাসী আয়ও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাক বলছে ডিসেম্বরে প্রবাসীরা দেশে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৩ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) ছয় মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৪৯ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ২৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার বেশি এসেছে।

আমদানি কমলেও আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ১৫ মাস ধরে কমছে রিজার্ভ। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন বা চার হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। আমদানি দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রির কারণে তা কমে এখন ৩৪ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ডলার-সংকট দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন প্রবাসী আয় দেশে আনতে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম দিচ্ছে ১০৮ টাকা। আর রপ্তানি আয় নগদায়নে ডলারের দাম ধরা হচ্ছে ১০০ টাকা। আমদানিতে ডলারের দাম ১০৫-১০৬ টাকা। তবে ভোগ্য পণ্যের আমদানি কমালেও শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্র আমাদানি কমালে তাতে নেতিবাচক ফল হতে পারে। এটা অব্যাহত থাকলে রপ্তানি আবার কমে যাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মহমুদ তিতুমীর মনে করেন,” প্রকৃত রপ্তানি আয় বেড়েছে কি না সেটা এখনই বোঝা যাবে না। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে তাই পণ্যের দামও বেড়েছে। ফলে ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে। আর রেমিট্যান্সও যত লোক বিদেশে যাচ্ছে সেই তুলনায় বাড়ছে না।”

তার কথা,”সামষ্টিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব আছে কি না তা দেখতে হবে। মূল্যস্ফীতি বজায় আছে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছেনা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে চলছে বাণিজ্যিক ব্যংকগুলো বিনিয়োগকারীরা ঋণ সংকটে আছে।

আর সিরডাপের পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন,”রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ার ঘটনা ভালো খবর। কিন্তু ৫-৬ মাস না দেখে এটা অব্যাহত থাকবে কি না তা বলা যায় না। অনেক সময় সিজনাল কারণেও এটা বাড়ে। আমরা এখন আমদানি যেভাবে কমাচ্ছি তাতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ উৎপাদন কমে গেলে রপ্তানিও কমে যাবে।”

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন,”আমরা রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০ ভাগ আশা করেছিলাম সেরকম হয়েছে। কিন্তু পোশাক খাত ছাড়া আর সব খাতেই কিন্তু নেগেটিভ। প্রবাসী আয় বাড়লেও সেটা কিন্তু কাঙ্খিত হারে বাড়ছে না। ফলে এখনই বলা যাচ্ছে না অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আরো দেখতে হবে।”

তার কথা,”রিজার্ভের ওপর চাপ থাকবে। কারণ আমাদের অনেক পেমেন্ট বাকি আছে সেগুলো শোধ করতে হবে। আমদানিও বাড়াতে হবে। ফলে ডলার ও রিজার্ভ নিয়ে এখনও স্বস্তি নেই।”

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button