কোনো ভোট সাহায্য করে না পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিদের!
গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৮০ সালে পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করে ইসরায়েল। অঞ্চলটিতে যে ফিলিস্তিনিরা বসবাস করেন, তাদের নীল রঙের আইডি কার্ড দিয়েছিল তৎকালীন ইহুদি সরকার।
কার্ডের মহত্ব হলো পৌরসভা নির্বাচনে ফিলিস্তিনিদের ভোট আদায়। কিন্তু তাতে কি তাদের কোনো উপকার হয়?
১৯৬৭ সালে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও অবরুদ্ধ গাজা স্ট্রিপের সঙ্গে ইহুদিদের দখলে চলে গিয়েছিল জেরুজালেম। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে অঞ্চলটিতে এখনও টিকে আছে কিছু ফিলিস্তিনি, যাদের চলতে হয় ইসরায়েলের নিয়ম নীতিতে। এ নীতির মধ্যে একটি ভোট প্রদান।
গত তিন বছরের পঞ্চমবারের মতো ভোটগ্রহণ চলছে ইসরায়েলে। লড়াই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিদ ও সাবেক নেতা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে। এ ভোট নিয়ে আল জাজিরার এক সাংবাদিক কথা বলেন জেরুজালেমে বসবাসরত কয়েকজন ফিলিস্তিনির সঙ্গে।
পূর্ব জেরুজালেমের ইসাওয়াইয়া এলাকার এক যুবককে ভোটের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন, আমি যা চিন্তা করি তা হলো আমার পরিবারকে খাওয়ানো। আমি ভোট দিলে আমার জন্য কি কিছু পরিবর্তন হবে?
একই প্রশ্ন একজন সুপারমার্কেটের কর্মচারীর। ইসরায়েলে যে ভোট হচ্ছে, তাতে ফিলিস্তিনিদের কোনো উপকার হবে না। নীল রঙের আইডি কার্ড থাকলেও ভোট তাদের জন্য সুফল বয়ে আনে না বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমার বয়স ৪০। ইহুদিদের সঙ্গে বসবাস করতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার তিন সন্তান, আমি তাদের বাইরে খেলতে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু আশ পাশে তাদের নিয়ে যাওয়ার মতো জায়গা নেই। এগুলো ছোট সমস্যা। আমাদের আরও বড় সমস্যা আছে। আমার দুই মাস বয়সী মেয়ে আছে। আইডি কার্ড থাকলেও আমরা জাতীয় বীমা পাই না। আমার স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন অনুদান নেই। নেই শিশু ভাতাও।
নাম প্রকাশ না করা এ যুবক ফিলিস্তিনি জেরুজালেমাইটদের ইসরায়েলি বাহিনীর সম্মিলিত শাস্তির ব্যাপারেও নিন্দা করেন। তিনি বলেন, যখন কারও ছোট সন্তান পাথর ছুঁড়ে, তখন তাদের পুরো গ্রামকে শাস্তি দেওয়ার দরকার নেই। ইসরায়েলি বাহিনী টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে; নোংরা পানি স্প্রে করে। ছোট বাচ্চারা সেই গ্যাসের কারণে শ্বাস নিতে পারে না, তারা অসুস্থ বা মারা যেতে পারে। আর আমাদের শিশুরা সেই পানি থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ দুজনের কথায় বোঝা যায় ইসরায়েলের কোনো ভোটই তাদের সাহায্য করে না। কিন্তু এ অবস্থা কি পুরো জেরুজালেমেই?
পূর্ব দিকের ফিলিস্তিনি জেরুজালেমাইটদের ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তবে পশ্চিম জেরুজালেমের কাটমোনিম পাড়ার বাসিন্দা ৪৮ বছর বয়সী উরিয়েল আবুলফ হেসে। তাকে বলা হচ্ছে ডানপন্থী জেরুজালেম এলাকায় একমাত্র বামপন্থী ভোটার। কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে এসেছেন তিনি। বাড়ি ফিরে তিনি তার বাবাকে বলেছেন, আমার মনে হয় আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে এখানে ভোট দিচ্ছে।
আল জাজিরাকে আবুলফ হেসে জানান, তিনি উদারপন্থী জায়নবাদী বামপন্থী মেরেটজ পার্টিকে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আমাদের রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক ও উদার হিসেবে দেখতে চাই। ইহুদি হিসেবে ইহুদি জনগণের স্বদেশ হিসেবে দেখতে চাই। যে দেশে ইহুদি সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করতে পারে এমন একটি ইসরায়েল দেখতে চাই।
আবুলফ হেসের কথায় বোঝা যায়, জেরুজালেমে বসবাস করে তিনি নিজ রাষ্ট্র থেকে সুবিধা ভোগ করতে পারেন। কিন্তু তারপরও নিজের মনের মতো একটি রাষ্ট্র আশা করেন তিনি।
২০১৯ সালের পর থেকে মোট চারবার নির্বাচন হয়েছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলে। মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) দেশটিতে পঞ্চমবারের মতো ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নাগরিকরা মনে করছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যম গত সাড়ে তিন বছর ধরে চলে আসা দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙবে।
ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা এবং চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। দেশটিতে রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে ভোট অনুষ্ঠিত হলেও ইসারায়েলিদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। একই সঙ্গে বেড়ে চলেছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন উত্তেজনা। ইহুদি রাষ্ট্রটির জন্য কেন্দ্রীয় হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে ইরানও।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, পঞ্চমবারের এ নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জোট জয়ী হতে পারে। জনমত জরিপ অনুসারে, ১২০ আসনের পার্লামেন্টে ষাটটির বেশি আসন পেতে পারে নেতানিয়াহুর জোট। লিকুদ ছাড়াও এ জোটে রয়েছে কট্টরপন্থী শাসক ও ইউনাইটেড তোরাহ জুদায়িজম।
ল্যাপিদের জোট ৫৬টি আসন পেতে পারে। বাকি চারটি আসন হাদাশ-তাআল ফিলিস্তিনি স্লেটে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা