গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ভোটের আগে অসুস্থতা নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যেই ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য’ সিঙ্গাপুরে গেলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
সোমবার রাত পৌনে ১১টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজে তিনি রওনা হন বলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপ প্রেসসচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানিয়েছেন।
এরশাদের সঙ্গে গেছেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এরশাদ দুটি আসনে প্রার্থী হলেও বর্তমান সংসদ সদস্য বাবলু নির্বাচনে নেই।
রাত সাড়ে ৯টায় বারিধারার পার্ক রোডের বাসা থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন এরশাদ। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন ক্ষমতা রাঙ্গাঁর হাতে দিলেও এরশাদ নিজের অবর্তমানে ‘চেয়ারম্যানের সার্বিক সাংগঠনিক দায়িত্ব’ পালনের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের হাতে।
একথা জানালেও এরশাদের অনুপস্থিতিতে হাওলাদারই জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব পেলেন কি না- সে প্রশ্নের উত্তর দেননি মহাসচিব রাঙ্গাঁ।
ভোটের ডামাডোলের মধ্যে ‘রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায়’ অসুস্থ হয়ে পড়া ৮৮ বছর বয়সী সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যাওয়া-আসা করছিলেন।
কিন্তু তার অসুস্থতার বিষয়ে জাতীয় পার্টি এবং তাদের জোটসঙ্গী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষ থেকে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছিল সাংবাদিকদের।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও তাতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদ নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পান।
এবারও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় ‘অসুস্থ’ এরশাদের সিএমএইচে ভর্তির খবর এলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।
নানামুখী গুঞ্জনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মাসের শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘রাজনৈতিক‘ নয়; তিনি ‘সত্যিই’ অসুস্থ। তাকে দুই-এক দিনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে।
কিন্তু জাতীয় পার্টির তখনকার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার তখন সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, এরশাদের অসুস্থতা ‘এমন কিছু নয়’। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।
এর মধ্যে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষে বেশ কয়েকজন নেতা ‘মোটা টাকায়’ মনোনয়ন বিক্রির অভিযোগ তোলেন এরশাদ ও হাওলাদারের বিরুদ্ধে। হাওলাদার সে সময় তা অস্বীকার করেন।
ঋণ খেলাপের অভিযোগে পটুয়াখালী-১ আসনে হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেলে অনেকটা আকস্মিকভাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে পরিবর্তনের ঘোষণা আসে। এরশাদের ‘সন্তানতুল্য’ হাওলাদারকে সরিয়ে মহাসচিব করা হয় পার্টিতে ‘সরকারঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গাঁকে।
গত সপ্তাহে দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নতুন মহাসচিব রাঙ্গাঁ বলেন, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা নিয়ে এরশাদ ‘ভয়ে থাকেন’। এ কারণে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়।
“ঘুমের ডিস্টার্ব হলেও তিনি সিএমএইচে যান। বাসায় একা থাকেন বলে তার একলা লাগে, ভয় করে। তাছাড়া ইনফেকশনের ভয়ও আছে।”
নতুন মহাসচিব দাবি করেন, এরশাদ এখন ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট ফিট’ থাকলেও চিকিৎসার জন্য তার দেশের বাইরে যাওয়া জরুরি। কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব শেষ না করে তিনি দেশের বাইরে যেতে চান না। মহাজোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হলে ১০ ডিসেম্বরের পর হয়ত এরশাদ বিদেশে যেতে পারেন।
এরই মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর অল্প সময়ের জন্য বনানীতে নিজের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে এরশাদ নেতাকর্মীদের বলেন, তার চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হচ্ছে, তাকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
কিন্তু এরশাদের ভাই ও দলের কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ৮৮ বছর বয়সে ‘যতটা’ সুস্থ থাকার কথা, ‘ততটা’ সুস্থ এরশাদ আছেন। তার চিকিৎসা নিয়ে ‘ধূম্রজালের’ কোনো সুযোগ নেই।
“ডাক্তাররা যদি বলেন, এখানে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে, তাহলে কেন তাকে নিয়ে যাব? তবে তারা যদি মনে করেন, এখানকার চিকিৎসা যথেষ্ট নয়, উনাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে হবে; তখন নিয়ে যাওয়া হবে। এটা নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠিত নই।”
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে ২৯টি আসন পাওয়ায় ‘অসন্তুষ্ট’ জাতীয় পার্টি মহাজোটের বাইরে প্রায় দেড়শ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থী দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে।
তারা বলছেন, এত আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের জোট শরিক দলের প্রার্থীদের ভোটে ভাগ বসালে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে।