গাজীপুরজেলা পুলিশ

‘হত্যাকারী যুবলীগ নেতা’ সুব্রতকে বাঁচাতে মরিয়া পুলিশ?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে যুবলীগের এক নেতাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে কালীগঞ্জের পিয়াস নন্দী হত্যা মামলায় ‘দুই আসামির দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে’ উঠে আসা ‘হত্যাকারী যুবলীগ নেতাসহ দু’জনকে অব্যাহতির জন্য আদালতে অভিযোগপত্র(চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ।

এই মিশন বাস্তবায়ন করতে অত্যন্ত গোপনে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুলতান উদ্দিন খান। এমনকি অভিযোগপত্রের বিষয়ে কোন কিছুই জানানো হয়নি মামলার বাদীকে।

এছাড়াও হত্যাকারীদের বাঁচাতে ‘১৬১ ধারায় সাক্ষীদের দেওয়া জবানবন্দিতে উল্লেখ থাকা সত্ত্বে’ও দুই আসামির নাম বাদ দিয়েছে পুলিশ। এমনকি প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যও আমলে নেয়া হয়নি।

এমনই অবিশ্বাস্য এবং নজিরবিহীন এ ঘটনা ঘটেছে কালীগঞ্জের খলাপাড়া এলাকার পিয়াস নন্দী(১৬) হত্যা মামলায়।

অভিযোগপত্রে অব্যাহতির জন্য রয়েছে খলাপাড়া (বারইপাড়া)এলাকার লক্ষী নারায়ন চৌধুরীর ছেলে উদয় শংকর চৌধুরী শাওন এবং নির্মল পালের (ডাক্তার) ছেলে সুব্রত পাল। সে বাহাদুর শাদী ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

‘হত্যাকারী যুবলীগ নেতা সুব্রত পালকে বাচাঁতে মরিয়া হয়ে পুলিশ এসব করেছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী’। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানার{২৩(০৮)১৬}নাম্বার মামলায় ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সুব্রত।

১৯৯৮ সালের ২২ মার্চ ব্রিটিশ শাসিত পাক-ভারত-উপমহাদেশের জন্য ‘ফৌজদারি কার্যবিধি-১৯৯৮’ নামে একটি আইন পাস হয় যা ওই বছর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। উক্ত আইনের ১৬১ ধারায় সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয় যা জুডিশিয়াল রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হয় না। কিন্তু উক্ত আইনের ১৬৪ ধারা বলে কোনো জবানবন্দি বা স্বীকারোক্তি যদি ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক গৃহীত হয় তবে এটা জুডিশিয়াল রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বিধায় বিচারামলে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ফৌজদারি মামলার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ধারার অধীনে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর নিজের অপরাধের লিখিত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে থাকেন।

আর এই আইনের ব্যতয় ঘটিয়েই গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুই আসামীর অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে আদালতের জিআর শাখায় অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলার নিয়মিত ধার্য তারিখ গত ১৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) গাজীপুর জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ ওই অভিযোগপত্র দাখিল করেন গাজীপুর আদালতের পরিদর্শক রবিউল ইসলাম। পরে বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী শুনানীর জন্য আগামী ৮ মে ধার্য করেন আদালত।

আসামীদের বাঁচাতে অভিযোগপত্রে দায়সারা কারণ উল্লেখসহ রাখা হয়েছে নানা ফাঁকফোকর। এর ফলে মামলার বিচার শুরু হলে আসামীরা পার পেয়ে যেতে পারেন- এমন আশঙ্কা নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় অনেকের।

বিতর্কিত অভিযোগপত্র প্রত্যাখান করে নিরপেক্ষভাবে পুন:তদন্তের আবেদন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান নিহতের স্বজনরা।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে পিয়াস নন্দীকে খোঁজে না পেয়ে পরদিন ৫ আগস্ট তার ভাই পাভেল নন্দী বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। নিখোঁজের ঘটনা তদন্তের জন্য কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুলতান উদ্দিন খান জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই জনকে আটক করে। পরবর্তীতে ওই দিনই বিকেলে চকজামালপুরের শ্মশানঘাট সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের একটি জঙ্গল থেকে পিয়াস নন্দীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

অপর দিকে পুলিশ হেফাজতে আটক থাকা খলাপাড়া গ্রামের আবদুল বাতেনের ছেলে ওমর ফারুক বাক্কার(২০) এবং চক জামালপুর এলাকার বিজয় চন্দ্র দাসের ছেলে অপু দাসের (১৬) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে পাভেল নন্দী বাদী হয়ে একই দিন রাতে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পরদিন ৬ আগস্ট থানায় আটক থাকা ওমর ফারুক বাক্কার এবং অপু দাসকে ওই মামলায় আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।

ওইদিনই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পৃথকভাবে তারা দু’জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলী আদালতের বিচারক মো: ইলিয়াস রহমান আসামিদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

ওমর ফারুক বাক্কারের দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি থেকে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুরের বারইপাড়া গ্রামের সুব্রত নামে একজনের সঙ্গে বাক্কারের সম্পর্ক ছিল। পিয়াসের সঙ্গে সুব্রতর ভাতিজির সম্পর্ক ছিল। তার নাম বৃষ্টি, ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট সুব্রত তাকে পিয়াসকে নিয়ে শ্মশানঘাট যেতে বলে। পরে সে আপুকে বলে পিয়াসকে নিয়ে শ্মশানঘাটের দিকে যেতে। আপু পিয়াসকে সাথে নিয়ে চিপস খায় আর পিয়াসকে নিয়ে শ্মশানঘাট এলাকায় যায়। সঙ্গে বাক্কার, সুব্রত, শাওন (পিতা নারায়ন সুব্রতের বাড়ির সাথে বাড়ি) টিটু (অপু দাসের আপন বড়ভাই) ঐ খানে দাড়ানো ছিলো। পিয়াসকে নিয়ে আপু যাবার পরপরই বাক্কার পিয়াসের হাতে ধরে। অন্য হাতে ধরে আপু, পিয়াস মাটিতে পরে গেলে শাওন পিয়াসের পা চেপে ধরে আপু, টিটু পিয়াসের বুকের উপর চেপে ধরে। পরে সুব্রত পিয়াসের গলায় দড়ি দিয়ে টান মারে। একটু পরে পিয়াস নিস্তেজ হয়ে যায়। সুব্রত এলাকার মাস্তান, তার অস্ত্র আছে। বাক্কারকে এ কাজ না করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বাক্কার পিয়াসের একটা হাত ধরে রাখে সুব্রত কাজ শেষে বাক্কারের কাছে দুই হাজার টাকা দেয়। বাক্কার আপু, শাওন আর টিটুকে পাঁচশত করে দেয় আর পাঁচশ তার কাছে রাখে। এরপরে তারা যে যার মতো চলে যায়। বাক্কার সুব্রতের ভয়ে এ কাজ করে। সে অনুতপ্ত এবং সর্বশেষে ক্ষমা চায়।

অপু দাসের দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি থেকে জানা যায়, পিয়াস নন্দী অপু দাসের পরিচিত এবং একই এলাকার বলে তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন ওমর ফারুক বাক্কার অপু দাসকে বলে পিয়াস নন্দীকে ডেকে আনার জন্য। অপু দাস পিয়াসকে ফোনে ডেকে নিয়ে বাজারে যায়। বাজারে বাক্কারের সাথে তাদের দেখা হয়। বাক্কার পিয়াসকে বলে পিয়াসকে নিয়ে শ্মশান ঘাটের দিকে যেতে। এর আগে তারা তিনজন একত্রে চিপস খায়। বাক্কার চলে গেলে পিয়াসকে নিয়ে শ্মশান ঘাটের দিকে যায় অপু দাস। শ্মশান ঘাটে যাওয়ার পর তারা দুজন দেখে সেখানে বাক্কার আছে। একটু পরে অপুর বড় ভাই টিটু , শাওন (বাক্কার আর শাওনের বাড়ি পাশাপাশি)। বাক্কার কথা বলতে বলতে পিয়াসের হাত ধরতে বলে অপু তাই করে। সবাই তখন হাসাহাসি করছিল। পিয়াস তখন ভাবছিল তারা সকলেই দুষ্টুমি করতেছে তাই সে চিৎকার করেনি। পিয়াস মাটিতে পরে গেলে শাওন পিয়াসের দু’পা চেপে ধরে আর অপু দুই হাত ধরে রাখে। আপুর ভাই টিটু পিয়াসের বুকের উপরে চেপে ধরে আর বাক্কার পকেট থেকে দড়ি বের করে পিয়াসের গলায় ফাঁস দিয়ে দেয়। তখন পিয়াস চিৎকার করলেও কেউ শুনতে পায়নি শ্মশান ঘাট একটু দূরে। এর কিছুক্ষণ পর পিয়াস চুপ হয়ে যায়। তখন বাক্কার পাঁচশত টাকা দেয় আপুকে আর ঘটনা কাউকে না বলার জন্য বলে। পরে পিয়াসের লাশ ফেলে তারা সকলেই চলে যায়। আপু বাড়ি চলে যায়। বাক্কার কেন পিয়াসকে মারে আপু তা বলতে পারে না। পিয়সকে মেরে ফেলবে এটা বুঝতে পারেনি আপু।

এরপর ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অনুযায়ী মামলায় সন্ধিগ্ধ ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত চকজামালপুর গ্রামের বিজয় চন্দ্র দাসের ছেলে টিটু চন্দ্র দাশ(২৬) এবং খলাপাড়া এলাকার লক্ষী নারায়ন চৌধুরীর ছেলে উদয় শংকর চৌধুরী শাওনকে (২৫) গ্রেপ্তার করে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।

রিমান্ডের আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা আসামী দ্বয় মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত বলিয়া প্রাথমিক ভাবে প্রতীয়মান হয়। আসামীদ্বয়কে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন।

গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলী আদালতের বিচারক মো: ইলিয়াস রহমান শুনানী শেষে তাদের দু’জনেরই দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট কারাগার থেকে টিটু চন্দ্র দাশ এবং উদয় শংকর চৌধুরী শাওনকে দুই দিনের রিমান্ডে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পূনরায় ১৫ আগস্ট আদালতে প্রেরণ করে।

রিমান্ডের শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন আসামীদ্বয়কে মামলার ঘটনার বিষয়ে পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদ্বয় ঘটনা সংক্রান্তে বেশ কিছু তথ্য প্রধান করেছে।

অপরদিকে অভিযোগপত্র তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, পিয়াস নন্দী একটি স্যামসাং স্মার্টফোন ব্যবহার করত। যা দেখে মামলার এজাহার নামীয় আসামী ওমর ফারুক বাক্কারের লোভ হয়। পরে বাক্কার স্মার্টফোনটি নেওয়ার পরিকল্পনা করে। মামলার ঘটনার পূর্বে বিভিন্ন সময় আসামী অপু দাশ ও ভিকটিম পিয়াস নন্দী কাজের ফাঁকে সময় পেলেই শ্মশান ঘাট এলাকায় একসাথে মোবাইল ফোনে গেমস খেলতে এবং গল্প গুজব করতো। এমতাবস্থায় উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির ও মাদকাসক্ত আসামী ওমর ফারুক বাক্কার পরিকল্পনা করে ঘটনার তারিখে অপর আসামী অপু দাসকে দিয়ে পিয়াস নন্দীকে ডেকে নিয়ে আসার জন্য বললে তাহার কথা মত আপু দাস পিয়াসকে শ্মশান ঘাটে ডেকে নিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর বাক্কার ও তদন্তে প্রকাশিত সন্দিগ্ধ আসামী টিটু চন্দ্র দাস সেখানে উপস্থিত হয়। পরিকল্পনা মাফিক বাক্কার কথাবার্তার এক পর্যায়ে আকস্কিক ভাবে তাহার প্যান্টের পকেটে আগে হইতে রাখা রশি দ্বারা পিয়াস নন্দীর গলায় ফাঁস দিয়ে চেপে ধরে। তখন পিয়াস নন্দী ছোটাছুটি করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করিলে আসামী আপু দাস ও তদন্তে প্রকাশিত সন্দিগ্ধ আসামী টিটু চন্দ্র দাস পিয়াস নন্দীর পা চেপে ধরে। উক্ত আসামীগণ ভিকটিম পিয়াস নন্দীর মৃত্যু নিশ্চিত করে।

পরে লাশ গোপন করার জন্য শ্মশান ঘাটে আনুঃ৩০ গজ উত্তর পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে পরেশরবি দাসদের জঙ্গলের ভেতরে লাশ গুম করে রাখার জন্য ফেলে রাখে। ওই সময় পিয়াসের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বাক্কার নিয়ে যায়। মামলার তদন্ত কালে উক্ত স্যামসুং মোবাইল ফোনটি বাক্কারের দেখানো মতে তার বসত বাড়ী হইতে উদ্ধার করা হয়। উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির উক্ত আসামীরা একটি মোবাইল ফোনের লোভে তুচ্ছ ঘটনায় পরিকল্পিত ভাবে পিয়াস নন্দীকে হত্যা করে লাশ গুম করে রাখে।

মামলার আসামী বাক্কার এবং অপু দাস ১৬৪ ধারায় পদত্ত স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে সন্দিগ্ধ গ্রেপ্তারকৃত উদয় শংকর চৌধুরী শাওনের নাম উল্লেখ করে এবং এজাহার নামীয় ১ নং আসামী শুধু সুব্রতর নাম উল্লেখ করে কিন্তু পিতা এবং ঠিকানা অজ্ঞাত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোন তথ্য প্রদান করে নাই। অত্র এলাকায় সুব্রত নামে একাধিক লোক রয়েছে। যাদের বিষয়ে যাচাই করে ঘটনার সাথে কোন সংশ্লিষ্টাতার কোন তথ্য উদঘাটন করা যায় নাই। গ্রেপ্তারকৃত সন্দিগ্ধ অপর আসামী উদয় শংকর চৌধুরী শাওন ঘটনার তারিখ ও সময়ে তার কর্মস্থল ঘোড়াশালের বাঘার পাড়া এলাকায় অবস্থিত প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (পি.আই.পি) ফ্যাক্টরীতে কর্মরত ছিল বলে তথ্য প্রযুক্তিগত ভাবে দেখা যায়। এছাড়াও তার কর্মস্থল অফিসে হাজিরা রেকর্ডে ও কর্মস্থলে হাজির থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় এবং প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সহিত জড়িত নয় মর্মে প্রতিয়মান হয়। মামলার ঘটনার বিষয়ে প্রকাশ্য ও গোপনে বিস্তারিত তদন্তে, ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পর্যালোচনায়, ফৌ: কা: বি: ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় এজাহার নামীয় এক নাম্বার আসামী বাক্কার, দুই নাম্বার আসামী অপু দাস ও তিন তদন্তে প্রকাশিত গ্রেপ্তারকৃত আসামী টিটু দাস এর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয় এবং গ্রেপ্তারকৃত সন্দিগ্ধ আসামী উদয় শংকর চৌধুরী শাওন ও সুব্রতের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার দায় হতে অব্যহতি দানের প্রার্থনা করিলাম।

মামলার নথি পর্যালোচনায় করে জানা যায়, সাক্ষী হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীসহ ২০ জনের নাম রয়েছে। কিন্তু সাক্ষীদের জবানবন্দির বিষয়ে কোনো গুরুত্বই দেননি তদন্ত কর্মকর্তা। এমনকি সাক্ষীরা নিজেরাই জানেন না তাদের মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে।

২০ জন সাক্ষীর মধ্যে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক মো: ইলিয়াস রহমান, দু’জন ডাক্তার, কালীগঞ্জ থানার ওসি, মামালার আই/ও, একজন পুলিশ কনস্টেবল, একজন বিশেষ আনসার, এবং মামলার বাদীসহ রয়েছেন বাকী পনের জন।

খোঁজ নিলে মামলার বাদীসহ সাক্ষী হিসেবে দেখানো পনের জন জানান, তাদের কাউকেই মামলায় সাক্ষী করেছে কিনা তা তারা জানেন না। পুলিশ তাদের না জানিয়ে হয়তো সাক্ষী করেছে। দু’একজন বলেছে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় পুলিশ কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে তবে কি কারণে তা জানা নেই।

এছাড়া আরো জানা গেছে, ‘১৬৪ ধারার আসামির জবানবন্দিতে’ উঠে আসা ‘হত্যাকারী সুব্রত কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুর শাদী ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। পুলিশ আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র উল্লেখ করেছে তার পিতা এবং ঠিকানা অজ্ঞাত। ওই এলাকায় সুব্রত নামে একাধিক লোক রয়েছে। যাদের বিষয়ে যাচাই করে ঘটনার সাথে কোন সংশ্লিষ্টাতার কোন তথ্য উদঘাটন করা যায় নাই।

তবে ওমর ফারুক বাক্কার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে, কালীগঞ্জের জামালপুরের বারইপাড়া গ্রামের শাওনের বাড়ির সাথেই সুব্রতের বাড়ি এবং সুব্রতর ভাতিজি বৃষ্টির সঙ্গে পিয়াসের সম্পর্ক ছিল। ‘কিন্তু শাওনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেলেও সুব্রতের বাড়ি খুঁজে পায় নি বলে উল্লেখ করেছে’?

বাহাদুর শাদী ইউনিয়নে ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মতিউর রহমান বলেন, বারইপাড়া এলাকার উদয় শংকর চৌধুরী শাওনের বাড়ির পাশে একজনই সুব্রত আছে তার পিতার নাম নির্মল পাল (ডাক্তার)। সে বাহাদুর শাদী ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়াও সুব্রত নামে কারো বিষয়ে খোঁজ করার জন্য পুলিশ কখনো তাকে কিছুই বলেনি বলেও জানান তিনি।

বারইপাড়া এলাকার উদয় শংকর চৌধুরী শাওনের বাবা লক্ষী নারায়ন চৌধুরী বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে একজনই সুব্রত আছে তার বাবার নাম নির্মল পাল (ডাক্তার) সে এলাকায় থাকে না। সুব্রত পাল বাহাদুর শাদী ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আর বৃষ্টির বাবার নাম নারায়ন দেবনাথ (নাড়ু) তাদের বাড়িও সুব্রতর বাড়ির পাশাপাশি।

অপরদিকে ‘১৬৪ ধারার দেওয়া দুই আসামির জবানবন্দিতেই’ উঠে আসা ‘হত্যাকারী উদয় শংকর চৌধুরী শাওনের বিষয়ে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তার কর্মস্থল অফিসের হাজিরা রেকর্ড ও কর্মস্থলে হাজির থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে মর্মে মামলার দায় হতে তার অব্যহতি চেয়েছে পুলিশ।

সেই প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অফিসে হাজিরা রেকর্ড করার পরও বিভিন্ন সময় অনেকে অল্প সময়ের জন্য যদি কেউ বাহিরে যায় তখন তা এন্টি করা থাকে না। ‘কিন্তু সিসি টিভির ফুটেজ দেখলেই ওই বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যেত। হয়তো ঘটনার সেই সময়ের ভিডিও সিসি টিভিতে ধারণ করা থাকতে পারে’। প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (পি.আই.পি) ফ্যাক্টরীতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই এসব কথা বলেছেন।

রহস্যজনক কারণে পুলিশ ঘটনার সময়ের সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজের বিষয়ে কোন কিছুই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেনি।

মামলার নথি আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

মামলার বাদী পাভেল নন্দী বলেন, মামলা থেকে হত্যাকারীদের বাঁচাতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া দুই আসামীর জবানবন্দিতে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও দুই আসামীর নাম বাদ দিয়ে আমাকে কিছু না জানিয়েই অত্যন্ত গোপনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু এখন পর্যন্ত থানা থেকে কোন কিছুই আমাকে জানানো হয় নি। মামলা তদারকির জন্য নিযুক্ত আমার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্র সংগ্রহ করে বিস্তারিত জানতে পারি। বিতর্কিত এই অভিযোগপত্র প্রত্যাখান করে নিরপেক্ষভাবে পুন:তদন্তের আবেদন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

এসব বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুলতান উদ্দিন খান বলেন, আসামীদের বিষয়ে বাদীর সঙ্গে কথা বলেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তার পরও যদি বাদী তদন্তে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট আদালতে নারাজী দরখাস্তের মাধ্যমে মামলা পুণরায় তদন্তের আবেদন করতে পারবে।

 

আরো জানতে….

এমপি-পুত্র হত্যায় জালিয়াতির অভিযোগ কালীগঞ্জের ওসি এবং তদন্ত কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে!

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button