জাতীয়

জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারাও সদর দপ্তরের নির্দেশনার আলোকে থানার ওসি ও ফাঁড়ির ইনচার্জদের একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকায় কূটনৈতিক এলাকা, আবাসিক হোটেল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিট পুলিশের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিকদের দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় চলছে ব্লক রেইড ও চিরুনি অভিযান। শপিং মল, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন আবাসিক

এলাকার কল্যাণ সমিতির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা নিয়মিত বৈঠক করছেন। চলছে উঠান বৈঠক, মতবিনিময় ও আলোচনা সভা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে।

রাজধানীর নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘বৈশ্বিক উগ্রবাদের যে প্রভাব সারা বিশ্বে রয়েছে, বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। আমাদের দেশে জঙ্গিদের বড় ধরনের নাশকতা চালানোর সক্ষমতা নেই। তারা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হামলা চালাতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক রয়েছি। যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য ও উগ্রবাদ বন্ধে আমরা আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ ও টহল পুলিশকেও নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা বরাবরই বলছি কোথাও সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশকে জানান।’

নিরাপত্তা নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের রুটিন কাজ। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনার আলোকে থানা, ফাঁড়ি ও তল্লাশি চৌকিগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি জঙ্গিবিরোধী জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গণসংযোগ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। গতকাল ছিল সপ্তাহের তৃতীয় দিন। ৪ মে পর্যন্ত সপ্তাহ পালন করা হবে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানার ওসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা জঙ্গিবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ব্লক রেইড ও চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, ডিএমপির রমনা বিভাগের সব ব্যাংকের ম্যানেজার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে জঙ্গিবিরোধী জনসচেতনতা বাড়াতে মতবিনিময় করা হয়। ব্যাংকের প্রবেশপথে মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে ও ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন করে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ফরিদ উদ্দিন জানান, জঙ্গিবিষয়ক সচেতনতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ করা হয়েছে। সবাইকে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নিজের নাম ও পরিচয় গোপন রেখে ৯৯৯ ও হ্যালো সিটি অ্যাপে কল করে পুলিশকে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মতিঝিল বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, স্কুল ও শপিংমলগুলোতে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, দোকান মালিক ও কর্মচারীদের নিয়ে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও ও হাতিরঝিলসহ সব থানায় জঙ্গিবাদবিরোধী উঠান বৈঠক হয়েছে। সেখানে জঙ্গিবাদের সংজ্ঞা, ধরন, লক্ষণ ও কীভাবে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করা যায়, সেসব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া ও মেস সদস্যদের তথ্য নিবন্ধনের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলো যাচাই করার মাধ্যমে সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) কাজ চলছে। পাশাপাশি বাসা-বাড়ি ও সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাগুলো সচল রাখা ও যেসব প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি নেই, সেগুলোতে সিসিটিভি বসানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

রাজধানীর গুলশান, বনানীসহ বিদেশি নাগরিক অধ্যুষিত এলাকাগুলোর নিরাপত্তায় বাড়তি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। ইপিজেড, বন্দর, বিভিন্ন প্রকল্পে দায়িত্ব পালনরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগ, শিল্প পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ নিরাপত্তায় নিয়োজিত সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে পর্যবেক্ষণ বাড়াতে বলা হয়েছে।

ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সব সময় একটু বেশি সতর্ক থাকি। নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের সব সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হয়। এটা আমাদের কাজের অংশ। শ্রীলঙ্কায় হামলা ও সোমবার গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হাতবোমা হামলার পর আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণ আরও বাড়িয়েছি।’

 

সূত্র: দেশ রূপান্তর

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button