খেলাধুলা

মেসি যাদুতে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

গাজীপুর কণ্ঠ, খেলাধুলা ডেস্ক : দুইবারের বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা যখনই সেমি ফাইনালে উঠে, কখনোই হারেনি। সেই ধারার ব্যত্যয় ঘটেনি কাতার বিশ্বকাপেও। ফুটবল বিশ্বের খুদে যাদুকর মেসির হাতে শিরোপা উঠতে সেমির বাঁধা অতিক্রমের পথে আর্জেন্টিনা ক্রয়েশিয়াকে কোমার সোজা করে দাঁড়াতেই দেয়নি। মেসির যাদুতে ক্রোয়েশিয়াকে ধরাশায়ী করেছে ৩-০ গোলে। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলের হার ফিরিয়ে দিয়ে উঠে গেছে শিরোপা জয়ের শেষ ধাপে ফাইনালে।

২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর আবার তারা উঠল ফাইনালে। সব মিলিয়ে এটি তাদের ষষ্ঠবার ফাইনাল উঠা। ১৯৩০ সালে প্রথম আসরের পর ১৯৭৮, ১৯৮৬, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে খেলেছিল ফাইনাল। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে তারা হয়েছিল চ‌্যাম্পিয়ন।

১৮ ডিসেম্বর শিরোপা তৃতীয়বার জেতার মিশনে মেসি বাহিনী নামবে ফ্রান্স ও মরক্কোর দ্বিতীয় সেমিতে বিজয়ীর সঙ্গে।

দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামের রাতের আকাশ ধারন করেছে আকাশি রঙে। আর্জেন্টাইন দর্শকদের গগনবিদারী আওয়াজে মুখরিত।

সেমিতে আর্জেন্টিনা কখনই হারেনি। এই ধারনা সত‌্য প্রমাণ করতে মেসি নিজেই করেছেন প্রথম গোল। গোলটি ছিল পেনাল্টি থেকে। পরেরটি আসে আলভারেজের পা থেকে। দুইটি গোলের মাঝে সময়ের ব‌্যবধান ছিল মাত্র পাঁচ মিনিট। তৃতীয় গোলটি আসে দ্বিতীয়ার্ধে খেলার ৬৯ মিনিটে।

প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও প্রথম ২০ মিনিট কিন্তু তাদের খোঁজেই পাওয়া যায়নি। বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের পায়েই বেশি। যদিও এ সময় তারা কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। আর্জেন্টিনাও পারেনি কোনও সুযোগ সৃষ্টি করতে।

আর্জেন্টিনা ৪-৪-২ এবং ক্রোয়েশিয়া ৪-৩-৩ পদ্ধতিতে খেলা শুরু করে। প্রথম ১০ মিনিট কোন দলই গোছালো কোনও আক্রমণ গড়ে তুলতে পারেনি। নিজেদের মাঝে আল-প্রদানেই সীমাবদ্ধ ছিল এই সময়। কোনও কর্ণার হয়নি। কোনও অফসাইড হয়নি। গোল পোষ্ট করে কোনও শটও নিতে পারেনিকোনও দল। বল পজিশনে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে ছিল। তাদের দখলে ছিল শতকার ৫৫ শতাংশ। আর্জেন্টিনার দখলে ছিল ৪৫ শতাংশ। ক্রোয়েশিয়া পাসদিয়েছে ৫৫ টি। আর্জেন্টিনা ৪০টি।

২০ মিনিট পর আর্জেন্টিনা ধীরে ধীরে যে খেলায় ফির আসছিল তার পুরো ফায়দা তুলে নেয় ৩১ থেকে ৪০ মিনিটে। এ সময় তারা দু্ইটি গোলও আদায় করে নেয়। ৩২ মিনিটে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। মাঝ মাঠ থেকে উড়ে আসা বল ফাঁকায় পেয়ে যান আলভারেজ। বিপদ বুঝে পোষ্ট ছেড়ে বের হয়ে আসনে গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। কিন্তু আলভারেজ ঠিকই গোলরক্ষকে ফাঁকি দিয়ে বল জালের দিকে ঠেলে দেন। কিন্তু লিভাকোভিচ মারাত্বকভাবে ফাউল করেন আলভারেজকে। রেফারি দেন পেনাল্টি নির্দেশ। এদিক আলভারেজের ঠেলে দেয়া বল জালে প্রবেশের আগে রক্ষণের একজন খেলোয়াড় এসে বিপদমুক্তও করেন। পরে ৩৪ পেনাল্টি থেকে মেসি নিশানাভেদ করেন। তিনি যখন পেনাল্টি শট নিচ্ছিলেন, তখন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ইমি মার্টিনেজ টেনশনে মুখ ঘুরিয়ে নিজেদের পোষ্টের দিকে থাকিয়ে থাকেন। এবারের আসরে মেসির এটি ছিল পঞ্চম গোল। আর এই গোল করে তিনি স্বদেশি বাতিস্তুতার করা ১০ গোল ছাড়িয়ে গেলেন। আবার এই ম‌্যাচ খেলতে নেমেই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৫ ম‌্যাচ খেলা জামার্নির ম‌্যাথিউজের সমান হলেন। ফাইনাল খেলতে নামলেই তিনি ছাড়িয়ে যাবেন তাকে। হবেন একক মালিক। এদিকে এই ম‌্যাচ খেলতে নেমে তিনি অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ১৯টি ম‌্যাচ খেলার নতুনও রের্কডও গড়েছেন। আগের রেকর্ড ছিল মেক্সিকোর রাফা মার্কোজের।

এই গোলের রেশ কাটতেনা কাটতেই আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় আলভারেজের মাধ‌্যমে। ৩৯ মিনিটে নিজেদের সীমান থেকে গড়ে উঠে আক্রমণ। সেই আক্রমণ থেকে আলভারেজ মধ‌্য মাঠ থেকে বলের নিয়ন্ত্রণ নেন। তারপর ঢুকতে থাকেন এককভাবে। এ সময় দলের দুই জন খেলোয়াড় দুই দিক দিয়ে জায়গা করে নেন। আর আলভারেজকে আটকানোর জন‌্য ক্রোয়েশিয়ার দুই জন খেলোয়াড় ছুটতে থাকেন। কিন্তু তাকে আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। এই দুই জনকে পরাস্ত করে পরে গোলরক্ষকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন। ৪১ মনিটে আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোল না হওয়া ছিল দুভার্গ‌্য জনক। মেসির কর্ণার থেকে নিকোলাস টাগলিয়াফিকোর হেড গোলে প্রবেশের মুহুর্তে গোলরক্ষক লিভাকোভিচ বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন।

খেলায় ফিরে আসার জন‌্য দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ক্রোয়েশিয়া দুই জন খেলোয়াড়কে পরিবর্তন করে খেলতে নামে। সসার পরিবর্তে ওরসিক এবং পাসারিকের পরিবর্তে ভ্লাসিককে নামানো হয়। শুরুতেই তারা একটি ফ্রি কিক আদায় করে ফিরে আসার ইংগিতই দিয়েছিল। এ সময় তারা বেশ চাপও সৃষ্টি করে। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা নিজেদের সীমানায় ঘুরপাক খেতে থাকেন। কিন্তু এই শেষ।

ক্রোয়েশিয়ার চাপ সামলে আর্জেন্টিনা আক্রমণে গিয়েই সুযোগ সৃষ্টি করে নিয়েছিল। ৫৭ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে মেসির বাম পায়ের শট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ ফিরিয়ে দেন। ৬৪ মিনিটে লভারনের বিপজ্জনক ফ্রি কিক আর্জেন্টিনার ওটামান্ডি ও গোলরক্ষক ইমিমার্টিনেজ বিপদ হতে দেননি। ৭০ মিনিটে আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোল ছিল মেসির নান্দনিকতায় ভরপুর। গোল করেছেন আলভারেজ। কিন্তু সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ছিল মেসির। যেন তিনি আলভারেজকে মুখে তুলে খাবার খাওয়ানোর মতো গোলের উৎস তৈরি করে দেন। মাঝমাঠের কাছাকাছি থেকে বল ধরে পায়ে চুম্বকের মতো যেন আটকে ফেলেন। কিছুতেই তার পা থেকে বল কেড়ে নেয়া সম্ভব হয়নি ক্রোয়েটদের। সেই বল নিয়ে মেসি নিজের পায়ের ক‌্যারিশমা দেখিয়ে গোল লাইন বারাবর থেকে বল বাড়িয়ে দেন একেবারে গোলপোষ্ট বরাবর ফাঁকায় থাকা প্রথম গোল করা আলভারেজকে। তিনি শুধু নিজের ডান পাকে ঘুরিয়ে বলের সঙ্গে সংযোগ ঘুটিয়ে দেন। এরপর আর্জেন্টিনার ফাইনালে উঠা নিয়ে আর কোনও শঙ্কা থাকেনি। খেলার বাকি সময় হয়ে উঠে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button