ফখরুল ছাড়া বাকি সবাইকে নিয়ে ‘শঙ্কায়’ বিএনপি!
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বিএনপি থেকে একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংনদ সদস্য মোট ৬ জন। তাঁদের মধ্যে একজন দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছেন৷ বাকি আছেন ৫ জন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। মির্জা ফখরুল ছাড়া বিএনপির বাকি চার নির্বাচিত সদস্যও শেষ পর্যন্ত শপথ নিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এই অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল শনিবার সন্ধ্যার পর। বৈঠকের মূল আলোচনার বিষয়ই হলো জাহিদুর রহমান জাহিদের শপথ গ্রহণ এবং পরবর্তী পরিস্থিতি। এই বৈঠকে জাহিদুর রহমাননে দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্তও হয়েছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘‘এসব বিষয়ে দলের মহাসচিব বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন।”
বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় জন সংসদ সদস্য হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া, বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুন অর রশীদ, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান জাহিদ।
বৃহস্পতিবার জাহিদুর রহমান শপথ নেয়ার পর সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘দল বহিস্কার করতে পারে জেনেও আমি শপথ নিয়েছি৷ সংসদে গিয়ে আমি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাবো।”
তিনি শপথ নিলেও এখনও সংসদ অধিবেশনে যোগ দেননি। তাঁর আশা, আরো হয়তো কেউ কেউ শপথ নেবেন। তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে সংসদ অধিবেশনে যাবেন। তবে শপথ নেয়ার পর তিনি সংবাদ মাধ্যমে কথা বললেও তারপর থেকে কথা বলায় বিরত আছেন। তাঁর মেবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে তারা আশঙ্কা করছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি চারজনও যেকোনো সময় শপথ নিতে পারেন। এরইমধ্যে দলের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বললেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা।
জাহিদুর রহমানের শপথ নেয়ার কারণ হিসেবে সরকারের চাপকে মির্জা ফখরুল দায়ী করলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা বরাবরই অস্বীকার করা হচ্ছে। বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শনিবার এক কর্মসূচিতে বলেছেন, ‘‘দু-একজন দলছুট নেতা শপথ নিলে কিছু আসে যায় না।” একই কর্মসূচিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘‘বিএনপির নির্বাচিতরা শপথ নিলেও এই সংসদ বৈধতা পাবে না।”
তবে ড, খন্দকার মোশাররফ হোসেন এর বাইরে আলাদা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের নিয়ে কি হচ্ছে তা নিয়ে বলার জন্য দলের মহাসচিব দায়িত্বপ্রাপ্ত।
সংবিধানের বিধান অনুযায়ী কোনো সংসদের প্রথম অধিবেশন যেদিন বসে সেদিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে কোনো নির্বাচিত সংসদ সদস্য শপথ না নিলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়। তবে আবেদনের ভিত্তিতে স্পিকার যৌক্তিক মনে করলে সময় আরো বাড়িয়ে দিতে পারেন। সেই সময়ের মধ্যে শপথ না নিলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ৩০ জানুয়ারি। সেই হিসেকে ২৯ এপ্রিল ৯০ দিন। আর ২৯ এপ্রিলের মধ্যে শপথ নিতে হবে সংসদ সদস্যপদ বহাল রাখতে। তাই আগামী দুই দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং নির্বাচিতদের সময় কাটছে নানা উদ্বেগের মধ্য দিয়ে।
বিএনপির প্রাধান্যে জাতীয় এক্যফ্রন্টের ব্যানারে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ শপথ নেন ৮ মার্চ৷ আর ২ এপ্রিল শপথ নেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত আরেকজন সংসদ সদস্য মোকাব্বির হোসেন। তারই ধারাবাকিতায় বৃহস্পতিবার শপথ নেন বিএনপির জাহিদুর রহমানও।
বিএনপির আরো ৫ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য আছেন যারা এখনো শপথ নেননি। তাদেরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের (নাচোল- ভোলারহাট – গোমস্তা) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি এখনও দলের সিদ্ধান্তেই আছি। শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আপনাদের জানাবো। তবে স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীরা আমাকে শপথ নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।” এর আগে ২০ এপ্রিল তিনি বলেছিলেন, ‘‘শপথ না নিলে এলাকার লোক আমাকে মারবে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের হারুন অর রশীদ শপথের ব্যাপারে শনিবার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের মোশাররফ হোসেনও সংসদে যেতে ভোটারদের চাপের কথা জানিয়েছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরৗ বলেন, ‘‘আমরা ভোট বর্জন করেছি। প্রত্যাখ্যান করেছি। ভোট ডাকাতির এই নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমাদের পার্টির অবস্থান খুবই পরিস্কার। কেউ শপথ নেবে না। তারপরও কেউ কেউ যদি তার ব্যক্তিগত স্বার্থে শপথ নেয় সেটা তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা। সে তার আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে গেছে। তাদের ব্যাপারে গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘এতে দলের বা দলের নেতৃত্বের কোনো দুর্বলতা নেই। অতীতেও এরকম হয়েছে৷ ওয়ান ইলেভেনের সময়ও হয়েছে। যারা বিচ্যূত হন, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর আমি মনে করি তারা শপথ নিলে দলের তৃণমূলে কোনো নেতিবচক প্রভাব পড়বে না। দল তার শক্তিশালী অবস্থানেই থাকবে।”
তবে তিনি মনে করেন, সরকারে চাপে শপথ নিয়েছে মহাসচিবের এই দাবী যৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘চাপ থাকলেই বা কী? একজন নেতার, একজন এমপির নৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান থাকবে না?”
সূত্র: ডয়চে ভেলে