আলোচিতজাতীয়রাজনীতি

পাল্টাপাল্টি অবস্থানে অনড় আওয়ামী লীগ-বিএনপি, অন্ধরমহলে চলছে অন্য খেলা!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ১০ ডিসেম্বর নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যখন পাল্টাপাল্টি অবস্থানে অনড়, তখন রাজনীতির অন্ধরমহলে চলছে অন্য খেলা। সেই খেলা অপরাজনীতি আর উগ্রপন্থীদের কূটকৌশলের খেলা। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশের কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। সেই খেলায় হেফাজত ছিল সামনের সারির খেলোয়াড়। আর নেপথ্যে ছিল বিএনপি এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।

অভিযোগ আছে, শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ এবং পশ্চিমা শক্তির একটি অংশ বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে। সেই অর্থ আইএসআই-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসে। বিপুল অর্থ বিলিয়ে সরকারবিরোধী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করা হয়। এদের নেতৃত্ব দেন উগ্রপন্থী ভাবধারার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। এদের নেতৃত্বে এবং হেফাজতের উদ্যোগে শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেই একই পথ ধরে সরকারবিরোধী একটি বড় অংশ নেপথ্যে কাজ করছে।

এবারও শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা শক্তির একটি অংশ বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করেছে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনের পরেই ঢাকায় তারা লাখ লাখ মানুষ জড়ো করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলা থেকে লোক জড়ো করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকায়। ঢাকার হোটেলগুলোতে পুলিশ হানা দিতে পারে- এই আশঙ্কায় অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাসায় উঠছেন।

দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে কর্মরত বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, আগামী ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে কুচক্রীরা এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় যা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। এক্ষেত্রে তারা নেপালের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায়। ২০০৮ সালে নেপালের রাজনৈতিক দলগুলো রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে আন্দোলনের মাধ্যমে উৎখাত করে। সব রাজনৈতিক দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী কাঠমান্ডুর আশপাশে অবস্থান নেয়। একটি নির্দিষ্ট দিনে তারা কাঠমান্ডুর রাজপথে দাঁড়িয়ে যায়। এতে রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। টানা আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন রাজা জ্ঞানেন্দ্র। ঠিক এমন একটি কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে একটি কুচক্রীমহল। তারা ঢাকাকে অচল করতে লাখ লাখ মানুষকে রাজপথে জড়ো করার কৌশল নিয়েছে।

একটি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একমঞ্চে আনতে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি বিদেশি দূতাবাস। তারা বিভিন্ন সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের নামে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। উৎসাহ জোগাচ্ছেন। অর্থ বিনিয়োগ করছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য সরকারের হাতে এসেছে। বিরোধীদের অপকৌশল জানতে পেরে সরকার কঠোর মনোভাব নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার বিএনপি মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতা ও শতাধিক কর্মীকে আটক করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আরও বেশ কিছু নেতা-কর্মী আটক হতে পারেন বলে জানা গেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাধ্যমেই আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। তবে অনেকেই মনে করেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা কঠিন হবে। এটা আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে। সেজন্যই তারা আওয়ামী মনোভাবাপন্ন লোকদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। তারা চায়, আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হোক। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। সরকারের পক্ষ থেকেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশে আর কোনোদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না। তাহলে কি বিএনপিকে ছাড়াই আগামী নির্বাচন হবে? এটা কি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী মেনে নেবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। তারা এ বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তারা বারবার একই কথা বলছেন যে, বিএনপিকে যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক। সেজন্য যদি সরকারকে কিছু ছাড় দিতে হয় তাহলেও তা করতে বলছেন কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের প্রতিনিধিরা। তারা একরকম অবস্থান নিয়ে আছেন। তবে তারা চীন এবং ভারত কী অবস্থান নেয় সেটা দেখার জন্যও অপেক্ষা করছেন। বিএনপিকে নির্বাচনে রাখার ব্যাপারে ভারত ও চীন যদি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে তাহলে সরকারের উপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে। সরকার তখন বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হবে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনে আনার জন্য বিএনপিকে বড় কোনো ছাড় তারা দেবে না। ক্ষমতাসীন দল মনে করছে, আন্তর্জাতিক শক্তি নিশ্চয় এই দেশে উগ্রপন্থী-জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে উৎসাহিত করবে না। সঙ্গত কারণেই আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। শেখ হাসিনা সরকার শক্ত হাতে জঙ্গিদের দমন করেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে ভারত সরকারকে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। তা ছাড়া দেশে তেমন কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন দেখা যায়নি। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকার এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের অনড় অবস্থান কতদিন ধরে রাখতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সরকারের ভেতরের একটি অংশ সরকারকে ফাঁদে ফেলতে বিরোধী শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছে এবং নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। এখনই সতর্ক না হলে সরকার যে কোনো মুহূর্তে বিপদে পড়তে পারে।

নিশ্চয় সরকার এ ব্যাপারে সজাগ থাকবে এবং রাজনীতিকে সঠিক নেতৃত্ব ও রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করবে।

 

সূত্র: ঢাকা প্রকাশ

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button