মুক্তমতশিক্ষা

তিন দশকে বাউবি: স্বপ্নের সিঁড়ি নির্মাণ

বাউবি’র ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

মো: আবুল কাসেম শিখদার : নিজের ভাগ্য নিজের যোগ্যতা নিজের দক্ষতা নির্মাণে অধ্যয়নে নতুন করে মনোনিবেশ সৃজনে তিন দশক ধরে বংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখো শিক্ষার্থীর প্রিয় প্রাঙ্গন।

২১ অক্টোবর ২০২২ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।

দিবসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীসহ সকলের কাছেই মনে রাখার মতো সোনালী একটি দিন।

লাখো শিক্ষার্থী এ দিনে শ্রদ্ধার সাথে তাদের ভাগ্য বদলে দেবার প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদার সাথে স্মরণ করে।

১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইন পাশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালাভ করে। দেশের একমাত্র উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার মহাসরণী থেকে ঝরে পড়া, কর্মজীবীদের শিক্ষা গ্রহণে, গৃহিনীসহ সকলের জন্য যে কোন বয়সে এমনকি পাঠবিরতি থাকলেও এখানে পাঠ নেয়ার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত।ছয়টি স্কুলে (অনুষদ) ৬০টি একাডেমিক প্রোগ্রামে এসএসসি থেকে পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহন সবার জন্য অবারিত। দেশজুড়ে এমনকি বিদেশেও পাঠ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা রেখেছে। শিক্ষার্থী সংখ্যার বিবেচনায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়।

আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১লক্ষ ৮৮ হাজার ৭২২ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিস্তরণে অভিনবত্ব রয়েছে। মিডিয়া বিভাগ এরমধ্যে অন্যতম। অডিও ভিডিও প্রোগ্রাম নির্মাণ, ইন্টারনেট ভিত্তিক ওয়েব রেডিও. ওয়েব টিভিতে শিক্ষার ম্যূডিউল অনুযায়ী পাঠনিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার, ওপেন টিভি কার্যক্রম বর্তমানে পরিচালিত হয়। যদিও দীর্ঘদিন বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে নির্দিষ্ট সময়ে প্রচার হলেও এখন তা আর বেতার ও টিভি প্রচার করছেনা। ফলে বাউবির শিক্ষার্থীরা এর সহজলভ্যতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টির প্রকৃত সংকট নিরসনে সরকারের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

বাউবির ওয়েবসাইটে প্রতিদিন তথ্য বাতায়নে আপডেট রাখা হয়। মিডিয়া বিভাগের একাডেমিক অনুষ্ঠান সেখানে আপলোড থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে তা বারবার দেখে পাঠ নিতে পারে। স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণের বিশেষত্ব।বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিভাগটি দক্ষতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্রও ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রোগ্রাম ভিত্তিক স্টাডি সেন্টার কার্যক্রম এ বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। জরুরি সকল শিক্ষার্থী সেবা বিভাগটি তাঁর আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রহতে দিয়ে থাকে। সকল ক্ষেত্রেই অনলাইন সেবা রয়েছে। আইডি কার্ড, সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়ালসহ শিক্ষা সংক্রান্ত সেবায় প্রতিটি কার্যালয়ে রয়েছে অনন্য দক্ষ জনবল। প্রকাশনা, মুদ্রণ ও বিতরণ বিভাগ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। টেক্সট বুক বোর্ডের পরেই পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণে দেশের মধ্যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতায় সেরা বলা যায়। ডেস্কটপ পাবলিশিং এই বিভাগের দক্ষতা বিশ্বমানের বললে অত্যুক্তি হবেনা। ডাক বিভাগের সহযোগিতায় লক্ষ লক্ষ পাঠ সামগ্রি স্টাডি সেন্টারে মাঠ পর্যায়ের অফিসে সময়মত প্রেরণ বিভাগটির কার্যক্রম অতুলনীয়।পাঠসামগ্রী ছাড়াও গবেষণা জার্নাল, মৌলিক প্রকাশনা, দাপ্তরিক প্রিন্টিং আইটেম মুদ্রণে এ বিভাগ দায়িত্ব পালন করে থাকে।
৩০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সৃজনশীলতা দক্ষতা অনেক ঋদ্ধ হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষে মিডিয়া বিভাগের নির্মিত অনুষ্ঠান, শ্রদ্ধার্ঘ প্রকাশনা, রজতজয়ন্তী প্রকাশনা সুধীমহলে প্রশংসা অর্জন করেছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ স্কুলের শিক্ষকগণ উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। মিডিয়াবেইজড টেকনোলোজিতে দক্ষতাসম্পন্ন। শিক্ষার এই বিশেষ ধারায় অভিজ্ঞতা নিয়ে লাখো শিক্ষার্থীর পাঠদান কৌশলে তাঁদের ইনোভেটিভ কার্যক্রম বাউবিকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে নিয়ে চলেছে। শিক্ষার উপকরণ, প্রযুক্তির প্রয়োগ, পাঠ্য বিষয়ে নতুন নতুন জ্ঞানের বিস্তার কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষকগণ প্রদেয় ডিগ্রির মানবজায় রাখতে তৎপর।

প্রতিষ্ঠার ত্রিশবছরে এসে বাউবি শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধিকারে রেখেছে। গণমুখী কর্মমুখী ও জীবন ব্যাপী শিক্ষাকে সবারজন্য উন্মুক্ত করে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার দায়িত্ব নিয়েই এ ঘোষণা দিয়েছেন। সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ সৃজনে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য নতুন একাডেমিক পরিকল্পনায় উচ্চ শিক্ষার নানা বিষয় খোলায় এদিকটি খেয়াল রাখছে বাউবি। এ ক্ষেত্রে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় থেকে সহায়তার হাত প্রসারিত করতে হবে। বিএসসি ইন নার্সিং প্রোগামটি বন্ধ রয়েছে। নার্সিং কাউন্সিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বাউবির এই প্রোগ্রামে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। কৃষি বিষয়ক মাস্টার্স শিক্ষায় কৃষি মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা দিতে হবে। শিক্ষার সংকোচ নয় প্রসারণের ক্ষেত্র তৈরিতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন ।

বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে নব নবজ্ঞান সৃজনের প্রাঙ্গন। প্রথাগত বিশ্ববিদ্যালয় সবার চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়। এছাড়া পড়া লেখাকে শ্রেণীবদ্ধ না রেখে উন্মুক্ত রাখলেই সকলেই জীবনব্যাপী শিক্ষায় সংযুক্ত হতে পারবে। আর এ জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সে ক্ষমতা রাখা হয়েছে। সারা পৃথিবীতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সে জন্য খুবই শক্তিশালী একটি শিক্ষা কাঠামো। উন্নত পাঠক্রম, প্রযুক্তি বান্ধব, নমনীয় শিক্ষাকাল, সহজপ্রাপ্যতা উন্মুক্ত শিক্ষা একটি জনপ্রিয় শিক্ষা ব্যবস্থা।বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ বছরে এসে সকল স্টেক হোল্ডারের কাছে এ বার্তা পৌঁছাতে চায়। সে জন্যই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এখন ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক, মো: আবুল কাসেম শিখদার, সাবেক পরিচালক, তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যাল।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button