বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

হ্যাকারের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়

গাজীপুর কণ্ঠ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : আধুনিক বিশ্বে ইন্টারনেটের ব্যবহার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ চলমান। ইন্টারনেটের পরিধি বাড়ার পাশাপাশি এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক ব্যবহারও বাড়ছে। অসৎ উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যের তথ্য ও সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়া অপরাধ। প্রযুক্তিজগতের ভাষায় একে হ্যাকিং বলা হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও অনেকে এখনো নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন নয়। তাই হ্যাকারদের জন্য ব্যবহারকারীর দুর্বল দিক খুঁজে বের করা সহজ হয়। নিজ জায়গা থেকে ব্যবহারকারী যদি সতর্ক থাকে তাহলে হ্যাকারদের আক্রমণের হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্লাউড স্টোরেজ বা হার্ডওয়্যারে তথ্য সংরক্ষণও এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা হ্যাকাররা নতুন পদ্ধতিতে তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাই বেশকিছু বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। টেকটাইমস থেকে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার আপডেট রাখা

সাইবার আক্রমণের ক্ষেত্রে ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম হ্যাকারদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু থাকে। পুরনো অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বল জায়গাগুলো সহজেই শনাক্ত করা যায়। প্রতিষ্ঠান থেকে যখন যে আপডেট দেয়া হবে তখনই সেগুলো ইনস্টল করে নেয়া ভালো। এক্ষেত্রে সফটওয়্যারের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। পুরনো ভার্সনের সফটওয়্যারে বিভিন্ন ত্রুটি বা বাগ থাকে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অজান্তে ডিভাইসে প্রবেশ করা যায়।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার

নিরাপত্তার জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সে পাসওয়ার্ড যদি দুর্বল হয় তাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ। অধিকাংশ ব্যবহারকারী শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের বিষয়ে একেবারেই উদাসীন। অনেকে মনে রাখার জন্য সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে, হ্যাকারের জন্য যা শনাক্ত করা খুবই সহজ। তাই যেকোনো সাইট, অ্যাপ বা সার্ভারে পাসওয়ার্ড দেয়ার সময় কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে হবে। প্রথমত, পাসওয়ার্ড ৮ থেকে ১৬ সংখ্যার মধ্যে হতে হবে। এতে বর্ণ, সংখ্যা, বিশেষ চিহ্ন, বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, প্রতীক থাকবে। ডিকশনারিতে পাওয়া যাবে বা আপনার নামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন কিছু ব্যবহার না করাই ভালো।

কোনো লিংকে ক্লিক না করা

কোনো লিংক দেখার পর এতে কী আছে এমন জিজ্ঞাসা সবার মনেই আসে। তবে এ ক্লিক করার অভ্যাস বিপদ ডেকে আনতে পারে। আগে ফেসবুক, মেসেঞ্জারে লিংক ছড়ানো হতো। বর্তমানে ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লিংক ছড়াচ্ছে হ্যাকাররা। এসব লিংকে টাকা বা পুরস্কার জেতার সুযোগের কথাও বলা হচ্ছে। লিংকে প্রবেশ করলে অনেক সময় অ্যাকাউন্ট খুলতেও বলা হয়। আর অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতিতে গেলেই সব তথ্য চলে যায় হ্যাকারদের হাতে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ঠিকানা নকল করেও লিংক পাঠানো হয়। তাই ক্লিক করার আগে সাইটে প্রবেশ করে বা অন্য মাধ্যমে যোগাযোগ করে জেনে নেয়া ভালো।

অপরিচিত ই-মেইল থেকে আসা ফাইল চালু না করা

অপরিচিত কারো কাছ থেকে আসা মেইলে কোনো ফাইল যুক্ত করা থাকলে সে ফাইল সহসাই খোলা যাবে না। এসব ফাইলে ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দেয়া থাকে। একবার ভুক্তভোগীর ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারলে তা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। এতে ব্যক্তিগত তথ্য, নথি, ছবি চুরি হওয়া থেকে শুরু করে, হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ মুছে যাওয়া এমনকি র্যানসমওয়্যার ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ফাইল এনক্রিপ্টেডও করে দিতে পারে।

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার

হ্যাকারদের আক্রমণ প্রতিহতের পাশাপাশি ডিভাইসে ক্ষতিকর কোনো ফাইল বা সফটওয়্যারের প্রবেশাধিকার রোধে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। শুধু ব্যবহার করলেই হবে না। প্রতিনিয়ত সেটি আপডেট রাখতে হবে। পাশাপাশি শক্তিশালী ফায়ারওয়াল ও অন্যান্য নিরাপত্তা টুলও কার্যকর রাখতে হবে। অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারের জন্য ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। অপারেটিং সিস্টেম প্রোভাইডারের কোনো অ্যাকাউন্ট থাকলে সেখানে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করতে হবে।

নিরাপদ ওয়েবসাইট ব্যবহার

সতর্কতার সঙ্গে ওয়েব ব্রাউজ করার পরেও হ্যাকাররা ওয়েবসাইট থেকে যে কারো ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এ ধরনের হামলা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য নিরাপদ ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হবে। ওয়েবসাইট নিরাপদ কিনা সেটি যাচাইয়ের জন্য অ্যাড্রেসের প্রথম অংশ দেখলেই ধারণা পাওয়া যাবে। যেসব ওয়েব অ্যাড্রেসের শুরুতে এইচটিটিপিএস রয়েছে সেগুলো নিরাপদ। এইচটিটিপিএস না থাকা কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেও সেখানে কোনো তথ্য যুক্ত করা যাবে না।

অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া যাবে না

ব্যক্তিগত তথ্যই হ্যাকারদের মূল আকর্ষণের বিষয়। সেগুলো জব্দ করে বা বিক্রির মাধ্যমে অর্থ আদায় করা যায়। আর তাই দরকার বা প্রয়োজন ছাড়া অনলাইনে ব্যক্তিগত কোনো তথ্য প্রকাশ না করাই ভালো। এছাড়া প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য স্বতন্ত্র শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। পাসওয়ার্ডে বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, নম্বর, প্রতীক ব্যবহার করতে হবে।

তথ্য সংরক্ষণ করা বা ব্যাকআপ রাখা

হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে হলে তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। যারা ল্যাপটপ ব্যবহার করে তাদের প্রতিনিয়ত তথ্য ব্যাকআপ রাখার পাশাপাশি এনক্রিপ্ট করে রাখা জরুরি। এনক্রিপশনের বিভিন্ন সফটওয়্যার বর্তমানে প্রচলিত রয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে সফটওয়্যার নির্বাচন করতে হবে। তথ্য ব্যাকআপের জন্য কোনো ড্রাইভ না থাকলে আলাদা কিনে নিতে হবে।

ব্যক্তিগত ডিভাইস অন্যের হাতে না দেয়া

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যে কেউ দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে বা ক্ষতি করতে পারে। তাই প্রয়োজন ছাড়া কারো কাছে ব্যক্তিগত সেলফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার দেয়া যাবে না। কেউ ব্যবহার করতে চাইলে গেস্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button