গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : আগামী ৩০শে ডিসেম্বর যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটি সত্যিকার অর্থে গত দশ বছরের মধ্যে প্রথম কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক জাতীয় নির্বাচন। যেটিতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দল।
বড় দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ২০০৮ সালে যখন নির্বাচনে মুখোমুখি হয়েছিল, তার সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের অনেক ফারাক।
এই দশ বছরে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে বাংলাদেশে। যার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব পড়বে নির্বাচনী ফল নির্ধারণে। এক্ষেত্রে মোটা দাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন কোনগুলি?
পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে:
১. কর্তৃত্ববাদী শাসন
২. সমাজ ও রাজনীতির ইসলামীকরণ
৩. বিকাশমান অর্থনীতি
৪. নয়া প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়া বিস্তার
৫. বিপুল সংখ্যক তরুণ ভোটার
এসব পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছে বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন এই পরিবর্তনগুলি কী ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে এবারের নির্বাচনে:
১. কর্তৃত্ববাদী শাসন
২০০৮ সালের সঙ্গে ২০১৮ সালের বাংলাদেশের যে বিরাট পরিবর্তনের কথা অনেকে উল্লেখ করছেন, তা হচ্ছে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন।
দশ বছর আগে বাংলাদেশে যখন নির্বাচন হয়েছিল, তখন তার আগের দুবছর দেশটির ক্ষমতায় ছিল একটি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসছে বলে তখন একটা আশাবাদ তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু এ বছর প্রকাশ করা এক রিপোর্টে একটি জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে নতুন পাঁচ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের কাতারে ফেলেছে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচনটি হয়েছিল, সেটি ছিল কার্যত একতরফা নির্বাচন, যেখানে প্রধান বিরোধী দলের কোন অংশগ্রহণ ছিল না।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরে আসা আওয়ামী লীগের জোট সরকার ক্রমশ আরও বেশি করে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে ঝুঁকেছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ। তাঁর মতে, এই প্রবণতা বাংলাদেশে গত এক দশকের খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
“আওয়ামী লীগের মধ্যে কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে, আমরা তার বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখতে পেয়েছি। গুম কিংবা বিচার বহির্ভূত হত্যার ব্যাপক বিস্তার এক ধরণের ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাংলাদেশে আমরা যেটাকে ডেমোক্রেটিক স্পেস বলি, ক্রমাগতভাবে সেটি সংকুচিত হয়েছে- কথা বলার জায়গা, মত প্রকাশের জায়গা, সমাবেশের জায়গা, প্রতিবাদের জায়গা, সেগুলো সংকুচিত হয়েছে।”
তার মতে এর ফলে বাংলাদেশে সেই শক্তির ভূমিকা প্রবল হয়েছে, যাদেরকে বর্ণনা করা হয় ‘ডীপ স্টেট’ বলে।
“যে কোন পরিস্থিতিতে যখনই রাজনৈতিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়, তখন শক্তিপ্রয়োগের ধারা অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তার ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। তখন যাদেরকে ‘ডীপ স্টেট’ বলে চিহ্ণিত করা হয়, তাদের ভূমিকা বাড়াটা স্বাভাবিক।”
বাংলাদেশে এ ধরণের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য লেখক এবং গবেষক সলিমুল্লাহ খান অবশ্য সমানভাবে দোষী করছেন বিরোধী দল বিএনপিকেও।
তার মতে রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
“এটা কেন হয়েছে, কিভাবে হয়েছে সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে। ধরুন ২০১৪ সালের নির্বাচন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেভাবে একতরফাভাবে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেকেরও বেশি আসনে তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনলো, সেটাতে সরকারের যেমন দায় আছে, যাদের বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার কথা ছিল, যারা যায়নি, তাদেরও দায় আছে।”
২. সমাজ ও রাজনীতির ইসলামীকরণ
দশ বছর আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান দুই দল ছিল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, এখনও তাই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাম-ডান এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে মেরুকরণ, সেখানে এই দুই দল ছিল দুই বিপরীত মেরুর প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান দল।
এই দুটি দল তাদের সেই অবস্থান কতটা ধরে রাখতে পেরেছে? নাকি তাদের দুর্বলতার কারণে নতুন কোন রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশে জায়গা করে নিচ্ছে?
অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে বাংলাদেশে বিগত কয়েক দশকের মোটা দাগের যে রাজনৈতিক বিভাজন, যার একদিকে আওয়ামী লীগ এবং আরেক দিকে বিএনপি, সেই অবস্থায় পরিবর্তন ঘটছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সমাজে রক্ষণশীল ইসলামী দল এবং গোষ্ঠীগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
“সামাজিকভাবে বাংলাদেশে যে ইসলামীকরণ হয়েছে, তাতে করে সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। এই ধরণের সামাজিক শক্তির গ্রহণযোগ্যতা রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। শুধু তাই নয়, সাংগঠনিকভাবেও ইসলামপন্থী এই শক্তি, যাদেরকে আমি রক্ষণশীল ইসলামপন্থী শক্তি বলি, তারা শক্তিশালী হচ্ছে। সমাজে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বোপরি তাদের প্রভাব বিস্তার ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।”
অধ্যাপক রীয়াজের মতে, এর পাশাপাশি বড় দলগুলোর শক্তিক্ষয় ঘটছে, আর সেই শূন্য স্থান দখল করছে ইসলামপন্থীরা।
“সাংগঠনিকভাবে গত দশ বছরে আওয়ামী লীগও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সরকারের থাকার কারণে, সরকার ব্যবস্থার মধ্যে দল পরিচালনার কারণে। বিএনপি তো অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে , বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি চাপের মুখে থাকার কারণে যতটা গুটিয়ে গেছে, ততটুকু স্পেস তৈরি হয়েছে আসলে এই ইসলামপন্থী দলগুলোর জায়গা নেয়ার।”
বাংলাদেশের রাজনীতি যে ক্রমশ দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকছে, সে বিষয়ে একমত লেখক এবং গবেষক ড: সলিমুল্লাহ খানও। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের অধ্যাপক ড: খানের মতে, “শেষ বিচারে বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক বেশি ডানপন্থী হয়েছে। আমি একটা উদাহরণ দেই আপনাকে। যাদেরকে আপনি ইসলামপন্থী বলছেন, অথবা বিএনপির জোট, অথবা বদরুদ্দোজা চৌধুরী বা ড: কামাল, অথবা আওয়ামী লীগ – সকলেই একটা জায়গায় একদিকে সরে গেছে। এরা সবাই ব্যক্তিগত সম্পত্তি অভিলাষী শক্তিশালী বুর্জোয়া দলে পরিণত হয়েছে।”
“এখন তাহলে আপনার সামনে চয়েসটা কি। আপনি কি গুলিতে মারা যাবেন নাকি ফাঁসিতে মরবেন। আমরা এখন যে পরিস্থিতিতে আছি, এটিকে আমরা বলি একটা নয়া ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি। যেখানে আপনার যে কোন চয়েসই আপনাকে খারাপ দিকে নিয়ে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি বিদ্রোহ করতে না পারেন। এটা অত্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতি।”
অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে, রক্ষণশীল ইসলামপন্থী দলগুলোর এই উত্থানের পেছনে রাষ্ট্রক্ষমতারও প্রচ্ছন্ন একটা সমর্থন আছে।
“যেমন ধরুণ হেফাজতে ইসলাম। রাষ্ট্রীয়ভাবেও আসলে সমর্থন পাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম বা হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক শক্তিগুলো। আর আমার মনে হচ্ছে, সরকারি দলও যেন চাইছেন এই ধরণের শক্তিগুলো যেন জায়গা করে নিতে পারে।।”
৩. অর্থনীতির বিকাশ
২০০৮ সালের সঙ্গে ২০১৮ সালের বাংলাদেশের সবচেয়ে দৃশ্যমান পরিবর্তন সম্ভবত অর্থনীতিতে। দশ বছর আগের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বেড়ে প্রায় তিন গুণে দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও।
ঢাকার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ড: ফাহমিদা খাতুন বলছেন, “অর্থনীতির আকার, যেটাকে আমরা মোট দেশজ উৎপাদন বলি, সেটা কিন্তু অনেক বেড়েছে। যেমন ২০০৮ সালের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার, সেটা ৬ শতাংশ থেকে সাত দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। এটা তো একটা বিরাট পরিবর্তন। “
“এর পাশাপাশি মাথাপিছু আয়, সেখানেও বিরাট পরিবর্তন এসেছে। ২০০৮ সালে ৬৮৬ ডলার ছিল যেটা, সেটা এখন ২০১৮ সালে ১৭৫৮ ডলার হয়েছে। সেদিক থেকে তো একটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। চরম দারিদ্রের হার দশ বছর আগে ছিল ১৯.৬ শতাংশ। সেটা এখন কমে দাড়িয়েছে ১৪.৮ শতাংশে। এভাবে দারিদ্রের হারটাও আামরা কমাতে পেরেছি।”
এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষমতাসীনরা নি:সন্দেহে তাদের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবে। কিন্তু ফাহমিদা খাতুন বলছেন, এই খাতে গত দশ বছরে অনেক বড় বড় আর্থিক কেলেংকারি এবং অনিয়মও ঘটেছে, যার ফল হতে পারে নেতিবাচক।
“আপনি ধরুন আর্থিক খাতের অবস্থাই। এখানে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ধরুণ। বা পুঁজি বাজারে ধস নেমেছে। তার মানেটা কি। তার মানে হচ্ছে, এখানে সুশাসনের অভাবে, এখান থেকে যে অর্থ বেরিয়ে যাচ্ছে, এটি কিন্তু গুটিকয়েকের হাতে যাচ্ছে। এবং এই গুটিকয়েক কারা? সামান্য কয়েকজন প্রভাবশালী। আমরা এটাকে বলি ক্রনি ক্যাপিটালিজম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখেছি, যখন ক্রাইসিস হয়, এটার বহিঃপ্রকাশ কিন্তু খুব খারাপভাবে দেখা যায়।”
অর্থনীতিতে এই সাফল্যের পাশাপাশি সমাজে যে ধনবৈষম্য তৈরি হয়েছে, এবং প্রবৃদ্ধির সাথে তাল রেখে নতুন কর্মসংস্থান হয়নি, সেটি একটা সংকট তৈরি করতে পারে বলে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন তিনি।
অর্থনীতিতে এসব পরিবর্তন, রাজনীতির ওপর কি প্রভাব ফেলছে? অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, সমাজে যে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হচ্ছে, রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় তাদের সঙ্গে পুরোনো মধ্যবিত্তের একটা বিরাট ফারাক দেখা যাচ্ছে।
“বাংলাদেশে যে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হয়েছে, তাদের মধ্যে আসলে গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, এগুলোর ব্যাপারে এক ধরণের অনীহা আছে। কারণ হচ্ছে, এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব, বিকাশ, সবই ঘটছে আসলে এক ধরণের অস্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে।”
ড: সলিমুল্লাহ খানের মতে, অর্থনৈতিক উন্নতির যে দাবি বাংলাদেশে করা হচ্ছে, তা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে কোন মৌলিক পরিবর্তনই আনেনি।
“পরিস্থিতিটা ভয়াবহ। বাংলাদেশে এখন একটা নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হয়েছে, যারা নিজেদের স্বার্থে জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিচ্ছে। প্রয়োজন হলে তাদের ইসলামী হতেও বাধা নেই, প্রয়োজন হলে তাদের ইসলামবিরোধী হতেও বাধা নেই। আমি মনে করি, এরকম একটা মেরুদন্ডহীন মধ্যবিত্ত শ্রেণী, জাতিকে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দিতে পারে না। বাংলাদেশের বিপর্যয়টা এখানেই। অর্থনৈতিক উন্নতির যে কথা বলা হয় এটা হাস্যকর একারণে যে আমাদের কোন স্ট্রাকচারাল পরিবর্তন হয়নি।”
৪ . দু কোটির বেশি নতুন ভোটার
২০০৮ সালে বাংলাদেশে সর্বশেষ যে নির্বাচন হয়েছিল, তারপর বাংলাদেশে নুতন ভোটার হয়েছেন প্রায় আড়াই কোটি।
এই নতুন ভোটারদের প্রায় সবাই বয়সে তরুণ, এবারের নির্বাচনে এই তরুণ ভোটারদের সমর্থন কোন দিকে যায়, সেটা নিসন্দেহে বড় ভূমিকা রাখবে ফলাফল নির্ধারণে। এই তরুণদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা সম্পর্কে আমরা কি আঁচ করতে পারি?
অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, গত দশ বছরে এই তরুণরা বেড়ে উঠেছেন এমন এক শাসনব্যবস্থায়, যেখানে তাদের মধ্যে প্রচলিত ধারার সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ খুব বেশি দেখা যায়নি।
“গত দশ বছরের এই যে নতুন ভোটার, যার বয়স এখন ধরুণ ১৮ বা ১৯। দশ বছর আগে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল, তখন তাদের বয়স ছিল ৮ বছর বা ৯ বছর। তারা গত দশ বছর ধরে কেবল যে এক দলের শাসন দেখেছে তা নয় কিন্তু। আপনাকে মনে রাখতে হবে আর কি কি রাজনৈতিক ঘটনা তারা প্রত্যক্ষ করেছে। যে ধরণের অগণতান্ত্রিক পরিবেশে তারা বেড়ে উঠেছে, তাতে এরা প্রচলিত ধারার রাজনীতিতে উৎসাহিত হয়নি। সাম্প্রতিককালে যে দুটি আন্দোলন হয়েছে, যে দুটিতে তরুণরা যুক্ত হয়েছিল, আমার মনে হয়েছে, তারা প্রচলিত, প্রথাসিদ্ধ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে, তারা ভিন্ন এক ধরণের রাজনীতি তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। সেগুলো প্রধানত ইস্যুভিত্তিক।”
তার মানে কি এই যে, নতুন তরুণ ভোটাররা বাংলাদেশের প্রচলিত দুই প্রধান দলের রাজনৈতিক স্রোতের বাইরে থাকবে? সলিমুল্লাহ খান মনে করেন, এই তরুণদের রাজনৈতিক সমর্থন শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যেই ভাগ হয়ে যাবে:
“আমার বিশ্বাস আগামী নির্বাচনে এই তরুণ সমাজের ভূমিকা বিভক্ত থাকবে। তারা যে এই জোটকে সবচেয়ে বেশি ভোট দেবে, ঐ জোটকে নয়, সেটা সঠিক নয়।” তারা যে এই জোটকে সবচেয়ে বেশি ভোট দেবে, ঐ জোটকে নয়, সেটা সঠিক নয়।”
৫. সোশ্যাল মিডিয়া
বাকী বিশ্বের মতো, বাংলাদেশেও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিরাট বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে নতুন প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
ফেসবুক বাংলাদেশে এখন এতটাই জনপ্রিয় যে, সামনের নির্বাচনে মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি এটিও যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে তা নিয়ে কারোই কোন সংশয় নেই।
দশ বছরের আগের বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের আরেকটি বড় পার্থক্য এই সামাজিক মাধ্যম, বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।
“সোশ্যাল মিডিয়াকে তো অবশ্যই একটা বড় ধরণের পরিবর্তন হিসেবে দেখতে হবে। গত দশ বছরে যোগাযোগের ধরণ যেমন বদলেছে, তেমনি লোকজন কোন ধরণের মাধ্যম ব্যবহার করছে, সেখানেও একটা পরিবর্তন এসেছে। আমাদের কাছে যে উপাত্ত আছে, তাতে আমরা দেখছি, বাংলাদেশে যারাই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের শতকরা ৮৮ ভাগ ফেসবুক ব্যবহার করেন। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে কিন্তু মানুষকে একজায়গায় জড়ো করতে সোশ্যাল মিডিয়া বড় ভূমিকা রেখেছিল। কাজেই রাজনীতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব আর অস্বীকার করার উপায় নেই।”
অধ্যাপক নাসরিন বলছেন, এর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে মানুষের প্রতিবাদ এবং সংগঠিত হওয়ার একটি বিকল্প পরিসর।
এক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ দিচ্ছেন সাম্প্রতিককালে তরুণদের সরকারী চাকুরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়কের আন্দোলন।
এই সোশ্যাল মিডিয়াকে এবারের নির্বাচনে কারা কতটা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারেন, সেটাও তাদের ভাগ্য নির্ধারণে ভালোই ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন গীতি আরা নাসরিন।
সূত্র: বিবিসি