আইন-আদালতআলোচিত

নর্থ সাউথের চেয়ারম্যানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মামলা দায়েরের ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক পাঁচজন সদস্যসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হলেও অভিযোগপত্রে নতুন করে তিনজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) অভিযোগপত্রটি বিচারিক আদালতে জমা দেন। তিনি এ মামলার অনুসন্ধানকারী, বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনায় ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে গত ৫ মে ট্রাস্টি বোর্ডের পাঁচজনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহেনা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান এবং জমির দাতা আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালিকে আসামি করা হয়। মামলার ১৭ দিনের মাথায় ২২ মে আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডের পাঁচ সদস্য। শুনানির পর হাইকোর্ট চারজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। একই সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করতে থানা-পুলিশকে নির্দেশ দেন। পরে মহানগর দায়রা জজ আদালত তাঁদের জেলে পাঠান। তাঁরা এখনো জামিন পাননি।

সাবেক ট্রাস্টিদের জেলে রেখেই গত ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে ১২ সদস্যের নতুন বোর্ড পুনর্গঠন করে সরকার। সেখানে পুরোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সাতজনকে রাখা হয়নি। এর মধ্যে জেলে থাকা ট্রাস্টি বোর্ডের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলো। অভিযোগপত্রে নতুন আসামি করা হয়েছে আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আনোয়ারা বেগম ও সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামানকে।

দুদক সূত্র জানায়, এ ঘটনায় দুদকের অনুসন্ধান, মামলা এবং আসামিদের জেলে পোরা, তদন্ত শেষ করা—সব মিলিয়ে সময় নেওয়া হয় আট-নয় মাস। এত কম সময়ে দ্রুতবেগে অনুসন্ধান শেষ করে মামলা দায়ের এবং তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়েই আসামিদের জেলে পোরা ছিল চোখে পড়ার মতো।

অল্প সময়ে অনুসন্ধান শেষ করে মামলা দায়ের এবং আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, এ ক্ষেত্রে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। তদন্তে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, সে অনুযায়ী অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, আসামিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন। এরপর নিজেরা এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। আসামিরা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজেরা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন এবং উক্ত বেআইনি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রতারণা ও জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কমিশন বা ঘুষের আদান-প্রদান করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।

আত্মসাতের অর্থ হস্তান্তর স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ ক ধারা এবং ১৯৪৭ সনের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী-স্বজনদের চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি ক্রয় ও অবৈধভাবে বিলাসবহুল বাড়ি ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button