গাজীপুর

কালীগঞ্জে চাঁদার দাবিতে হামলা ও চুরি: মোমেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল

বিশেষ প্রতিনিধি : ৩০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে কালীগঞ্জের পাড়াবর্তা এলাকায় জে আর কে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামে এক ফ্যাক্টরিতে হামলা ও চুরির মামলায় প্রধান আসামি মোমেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ।

এছাড়াও মামলা‌ থেকে দুইজনকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেছে পুলিশ।

থানা ও আদালত‌ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অভিযোগপত্রে ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বাদীসহ ১৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪৩, ৪৪৭, ৩৪২, ৩৮৫,৩৭৯, ৪২৭, ৪১১, ৪১৩ ও ৫০৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে {অভিযোগপত্র‌ নাম্বার (১০৪)২৩-০৬-২০২২}।

অভিযোগপত্র‌ দাখিল করেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান।

অভিযুক্তরা হলো, কালীগঞ্জের নাগরী এলাকার রয়ান গ্রামের মোস্তফার ছেলে অভিযুক্ত প্রধান আসামি মোমেন (৪৫)। অন্যরা হলো দাহিন্দী এলাকার হাফিজুল্লাহর ছেলে নাইম (৩৫), পাড়াবর্তা এলাকার ইমান আলীর ছেলে রুহুল (৩৩), আলমাছের ছেলে আলাউদ্দিন (৩০), আহম্মদের ছেলে রাকিব মিয়া (২৮), আনিসুল (৩০), রহিসুল (২৮), আরিফ (২৪), কেটুন এলাকার সত্যরঞ্জনের ছেলে রামু প্রসাদ চৌধুরী (৩৫), গোপাল চন্দ্র দাসের ছেলে লিংকন দত্ত (৪০) এবং পাড়াবর্তা এলাকার আলমাছের ছেলে ইসলাম উদ্দিন (২৮), কেটুন এলাকার মজর উদ্দিনের ছেলে হযরত আলী (৩২) এবং মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানার পাঁচনখোলা এলাকার সামসুল হকের শেখের ছেলে নাছির শেখ (৩৫)।

অপরদিকে কোন‌ সাক্ষা-প্রমাণ না পাওয়ায় পাড়াবর্তা এলাকার মৃত আব্দুল গাফুরের ছেলে সবুজ মিয়া (৩৮) এবং ঠিকানা ও পরিচয় উদঘাটন করতে না পারায় মাওলাকে মামলা ‌থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেছে পুলিশ।

মামলার বাদী জে আর কে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক কামাল হোসেন।

ঘটনার সময় কোম্পানীতে প্রধান আসামি মোমেন (ছবি সংগৃহীত)।

অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ‌ করেছে, তদন্ত উঠে এসেছে জে আর কে কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রিজ কোম্পানী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ আসামি মোমেন, নাইম, রুহুল, আলাউদ্দিন, রাকিব, আনিসুল, রহিমুল, আরিফ, রামু, লিংকন ও‌ ইসলাম উদ্দিন ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে এবং কোম্পানীর বিভিন্ন ক্ষয়-ক্ষতি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুন জখম করার হুমকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় অসামিরা বাদীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে আসছিল। বাদী দাবীকৃত চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অভিযুক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে চাঁদার দাবীতে সময় সুযোগ মত বাদীর কোম্পানীর বড় ধরনের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিয়ে আসছিল। গত ৩১ মার্চ সকাল আনুমানিক ৮টার সময় বাদীর কোম্পানী সাপ্তাহিক বন্ধ থাকা অবস্থায় আসামিরা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দা, ছেন, লোহার রড, চাপাতি, শাবল ও মেশিনারীজ কাটার যন্ত্রপাতি ও নাম্বার বিহীন ৮টি ড্রাম ট্রাক নিয়ে কোম্পানীতে প্রবেশ করে। পরে তারা নিরাপত্তা কর্মী তৈয়ব আলীকে (৫০) রশি দিয়ে বেঁধে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। সে সময়ে অভিযুক্তরা কোম্পানীর বিভিন্ন ক্যামিকেল এবং কাঁচামাল ফেলে দিয়ে তছনছ করে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি করে। পরে কোম্পানীর চারদিকে বাউন্ডারীর ইন্ডাস্টিরিয়াল টিন, ইন্ডাস্টিরিয়াল লোহার পিলার ও লোহার এ্যাংগেলসহ মোট আনুমানিক ২০ লাখ টাকার মালামাল আসামিরা একে অন্যের সহায়তায় তাদের ড্রাম ট্রাকে উঠিয়ে দুপুর ২টার দিকে চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনা দেখে আশ-পাশের লোকজন আগাইয়া আসলে অভিযুক্তরা বাদীকে উদ্দ্যেশ্যে করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং হুমকি দেয় যে, তাহাদের দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দিলে কোম্পানী বন্ধ করে দিবে এবং বাদীকে হত্যা করে কোম্পানী দখল করে নিবে।

অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার সার্বিক নিরপেক্ষ গোপন, প্রকাশ্য তদন্ত, উদ্ধার করা আলামত ও আসামির দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী আনুমানিক ২০ লাখ টাকা‌ মূল্যমানের মালামলের ক্ষতি করে এবং ইন্ডাসটিয়াল টিন, লোহার সিলার ও এ্যাংগেল মিলিয়ে‌ মোট ২০ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এরমধ্যে ১৪৬টি ইন্ড্রাসট্রিয়াল টিন মূল্য আনুমানিক ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭’শ টাকা ও ২১টি লোহার পিলার মূল্য আনুমানিক ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, সর্বমোট ৫ লাখ ৪ হাজার ৭’শ টাকা মূল্যমানের মালামাল উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়াও ১৬৪ ধারার জবানবন্দী অনুযায়ী ১৬ হাজার টাকার মালামাল ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী আসামি নাছের শেখ মাওলার কাছে বিক্রয় করে প্রক্রিয়াজাত করেছে। আসামি নাছের শেখ অভ্যাসগত ও অসাধূ ভাবে চোরাই মালামাল ক্রয়-বিক্রয় করে এবং আসামি হযরত আলী অভ্যাসগত চোর, তার কাছ থেকে ১৪৬ পিছ ইন্ড্রাসট্রিয়াল টিন ও ২১ টি লোহার সিলার উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে। মামলার এজাহারে ছাগল চুরির কথা উল্লেখ থাকলেও এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, ১৬৪ ধারার জবানবন্দী পর্যালোচনা, আলামত এবং মামলার ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতিয়মান হইয়াছে।

সার্বিক বিষয়ে অভিযুক্ত মোমেন‌ বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে আমরা সকলে জামিনে আছি।

সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে ১৩ জনের বিরুদ্ধে গত ২৩ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

উল্লেখ্য: এর আগে গত ৮ এপ্রিল ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৮০ জনের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি, চুরি এবং হুমকির অভিযোগে ১৪৩, ৪৪৭, ৩৮৫, ৩৭৯, ৪২৭ ও ৫০৬ ধারায় কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছিল জে আর কে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক কামাল হোসেন {মামলা নাম্বার ৬(৩)২২}। মামলা দায়েরের পর গত ৮ এপ্রিল এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে মধ্যে রহিসুল, আনিসুল, সবুজ মিয়া ও আরিফকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে ১০ এপ্রিল তাদের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান খান। এরপর ১৩ এপ্রিল গাজীপুর আমলি আদালতের ‌বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিন‌ তাদের দুই দিন করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেন।

এছাড়াও মামলায় সন্ধিগ্ধ আসামি হিসেবে ভাঙ্গারি মালামাল ব্যবসায়ী নাছির শেখকে নাগরীর বরইতলা এলাকা থেকে গত ১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠালে ঘটনার দায় স্বীকার করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিনের আদালতে জবানবন্দিমূলক স্বীকারোক্তি দেয় সে। এছাড়াও ২৮ মে হযরত আলীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

অপরদিকে গত ২১ মে মোমেন‌সহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৪ জনের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি, মারধর, চুরি এবং হুমকির অভিযোগে ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৮৫, ৩৭৯, ৩৮০,  ৪২৭, ৩০৭, ১০৯ ও ৫০৬ ধারায় কালীগঞ্জ থানায় পৃথক আরো একটি মামলা দায়ের করেছে ফ্যাক্টরির মালিক কামাল হোসেন {মামলা নাম্বার ১৫(৪)২২}।

 

আরো জানতে……….

কালীগঞ্জে মোমেনের নেতৃত্বে কোটি টাকার মালামাল চুরি, আদালতে স্বীকারোক্তি

কালীগঞ্জে ব্যবসায়ীকে মারধর, টাকা ও আইফোন চুরি: মোমেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button