জাতীয়সারাদেশস্বাস্থ্য

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে বিমানবন্দরসহ সব ধরনের বন্দরে করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর স্বাস্থ্যবিধির ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

তবে বাংলাদেশে এখনো নতুন ভ্যারিয়েন্টে কারুর আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।

চীনের করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘বিএফ ৭’-এ এখনো বাংলাদেশে কেউ আক্রান্ত না হলেও সতর্ক থাকতে বলেছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। তবে মঙ্গলবার চীন থেকে আসা চার জন চীনা নাগরিকের করোনা সনাক্ত হয়েছে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। তারা করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আসলেও বিমান বন্দরে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে তাদের করোনা সনাক্ত হয়। তাদের করোনার ধরন নির্ণয়ের কাজ চলছে। এখনো ধরন জানা যায়নি। চীনে করোনার এই নতুন ধরন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতেও নতুন ধরন সনাক্ত হয়েছে। তাই বাংলাদেশও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। জাতীয় পরামর্শক কমিটি এরইমধ্যে দেয়া সুপারিশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছে।

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১৯ জনই ঢাকা বিভাগের আর বাকি দুই জন সিলেট বিভাগের।

বাকি পাঁচ বিভাগ চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে কেউ আক্রান্ত হননি। এর আগের দিন মঙ্গলবার করোনায় কারুর মত্যু না হলেও আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী সনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.৭৯ শতাংশে। যা আগের ২৪ ঘন্টায় ছিলো ০.৪৯ শতাংশ। বাংলাদেশে করোনায় গত ২৫ ডিসেম্বর সর্বশেষ একজন মারা গেছেন । তার দুই সপ্তাহ আগে আরো একজন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে বাংলাদেশে করোনা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৩৯ জন। আর মোট সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭ জন।

দেশে করোনা প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই এক দিনে দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী সনাক্ত হয়। প্রথম রোগী সনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মারা যান । যা মহামারির মধ্যে একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা।

টিকা ও করোনা চিকিৎসা

এরইমধ্যে ষাটোর্ধ্বদের জন্য করোনার টিকার চতুর্থ ডোজ দেয়া শুরু হয়েছে। তবে টিকা থাকার পরও দেশের সব নাগরিককে এখনো করোনার টিকার আওতায় আনা যায়নি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ১২ কোটি ৬৭ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিক। প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৪ কোটি ৯৪ লাখ নাগরিক। আর তৃতীয় বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ছয় কোটি ৪৯ লাখ নাগরিক।

দেশে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময় রাজধানীতে পাঁচটি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালসহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে আলাদা ইউনিট ছিল। পরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় সেগুলোতে সাধারণ রোগীর সেবা চালু হয়। ফলে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত আইসিইউ, এইচডিইউ শয্যা, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বাক্সবন্দি করা হয়েছে। শুধু মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতাল রোগীদের সেবার জন্য কিছুটা প্রস্তুত হয়েছে। বাকিগুলোর অবস্থা করুণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফিল্ড হাসপাতালে এখন আর কোনো করোনা ইউনিট আর নেই। আগস্টে বঙ্গমাতা ফিল্ড হাসপাতালটি ভেঙে সেখানে তৈরি করা হয় অডিটোরিয়াম। চিকিৎসা উপকরণগুলো গ্যারেজে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। আর জেলা শহরে করোনার জন্য এখন আর আলাদা কোনো ইউনিট নাই।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ

জাতীয় পরার্শক কমিটি চার দফা সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলো হলো-

১.দ্বিতীয় বুস্টার ডোজের (চতুর্থ ডোজ) প্রচার বাড়ানো। । ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, প্রেগন্যান্ট নারী ও ষাটোর্ধ্বদের দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দ্রুততম সময়ে নিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

২. যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের অবশ্যই প্রটেকটিভ কেয়ার যেমন মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। ৩.বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সব বন্দরে করোনা পরীক্ষা জোরদার করা। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করে তাদের আইসোলেট করা বা তাদের নির্দেশনা দেয়া।

৪.যেসব দেশে করোনা বিস্তার হচ্ছে, সেসব সন্দেহভাজন দেশ থেকে যারা আসবেন, তাদের মধ্যে উপসর্গ থাকলে দ্রুত পরীক্ষার আওতায় আনা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট হচ্ছে ‘বিএফ ৭’, যা ‘বিএ ৫’ এর একটি উপ-ভ্যারিয়েন্ট। ভাইরাসটি একজন থেকে ১৮ জনের শরীরে সংক্রমিত করতে পারে। অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি চারগুণ বেশি সংক্রমিত করে।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, “নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি যে দ্রুত ছাড়ায় তা নিশ্চিত। তা না হলে চীনে মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে এত মানুষ কীভাবে আক্রান্ত হলো? তবে মত্যুর হারের দিক থেকে এই ভ্যারিয়েন্ট কতটা ভয়বহ তা এখনো নিশ্চিত নয়। এটা ওমিক্রনের একটা সাব ভ্যারিয়েন্ট। সেই দিক থেকে এটা দুর্বল এটা বলা যায়। কিন্তু আক্রান্ত করার হার অনেক বেশি।”

তার পরামর্শ হলো,” আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, বিশেষ করে মাস্ক পরতে হবে। অনেকেই মাস্ক পরা ছেড়ে দিয়েছেন। মাস্ক পরার অভ্যাসটি ফিরিয়ে আনতে হবে। হাত ধুতে হবে। সভা-সামাবেশ বন্ধ করতে পারলে ভালো হতো, তবে সেটা সম্ভব নয়। তবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে যেন ভিড় এড়িয়ে চলি। আর ভ্যাকসিন কার্যক্রমটি আরো জোরদার করতে হবে। কারণ যাদের ভ্যাকসিন দেয়া আছে তারা সংক্রমিত হলেও ক্ষতি অনেক কম হবে।”

তার কথা,”এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের একটা অংশের জিনোম সিকোয়েন্স করতে হবে। তাহলে আমরা বুঝতে পারব নতুন ধরনের করোনায় আক্রান্তের হার কেমন।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. আহমেদুল কবির বলেন,”আমাদের আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের দেশের অধিকাংশ নাগরিককেই করোনার ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। সেটা আমাদের জন্য একটি ভালো দিক। আর আমরা দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তত রেখেছি যেন কেউ আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া যায়।”

তিনি জানান, “প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে করোনা বিস্তার হচ্ছে এমন দেশ থেকে যারা আসবেন, তাদের মধ্যে উপসর্গ থাকলে দ্রুত পরীক্ষার আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় যারা পজেটিভ হবেন তাদের জিনোম সিকোয়েন্স করে করোনার ধরন নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

হাসপাতাল ও যেখানে ভিড় আছে সেখানে সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button