আলোচিতজাতীয়

গ্যাসের মজুদ নিয়ে মার্কিন সংস্থার তথ্য বিশ্বাস করেনি সরকার

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। দায়িত্ব গ্রহণ করেই দেশের জ্বালানি ও বিনিয়োগ নীতিমালায় বেশকিছু সংস্কার নিয়ে আসে নতুন সরকার। খাতটিতে বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগের পথ খুলে যায়। অনুকূল সরকারি নীতি সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৯৭ সালের মধ্যেই এ খাতে মোট বিদেশী বিনিয়োগ দাঁড়ায় প্রায় ৩৩০ কোটি ডলারে। বিশেষ করে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসে জ্বালানি খাতের বেশকিছু বৈশ্বিক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান। শেল, তাল্লো, কেয়ার্ন, হ্যালিবার্টন, মোবিল, অক্সিডেন্টাল, টেক্সাকো ও ইউনিকলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতি দেশের জ্বালানি খাত নিয়ে বড় ধরনের প্রত্যাশা তৈরি করে।

কিন্তু ১৯৯৭ সালে মাগুরছড়ায় মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের পরিচালনাধীন গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বিদেশী কোম্পানিগুলোর দক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। অক্সিডেন্টাল পরে যাবতীয় দায়দেনাসহ গ্যাসক্ষেত্রটি হস্তান্তর করে আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইউনোকলের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক প্রতিষ্ঠান শেভরন তা পরে বুঝে নেয়। এখন পর্যন্ত ওই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিপূরণ পায়নি বাংলাদেশ।

১৯৯৮ সালে বঙ্গোপসাগরে দেশের প্রথম অফশোর গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে সাঙ্গুতে উৎপাদন শুরু হয়। একই সঙ্গে দেশেও স্থিতিশীল হারে বাড়তে থাকে চাহিদা। এ অবস্থায় সরকার কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস উত্তোলনের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্টও (পিএসসি বা উৎপাদন ভাগাভাগির চুক্তি) সই করে। এ অনুযায়ী, নিজেদের বিনিয়োগ বা ব্যয় উঠিয়ে নিতে উত্তোলিত গ্যাসের বড় একটি অংশ তুলে নেয়ার সুযোগ পায় কোম্পানিগুলো। কিছুদিনের মধ্যেই এ উৎপাদন ভাগাভাগির প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে কোম্পানিগুলো। উত্তোলিত গ্যাস বিক্রি থেকে কোম্পানিগুলো নিজেদের ব্যয় মেটানোর পর বাকি মুনাফার বড় একটি অংশেরও ভাগ পায়। ব্যয় বেশি দেখিয়ে নিজেদের আয় বাড়ানোসহ নানা অভিযোগে কোম্পানিগুলোকে নিয়ে সন্দেহের বড় অবকাশ তৈরি হয়। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে ব্লক ৯ ও ব্লক ১১-এর মালিকানা নিয়ে বিদেশী কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে বিরোধ এক প্রকার অনিষ্পন্ন থেকে যায়।

অন্যদিকে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাংক ও আর্থিক খাতসহ বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থানে সরকারি আধিপত্য নিয়ে আপত্তি তুলতে থাকে। এক্ষেত্রে মার্কিন কিছু সংস্থার সমর্থনও পায় তারা। সংশ্লিষ্ট বেশকিছু ক্ষেত্রে আরো সংস্কারের দাবি উঠতে থাকে। অন্যথায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ইউএসএআইডির ওই সময়কার গ্যাস খাতসংক্রান্ত একটি শ্বেতপত্রে এ-সংক্রান্ত হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়।

সব মিলিয়ে সরকারের মধ্যে বিদেশী, বিশেষ করে মার্কিন কোম্পানিগুলো নিয়ে এক ধরনের অবিশ্বাস তৈরি হয়। ঠিক এমন সময় ২০০১ সালে দেশে গ্যাস মজুদসংক্রান্ত এক সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, দেশে গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ৩২ দশমিক ১ টিসিএফ। পেট্রোবাংলাকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ এ সমীক্ষায় নেতৃত্ব দেয় মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সংস্থা ইউএসজিএস। তবে প্রকৃতপক্ষে ইউএসজিএস সমীক্ষাটি চালিয়েছিল বলে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তথ্যে উঠে এসেছে। পেট্রোবাংলা ছিল সার্বিক সহযোগিতাকারীর ভূমিকায়। মার্কিন এ সমীক্ষার তথ্যকে অনেকটা দ্বিধা ও অবিশ্বাসের চোখেই দেখা হতে থাকে সে সময়।

এ অবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে তোলে গ্যাস রফতানির ক্রমবর্ধমান চাপ। কথিত রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে তত্কালীন সরকারকে উত্তোলিত গ্যাস রফতানির জন্য বার বার চাপ দেয়া হয়েছে। ওই চাপের মুখেও গ্যাস রফতানিতে সায় দেয়নি সরকার। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য ছিল, অন্তত ৫০ বছরের মজুদ সংরক্ষিত না রেখে গ্যাস রফতানি করবে না বাংলাদেশ। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সরকারের দূরত্বকে আরো বাড়িয়ে তোলে। সক্রিয় হয়ে ওঠে বিদেশী গ্যাস লবি। রাজনৈতিক অঙ্গনেও তাদের তত্পরতার সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পরে কয়েকবার বলেছেন, বিদেশীদের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে তাকে পরাজিত হতে হয়েছিল।

পরের বছরগুলোয় দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার সরকার। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে আবারো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। নতুন করে পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনা সাজানো হতে থাকে। কিন্তু পুরনো অভিজ্ঞতার কারণে জ্বালানি খাতের বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে অস্বস্তি ও অবিশ্বাস থেকেই যায়।

ইউএসজিএসের ওই সমীক্ষাকে যাচাইয়ের জন্য কয়েক বছর পরে আরো গভীর অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগ নেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন হাইড্রোকার্বন ইউনিট (এইচসিইউ)। এজন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে অর্থায়নের সুবিধাও পাওয়া যায়। অনুসন্ধান চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোভিত্তিক কনসালট্যান্সি ফার্ম গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটসকে নিয়োগ দেয় এইচসিইউ।

গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটস তখন বৈশ্বিক জ্বালানি খাতে বেশ পরিচিত একটি নাম। প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনসংক্রান্ত জরিপের পাশাপাশি পরামর্শক সেবা দিয়ে আসছে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। যুক্তরাষ্ট্র, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইতালি, মেক্সিকো, মঙ্গোলিয়া, নাইজেরিয়া, পেরু, রাশিয়া, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের জ্বালানি তেল এবং গ্যাস উত্তোলন খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

গুস্তাভসনের সমীক্ষায় জানানো হয়, গ্যাসের মজুদ পাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ, দেশের এমন খনিগুলোয় গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ৩৮ টিসিএফ। ৫০ শতাংশ মজুদ সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোয় এর পরিমাণ ৬৩ টিসিএফের কিছু বেশি। এ তথ্য ২০১১ সালে এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছিল গুস্তাভসন ও পেট্রোবাংলা। কিন্তু দেশের গ্যাস মজুদ নিয়ে গুস্তাভসনের তথ্য মোটেও বিশ্বাস করেনি সরকার। প্রতিবেদনটি গ্রহণও করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে আর কোনো পদক্ষেপও নেয়া হয়নি।

এর কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মার্কিনদের দেয়া তথ্য-উপাত্তগুলো নিয়ে সবসময়ই এক ধরনের ভীতি কাজ করেছে। এ ভীতির উৎস হলো মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের জ্বালানি খাতে মার্কিন আধিপত্য ও হস্তক্ষেপের ইতিহাস। অতীতে এসব দেশের জ্বালানি পণ্য মার্কিন নিরাপত্তা কৌশলের অংশ হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে। এমনকি এ নিয়ে কোনো কোনো দেশের মানচিত্র বদলে যাওয়ারও নজির রয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন সংস্থাগুলোর নেতৃত্বে এমন এক সময় জরিপগুলো হয়েছে যখন গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিকেন্দ্রিক ভূরাজনীতি বড় ধরনের তোলপাড় তুলে দিয়েছে। এ অবস্থায় মার্কিন সংস্থাগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সরকারের মধ্যে এক ধরনের সন্দিহান মনোভাব দেখা গিয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের অধীন হাইড্রোকার্বন ইউনিটকে সঙ্গে নিয়ে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল গুস্তাভসন। ওই সময়ে হাইড্রোকার্বন ইউনিটে কর্মরত ছিলেন এমন সাবেক কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক কিছু বিষয় কাজ করেছে। জরিপ ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের ভেতরে ছিল। কারণ এসব তথ্য-উপাত্ত ধরে দেশের গ্যাস খাতে বিদেশী কোম্পানির হস্তক্ষেপ বাড়লে জ্বালানি খাত বিদেশী কোম্পানির হস্তগত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের কর্মকর্তাদেরও অনেক সময় এসব তথ্য-উপাত্তের বিষয়ে জানার সুযোগ ছিল না।

গত শতকের প্রায় পুরোটা সময়ই গোটা বিশ্বে ভূরাজনীতির অন্যতম বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল জ্বালানি পণ্য। ওই সময় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক স্থানেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুদকে কেন্দ্র করে মানচিত্র বদলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণেও জ্বালানির সংস্থান বড় একটি ভূমিকা রেখেছিল। এতে বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীর ভূরাজনীতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে জ্বালানি পণ্য। বিষয়টি আরো তীব্রতা পায় সত্তরের দশকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রফতানি সীমিত করে আনলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মারাত্মক জ্বালানি সংকটে পড়ে যায়। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিসংক্রান্ত নিরাপত্তা কৌশল আরো আগ্রাসী হয়ে উঠতে দেখা যায়। এ বিষয়টিই দেশের জ্বালানি খাতে মার্কিনদের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময়ে এক ধরনের দ্বিধা ও সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে অভিমত তাদের।

পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুরের ভাষ্য অনুযায়ী এক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও কূটনীতি দুটোই কাজ করেছে। তিনি বলেন, ওই সময় বিভিন্ন সমীক্ষায় গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ নিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছিল, সেগুলোর আসলে কোনো ভিত্তি ছিল না। সন্দেহ করা হচ্ছিল পূর্ববর্তী সরকার বিদেশীদের খুশি রাখার জন্যই দেশে প্রচুর পরিমাণে গ্যাসের মজুদ দেখাতে চেয়েছিল। গুস্তাভসনের সমীক্ষাটি করা হয়েছিল আগের এসব সমীক্ষার তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই। এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এটি ছিল ধারণানির্ভর। যে কারণে সে সময় এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জোরালো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

প্রতিবেশী একটি দেশে গ্যাস সরবরাহের উদ্দেশ্য থেকে প্রতিবেদনটি করা হয়েছিল বলে মনে করছেন জ্বালানি বিভাগসংশ্লিষ্ট তত্কালীন কয়েক কর্মকর্তা। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে তারা জানান, এখানে প্রচুর পরিমাণ গ্যাসের উপস্থিতি দেখিয়ে মার্কিন কোম্পানিগুলো বোঝাতে চাইছিল, পাইপলাইনে এ গ্যাস রফতানি করলে কোনো ক্ষতি নেই।

এ ধরনের বিষয়গুলোয় রাজনীতি ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বড় ধরনের ভূমিকা রাখে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যদি দেশে প্রযুক্তি ও দক্ষতার অভাব থাকে সেটি একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এমন ক্ষেত্রগুলোয় বিদেশীদের ওপর নির্ভরতা অনেক বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রশ্ন তৈরি হয়, যে জ্বালানি পণ্যটি উত্তোলন করা হবে, তার মুনাফা কে নেবে? যদি দেখা যায় যে এটি পুরোপুরি মাল্টিন্যাশনালগুলোর ওপর নির্ভরশীল, দেশী গ্যাস কোম্পানির ওপর না; তখন এই মাল্টিন্যাশনালগুলোই বড় আকারের মুনাফা নিয়ে চলে যাবে। তখন সরকার স্বাভাবিকভাবেই চেষ্টা করবে বিষয়টিকে অন্যভাবে সমাধান করার জন্য। আমি মনে করি, এখানে রাজনৈতিক অনেক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তার সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়িক কাঠামো ও স্বার্থরক্ষার বিষয়টিও জড়িত।

মার্কিন সংস্থার জরিপের তথ্য সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ার বিষয়টি জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম এ প্রসঙ্গে বলেন, ইউএসজিএস একসময় বাংলাদেশে ৩০ টিসিএফ গ্যাসের মজুদের সম্ভাবনার কথা বলেছিল। কিন্তু তারা মাঠপর্যায়ে কোনো কাজ করেনি। তারা মডেলিং করেছে। তখন বলা হলো বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। তারা বাংলাদেশ থেকে গ্যাস রফতানির পরামর্শ দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, নিজেদের জন্য ৫০ বছরের মজুদ না রেখে গ্যাস রফতানি করা হবে না।

 

সূত্র: বণিক বার্তা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button