গাজীপুর কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল, রয়েছে ‘চোরের উপদ্রব’
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ২২ এপ্রিল দুপুর। গাজীপুর জেলা কারাগারে বন্দি স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান এক নারী। কারাগারের ভিতর কাউন্টারে তিনি তার মোবাইল ফোন ও ভ্যানিটি ব্যাগ জমা দেন। দায়িত্বে থাকা কারা পুলিশ কনস্টেবল নাদিরা মোবাইল ফোন জমা রেখে ওই নারীকে একটি টোকেন দেন। তবে ভ্যানিটি ব্যাগের জন্য টোকেন চাইলেও তিনি দেননি।
পরবর্তীতে টোকেন জমা দিয়ে ওই নারী মোবাইল ফোন ফেরত পেলেও ভ্যানিটি ব্যাগ ফেরত দেওয়া হয়নি। কাউন্টার থেকে তাকে জানানো হয়, ‘ব্যাগটি হারিয়ে গেছে।’ পরে ওই নারী কারাগারের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা হাবিলদার আনোয়ারকে ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধারের অনুরোধ জানান। পরে আনোয়ারের পরামর্শে তিনি জেলারের কাছে ‘ব্যাগ চুরির’ লিখিত অভিযোগ করে কারাগারের অভিযোগ বাক্সে ফেলেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ‘চুরি হওয়া ভ্যানিটি ব্যাগটিতে ওই নারীর একটি স্বর্ণের আংটি, হাতঘড়ি, বাসার চাবি, ব্যাংকের এটিএম কার্ড ছিল। লিখিত অভিযোগের পর কারাগারের নিরাপত্তাকর্মীরা ওই নারীকে দুদিন পর দেখা করার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ২৪ এপ্রিল তিনি পুনরায় কারাগারে গিয়ে তার ভ্যানিটি ব্যাগ ফেরত চাইলে নিরাপত্তাকর্মীর টালবাহানা শুরু করেন।’
২৭ এপ্রিল দুপুর। চুরি হওয়া ব্যাগের সন্ধানে ফের কারাগারে যান ওই গৃহবধূ। তবে কারাগারের কাউন্টারে থাকা কারা পুলিশ সদস্যরাসহ তথ্য কর্মকর্তা আনোয়ার ব্যাগ উদ্ধারে টালবাহানা করেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় চলছে গাজীপুর জেলা কারাগারের কার্যক্রম। কারাগারের মূল ফটক পেরিয়ে দর্শনার্থীরা অবাধে কারাগার চত্বরে প্রবেশ করছেন। অথচ দর্শনার্থীদের তল্লাশি করা হচ্ছে না। মূল ফটক ঘেঁষে কাউন্টারে দর্শনার্থীরা মোবাইল ফোন, ব্যাগ ঘুষ দিয়ে জমা রাখছেন তল্লাশির সম্মুখীন না হয়েই। তবে কাউন্টার থেকে মোবাইল ফোন জমা রাখার টোকেন দিলেও ব্যাগ জমার টোকেন দেওয়া হয় না।
এ ছাড়া কারাগারের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে মূল ফটকের পূর্ব দিক। এখান থেকে দর্শনার্থীদের টিকিট দেওয়া হয়। টিকিট কাউন্টারের পূর্বদিকে চা-পানের দোকান এবং কারা ক্যান্টিন। কারগারের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করা বিভিন্ন বয়সী মানুষের এখানে আড্ডা জমে। এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ‘তারা দর্শনার্থীদের সঙ্গে এসেছেন।’ এ ছাড়া এখান থেকে তল্লাশির সম্মুখীন না হয়েই দর্শনার্থীরা প্রবেশ করছে সাক্ষাৎ কক্ষে। কারাগারের মূল ফটকসংলগ্ন কাউন্টারের উত্তর দিকে একটি লোহার খুঁটিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও সেটি দীর্ঘদিন ধরে অচল বলে কারাগারের নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন।
এসব ব্যাপারে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল মামুন জানান, ‘ভুক্তভোগী কোনো দর্শনার্থী সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। এতে প্রতিকার না পেলে কারা মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। গাজীপুর জেলা কারাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা কি না তা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কারাগারের সিসি ক্যামেরাগুলো সচল আছে কি না এ ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হবে।’
গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ার মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, ‘জেলা কারাগারে কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গাজীপুর জেলা কারাগারের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জেল সুপার নেছার আহমেদ জানান, ‘কারাগারে শিগগিরই ২৮টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।’
এ সংক্রান্ত আরো জানতে…..
দুর্নীতির আখড়া গাজীপুর জেলা কারাগার ‘ঘুষে মেলে সব সুবিধা’