দেশের প্রথম মেট্রোরেলে প্রথম যাত্রা সম্পন্ন করলেন প্রধানমন্ত্রী
![gazipurkontho](https://www.gazipurkontho.com.bd/wp-content/uploads/2022/12/pm4-780x425.jpg)
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশের প্রথম মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রা সম্পন্ন হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও এসে পৌঁছালো মেট্রোরেল। বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী মেট্রোরেল যাত্রা শুরু করে। ২টা ১১মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে আসেন।
এর আগে টিকিট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন ও জাতির জনকের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। উত্তরা উত্তর স্টেশনে দুটি ট্রেন ছিল। এর মধ্যে প্রথম ট্রেনটি বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরেরটায় যাত্রী হন তিনি।
এর আগে আজ বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫মিনিটে বহুল প্রতীক্ষিত ও দেশের প্রথম মেট্রোরেলের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
মেট্রোরেলকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অহংকারের আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম। এটাই বড় কথা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন ঢাকা মহানগরবাসীর বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন। এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে আজ মহানগরবাসীর সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। মেট্রোরেলের উদ্বোধনের ফলে একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে চারটি মাইলফলক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমত, মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে প্রথম বৈদ্যুতিক যানের যুগে প্রবেশ করলো। তৃতীয়ত, মেট্রোরেল রিমোট কন্ট্রোল যান, যেটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি ধাপ। চতুর্থত, বাংলাদেশ দ্রুতগতি সম্পন্ন যানের যুগে প্রবেশ করলো। মেট্রোরেল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের উন্নয়ন যাত্রার সূচনা করেছিলেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বিশ্বব্যাংকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ইয়েস উই ক্যান’’। মেট্রোরেল করে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন, ‘‘ইয়েস ইউ ক্যান’’। কেন আমরা পারবো না? আমরা বীরের জাতি। বিশ্বব্যাংক অপবাদ দিতে পারে, তারা অপবাদ দিয়েছে। আমি বলতে চাই, আমরা বীরের জাতি, চোরের জাতি নই।’
মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বাংলায় শুভেচ্ছা জানান জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইচিগুচি তমুহিদে এবং বাংলাদেশে নবনিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবীব হাসান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিনুল্লাহ নুরী, ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, জাইকার বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইচিগুচি তমুহিদে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে ছিলেন–যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা শিক্ষক, ইমাম, অন্যান্য ধর্মযাজক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, দোকানি/বাদাম বিক্রেতা/সবজি বিক্রেতা, মেট্রোরেলের শ্রমিক, প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমকর্মী, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী, একজন দৃষ্টি/বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। সবমিলিয়ে দুই শতাধিক মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম মেট্রোরেল ভ্রমণ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানান, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার মানুষরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রীদের তালিকায় রয়েছেন।