বায়ুদূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ঢাকার কোটি বাসিন্দা: সিপিডি
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বিশ্বের বাসযোগ্য শহরগুলোর তালিকার একদম তলানিতে অবস্থান ঢাকার। বায়ুদূষণের দিক থেকেও এ শহরের অবস্থান তালিকার একেবারে ওপরের দিকে। ঢাকা শহরের আশপাশে গড়ে ওঠা ইটভাটার ধোঁয়া, উন্মুক্ত নির্মাণকাজ ও গাড়ির ধোঁয়া রাজধানীর বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অতিরিক্ত পলিথিনের ব্যবহার, পানি ও প্লাস্টিকের খালি বোতল পরিবেশকে আরও দূষিত করে তুলছে।
সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ‘বায়ু ও প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসের মাধ্যমে শহর সবুজায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত ২৫ বছরে দেশের বায়ুদূষণ বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ। আর বায়ুদূষণজনিত রোগের কারণে মৃত্যু বেড়েছে ৯ শতাংশ। প্রতিবছর মারা যাচ্ছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। প্লাস্টিক দূষণও বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। শুধু রাজধানীতেই এক কোটির বেশি মানুষ এখন স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন।
বায়ুদূষণ ও সবুজ নগরায়ণ বিষয়ে সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর সাড়ে ছয়শ কোটি ডলারের সমপরিমাণ উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। আর স্বাস্থ্যসেবার পেছনে মানুষের মাথাপিছু ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজার ৩৩৪ টাকা। ২০১৯ সালে দূষণের কারণে পৌনে দুই লাখ মানুষ মারা যায়, যা ওই বছরের মোট মৃত্যুর শতকরা ২০ ভাগ। প্লাস্টিক দূষণের কারণে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রায় সোয়া কোটি এবং মাছ চাষে ২০ লাখ ডলার আয় হারিয়েছে ২০২০ সালে। প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করতে ওই বছর সরকারের খরচ হয় ৩ কোটি ০ লাখ ডলার। সমুদ্রদূষণে বিশ্বে দশম অবস্থানে বাংলাদেশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, গুলশান, বনানী, নিকেতন ও বারিধারা লেকে মাছের চাষ করা যাচ্ছে না। এখানে মশার চাষ হচ্ছে। প্রতিটি বাড়ি পয়ঃবর্জ্যের লাইন সরাসরি লেকের গিয়ে পড়ছে। ঢাকা শহরে পানিদূষণের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পয়ঃবর্জ্য।
মেয়র বলেন, প্রতিটি বাড়িতে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বসিয়ে বর্জ্য পরিশোধন করে পানি ছাড়ার অনুরোধ থাকবে। এর জন্য খুব বেশি খরচ হয় না। আমি আমার বাড়িতে এটা বসিয়েছি। ঢাকা শহরের প্রতিটি বাড়িতে করা যেতে পারে। আমাদের কাছে মডেল আছে, আপনারা নিতে পারেন। ১০ লাখ টাকা খরচ করে জেনারেটর বসাতে পারলে, কেন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসাতে পারেন না? রাজউকের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ভবিষ্যতে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। সবার এগিয়ে আসতে হবে।
বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে উত্তরের মেয়র বলেন, ৫৬ শতাংশ বায়ুদূষণ হয় ইটভাটার মাধ্যমে। মাটির ইটের ব্যবহার বন্ধ করে কংক্রিটের ইট বা ব্লক ব্যবহার করতে হবে। রোড ডাস্টের মাধ্যমে দূষণ হয় ১ শতাংশ, এটা কমাতে কাজ করছি। এ ছাড়া যানবাহন থেকে ১০ শতাংশ দূষণ হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ব্যক্তিগত পরিবহন কমিয়ে স্কুলবাসে ছাত্রছাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা যদি এটা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে ঢাকায় বায়ুদূষণ ও যানজট দুটিই কমে যাবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশে শিল্পায়ন খুব বড় আকারে হয়নি, তার পরও কেন এত বায়ুদূষণ? উন্নত দেশগুলোতে বড় আকারের শিল্পায়ন হলেও দূষণ এত কম কী করে হয়? তার মানে বায়ুদূষণের জন্য শিল্পায়নকে দায়ী করতে পারব না। আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজধানীর বায়ুদূষণের জন্য ঢাকা শহরের আশপাশে ইটভাটা সবচেয়ে বেশি দায়ী। আর বিদেশে উন্মুক্তভাবে বালি বা মাটি রাখতে কিংবা সরবরাহ করতে পারে না; কিন্তু আমাদের দেশে ওই ব্যবস্থা নেই।
কংক্রিট ইটের ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, কংক্রিট ইটে খরচ ও দূষণের পরিমাণ কমে যাবে। সেজন্য কংক্রিট ইটের কাঁচামালের বিষয়ে আলাদা করে এনবিআর বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। আমাদের প্রস্তাব ছিল কাঁচামাল হিসেবে ৩ এমএম পাথরে ৫ শতাংশ শুল্ক করা। তাহলে ৫ থেকে ৭ টাকা কংক্রিট ইট পাওয়া যাবে। যা সাধারণ ইটের চেয়ে ভালো। এটাকে প্রমোট করা দরকার।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, ডিএসকের নির্বাহী পরিচালক ড. দিবালোক সিংহা, ইউনিলিভারের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আকতার, গার্বেজম্যানের সিইও ফাহিম উদ্দিন শুভ, এয়ার কোয়ালিটি এক্সপার্ট মো. মাসুদ রানা প্রমুখ।