জোড়া গোলে করে মেসি একাই উড়িয়ে দিল লিভারপুলকে
গাজীপুর কণ্ঠ, খেলাধুলা ডেস্ক : খেলার শুরু দেখে শেষের অনুমান করা অসম্ভব। বিশেষ করে দুই দলের একটিতে যদি থাকে লিওনেল মেসি নামক এক ফুটবল জাদুকর। চলতি মৌসুমে দারুণ ফর্মে থাকা লিভারপুল এই ম্যাচেও শুরুতে বার্সাকে চেপে ধরেছিল। কিন্তু ক্রমেই ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুয়ে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন মেসি-সুয়ারেজরা। আর তাতেই চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ‘অল রেডস’দের ৩-০ গোলে হারিয়ে দিল কাতালান জায়ান্টরা। দলের জয়ে জোড়া গোল করেছেন মেসি। বাকি ১ গোল করেছেন সুয়ারেজ।
খেলার শুরুর ১৫ মিনিট বার্সেলোনার রক্ষণে গতি আর ‘স্পিড পাসিং’র পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন সালাহ-মানেরা। আচমকা একেকটা আক্রমণ ঠেকাতে রীতিমত হিমশিম খেয়েছেন জেরার্ড পিকে-সার্জি রবার্তোরা। কিন্তু কপাল ভালো বিপদ ঘটেনি। উল্টো ১৩তম মিনিটে মেসিকে ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের ডি-বক্সে হ্যান্ড বল করেছিলেন ভ্যান ডাইক। পেনাল্টির আবেদন করে বার্সা। কিন্তু রেফারি তা মানতে অস্বীকৃতি জানান। রিপ্লেতে অবশ্য দেখা গেছে বল ভ্যান ডাইকের হাতে লেগেছিল, কিন্তু সেটা ইচ্ছাকৃত নয়।
২৬তম মিনিটে স্বাগতিকদের বুক থেকে বিশাল বোঝা নামিয়ে দিলেন সুয়ারেজ। বাঁ প্রান্ত থেকে লম্বা করে বল বাড়িয়ে দেন জর্ডি আলবা। নিচু হয়ে আসা ক্রস একদম লিভারপুলের ডি-বক্সের অনেকটা ভেতরে প্রবেশ করতেই ভ্যান ডাইক ও হুয়ান মাতিপের মাঝে জায়গা বানিয়ে দুর্দান্ত এক ডাইভ দেন উরুগুইয়ান তারকা। বল তার ডান পায়ে লেগে সোজা আলিসনকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়।
সুয়ারেজের দৃষ্টিনন্দন গোলটি যেকোনো স্ট্রাইকারের জন্যই স্বপ্নের গোল। অবাক করা বিষয় হলো, চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের আসরে এটাই সুয়ারেজের প্রথম গোল, তাও করলেন নিজের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষেই। সেই ২০১৮ সালে রোমার বিপক্ষে সর্বশেষ গোল করেছিলেন তিনি, ঠিক ৩৯২ দিন আগে! কাকতালীয় ব্যাপার হলো সেবারও প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক ছিলেন ব্রাজিলিয়ান আলিসন। এছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি বার্সার ৫০০তম গোল। এর আগে এই কীর্তি গড়েছিল তাদেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ।
গোল খেয়ে কিছুটা এলোমেলো আক্রমণ শানায় লিভারপুল। কিন্তু ৩৫তম মিনিটে সত্যিকারের সুযোগ এসে গিয়েছিল তাদের সামনে। হ্যান্ডারসনের নিচু করে বাড়ানো বলে জোরালো শট নিয়েছিলেন সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড মানে। কিন্তু তার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। মিনিট দুয়েক বাদে সালাহ’র প্রচেষ্টা রুখে দেন ল্যাঙ্গলেট। কিন্তু বল পেয়ে যান মিলনার। যদিও লিভারপুলের অধিনায়কের নেওয়া শটও পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও হয় লিভারপুলময়। ৪৭ ও ৫৩তম মিনিটে তাদের দুটো দারুণ প্রচেষ্টা টের স্টেগানের দক্ষতার কাছে হার মানে। এরপর আরও কয়েকবার সালাহ-মানেদের সাজানো-গোছানো আক্রমণ বার্সার ডিফেন্স ভাঙতে ব্যর্থ হয়। উল্টো ৭৫তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে দেওয়া গোল করেন মেসি। যদিও গোলটি হতে পারত সুয়ারেজের দ্বিতীয়, কিন্তু তার অসাধারণ শট বারে লেগে ফিরে এলে ফিরতি শটে বল জালে জড়িয়ে দেন বার্সা অধিনায়ক।
ম্যাচের ফলাফল তখন অনেকটাই নিশ্চিত। কিন্তু মেসির জাদু তখনও বাকি। ৮২তম মিনিটে মেসিকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন লিভারপুলের ফ্যাবিনহো। ৩০ গজ দূরে থেকে নেওয়া ফ্রি-কিকে অবিশ্বাস্য এক গোল করে বসেন মেসি। তার বাঁ পায়ের বাঁকানো শট ঠেকাতে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন আলিসন। কিন্তু অমন জাদুকরি ফ্রি-কিক ঠেকানোর সাধ্য তিনি কেন, দুনিয়ার কোনো গোলরক্ষকের পক্ষেই সম্ভব নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগের চলতি মৌসুমে এটি মেসির ১২তম গোল। আর বার্সেলোনার হয়ে এটি মেসির ৬০০তম গোল।
চ্যাম্পিয়নস লিগে ইংলিশ ক্লাবগুলোর বিপক্ষে ৩৩ ম্যাচ খেলে এই নিয়ে ২৬টি গোল হলো মেসির। এমন কীর্তি নেই আর কারও। তবে জার্মান ক্লাবগুলোর বিপক্ষে একইরকম কীর্তি গড়েছিলেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ও বর্তমান জুভেন্টাস উইঙ্গার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়া লিভারপুল তাদের সেরা সুযোগ পেয়েও ভাগ্যের ফেরে গোলের দেখা পায়নি। ট্যাকলের শিকার হওয়ার আগে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মানে। বল পেয়ে যান বদলি হিসেবে নামা ফিরমিনো। শটও নিয়েছিলেন, কিন্তু দুই বার্সা ডিফেন্ডারের বাধায় বলের দিক পাল্টে যায়। বল চলে যায় সালাহ’র পায়ে। একদম কাছ থেকে নেওয়া মিশরীয় তারকার রকেট গতির শট বারে লেগে ফিরে আসে।
আগামী ৮ মে অ্যানফিল্ডে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় লেগে বার্সেলোনাকে আতিথ্য দেবে লিভারপুল।