আইন-আদালতগাজীপুরজেলা পুলিশ

যুবলীগ নেতাকে বাঁচাতে পুলিশের দেওয়া চার্জশিট গ্রহণ করেনি আদালত: পূর্ণতদন্তের নির্দেশ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে যুবলীগের এক নেতাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে কালীগঞ্জের পিয়াস নন্দী হত্যা মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আমলে না নিয়ে মামলা পূর্ণতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

বুধবার (০৮ মে) গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন শুনানি শেষে এ নির্দেশ দিয়েছেন।

দুই আসামির নাম বাদদিয়ে অত্যন্ত গোপনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করার অভিযোগ উঠার পর এবার ওই মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনফেস্টিগেশনকে (পিবিআই)পূর্ণতদন্তের নির্দেশ দিল আদালত।

এর আগে ‘দুই আসামির দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে’ উঠে আসা ‘হত্যাকারী যুবলীগ নেতাসহ দুইজনের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। পরে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ নারাজি’র আবেদন করলে আদালত তা আমলে নিয়ে শুনানী শেষে এ নির্দেশ দিয়েছেন।

এ তথ্য জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী গাজীপুর বার কাউন্সিলে সদস্য মো: অ্যাডভোকেট শফিউল ইসলাম ভূঁইয়া।

১৯৯৮ সালের ২২ মার্চ ব্রিটিশ শাসিত পাক-ভারত-উপমহাদেশের জন্য ‘ফৌজদারি কার্যবিধি-১৯৯৮’ নামে একটি আইন পাস হয় যা ওই বছর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। উক্ত আইনের ১৬১ ধারায় সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয় যা জুডিশিয়াল রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হয় না। কিন্তু উক্ত আইনের ১৬৪ ধারা বলে কোনো জবানবন্দি বা স্বীকারোক্তি যদি ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক গৃহীত হয় তবে এটা জুডিশিয়াল রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বিধায় বিচারামলে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ফৌজদারি মামলার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ধারার অধীনে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর নিজের অপরাধের লিখিত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে থাকেন।

আর এই আইনের ব্যতয় ঘটিয়েই গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুই আসামীর অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে আদালতের জিআর শাখায় অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলার নিয়মিত ধার্য তারিখ গত ১৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) গাজীপুর জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ ওই অভিযোগপত্র দাখিল করেন গাজীপুর আদালতের পরিদর্শক রবিউল ইসলাম। পরে বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানীর জন্য নির্ধারিত তারিখ ধার্য করেন ০৮ মে (বুধবার)। শুনানী শেষে ওই মামলা পূর্ণতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে আসামীদের বাঁচাতে অভিযোগপত্রে দায়সারা কারণ উল্লেখসহ রাখা হয়ে ছিল নানা ফাঁকফোকর। এর ফলে মামলার বিচার শুরু হলে আসামীরা পার পেয়ে যেতে পারেন- এমন আশঙ্কা ছিল নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় অনেকের।

বিতর্কিত অভিযোগপত্র প্রত্যাখান করে আবেদনের প্রেক্ষিতে দেওয়া পুন:তদন্তের এই আদেশ পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে পিয়াস নন্দীকে খোঁজে না পেয়ে পরদিন ৫ আগস্ট তার ভাই পাভেল নন্দী বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। নিখোঁজের ঘটনা তদন্তের জন্য কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুলতান উদ্দিন খান জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই জনকে আটক করে। পরবর্তীতে ওই দিনই বিকেলে চকজামালপুরের শ্মশানঘাট সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের একটি জঙ্গল থেকে পিয়াস নন্দীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

অপর দিকে পুলিশ হেফাজতে আটক থাকা খলাপাড়া গ্রামের আবদুল বাতেনের ছেলে ওমর ফারুক বাক্কার(২০) এবং চক জামালপুর এলাকার বিজয় চন্দ্র দাসের ছেলে অপু দাসের (১৬) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে পাভেল নন্দী বাদী হয়ে একই দিন রাতে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পরদিন ৬ আগস্ট থানায় আটক থাকা ওমর ফারুক বাক্কার এবং অপু দাসকে ওই মামলায় আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।

ওইদিনই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পৃথকভাবে তারা দু’জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলী আদালতের বিচারক মো: ইলিয়াস রহমান আসামিদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

দুই আসামির দেওয়া ’১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেই উঠে আসে যুবলীগ নেতাসহ দু’জনের নাম’। এর মধ্যে রয়েছে খলাপাড়া (বারইপাড়া)এলাকার লক্ষী নারায়ন চৌধুরীর ছেলে উদয় শংকর চৌধুরী শাওন এবং নির্মল পালের (ডাক্তার) ছেলে সুব্রত পাল। সে বাহাদুর শাদী ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

মামলার নথি পর্যালোচনায় করে জানা যায়, সাক্ষী হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীসহ ২০ জনের নাম রয়েছে। কিন্তু সাক্ষীদের জবানবন্দির বিষয়ে কোনো গুরুত্বই দেননি তদন্ত কর্মকর্তা। এমনকি সাক্ষীরা নিজেরাই জানেন না তাদের মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে।

২০ জন সাক্ষীর মধ্যে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক মো: ইলিয়াস রহমান, দু’জন ডাক্তার, কালীগঞ্জ থানার ওসি, মামালার আই/ও, একজন পুলিশ কনস্টেবল, একজন বিশেষ আনসার, এবং মামলার বাদীসহ রয়েছেন বাকী পনের জন।

খোঁজ নিলে মামলার বাদীসহ সাক্ষী হিসেবে দেখানো পনের জন জানান, তাদের কাউকেই মামলায় সাক্ষী করেছে কিনা তা তারা জানেন না। পুলিশ তাদের না জানিয়ে হয়তো সাক্ষী করেছে। দু’একজন বলেছে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় পুলিশ কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে তবে কি কারণে তা জানা নেই।

এছাড়া আরো জানা গেছে, ‘১৬৪ ধারার আসামির জবানবন্দিতে’ উঠে আসা ‘হত্যাকারী সুব্রত কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুর শাদী ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। পুলিশ আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র উল্লেখ করেছে তার পিতা এবং ঠিকানা অজ্ঞাত। ওই এলাকায় সুব্রত নামে একাধিক লোক রয়েছে। যাদের বিষয়ে যাচাই করে ঘটনার সাথে কোন সংশ্লিষ্টাতার কোন তথ্য উদঘাটন করা যায় নাই।

তবে ওমর ফারুক বাক্কার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে, কালীগঞ্জের জামালপুরের বারইপাড়া গ্রামের শাওনের বাড়ির সাথেই সুব্রতের বাড়ি এবং সুব্রতর ভাতিজি বৃষ্টির সঙ্গে পিয়াসের সম্পর্ক ছিল। ‘কিন্তু শাওনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেলেও সুব্রতের বাড়ি খুঁজে পায় নি বলে উল্লেখ করেছে’?

বাহাদুর শাদী ইউনিয়নে ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মতিউর রহমান বলেন, বারইপাড়া এলাকার উদয় শংকর চৌধুরী শাওনের বাড়ির পাশে একজনই সুব্রত আছে তার পিতার নাম নির্মল পাল (ডাক্তার)। সে বাহাদুর শাদী ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়াও সুব্রত নামে কারো বিষয়ে খোঁজ করার জন্য পুলিশ কখনো তাকে কিছুই বলেনি বলেও জানান তিনি।

বারইপাড়া এলাকার উদয় শংকর চৌধুরী শাওনের বাবা লক্ষী নারায়ন চৌধুরী বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে একজনই সুব্রত আছে তার বাবার নাম নির্মল পাল (ডাক্তার) সে এলাকায় থাকে না। সুব্রত পাল বাহাদুর শাদী ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আর বৃষ্টির বাবার নাম নারায়ন দেবনাথ (নাড়ু) তাদের বাড়িও সুব্রতর বাড়ির পাশাপাশি।

অপরদিকে ‘১৬৪ ধারার দেওয়া দুই আসামির জবানবন্দিতেই’ উঠে আসা ‘হত্যাকারী উদয় শংকর চৌধুরী শাওনের বিষয়ে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তার কর্মস্থল অফিসের হাজিরা রেকর্ড ও কর্মস্থলে হাজির থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে মর্মে মামলার দায় হতে তার অব্যহতি চেয়েছে পুলিশ।

সেই প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অফিসে হাজিরা রেকর্ড করার পরও বিভিন্ন সময় অনেকে অল্প সময়ের জন্য যদি কেউ বাহিরে যায় তখন তা এন্টি করা থাকে না। ‘কিন্তু সিসি টিভির ফুটেজ দেখলেই ওই বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যেত। হয়তো ঘটনার সেই সময়ের ভিডিও সিসি টিভিতে ধারণ করা থাকতে পারে’। প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (পি.আই.পি) ফ্যাক্টরীতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই এসব কথা বলেছেন।

রহস্যজনক কারণে পুলিশ ঘটনার সময়ের সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজের বিষয়ে কোন কিছুই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেনি।

মামলার নথি আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

এসব বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুলতান উদ্দিন খান বলেছিলেন, আসামীদের বিষয়ে বাদীর সঙ্গে কথা বলেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তার পরও যদি বাদী তদন্তে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট আদালতে নারাজী দরখাস্তের মাধ্যমে মামলা পুণরায় তদন্তের আবেদন করতে পারবে।

 

এ সংক্রান্ত আরো জানতে….

‘হত্যাকারী যুবলীগ নেতা’ সুব্রতকে বাঁচাতে মরিয়া পুলিশ?

এমপি-পুত্র হত্যায় জালিয়াতির অভিযোগ কালীগঞ্জের ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে!

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Jak zabránit zamracení oken v autě: Mechanik představil zázračný životopis Jak dusit Top 5 druhů čajů pro léčbu bolesti v krku a Jak zjistit, zda Jaký je smysl úklidu: Neměl by ho jíst každý: Tajemství hlavního nebezpečí mořských řas, Křupavý citronový koláč Mary Berry s Kdo se modlit pro uzdravení: nejneúčinnější modlitby za zdraví Kde najít generálovo sádlo: