জিলহজ মাসের বিশেষ ৫ আমল
গাজীপুর কণ্ঠ, ধর্ম ডেস্ক : বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সে হিসেবে আগামী ১০ জুলাই (রোববার) পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
জিলহজ মাস পবিত্র কুরআনুল কারিমে বর্ণিত বছরের চারটি সম্মানিত মাসের একটি। মহান আল্লাহ কুরআনুল কারিমে এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি- আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত।’ (সুরা তাওবা : ৩৬)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ওই মাসগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব।
মাস হিসেবে পবিত্র রমজানুল করিম আর দিন হিসেবে পবিত্র জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ। পবিত্র কুরআনুল করিমের সুরা হজের ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহর নামের স্মরণ করে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে।’ বিশিষ্ট তাফসিরকার হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেছেন, নির্দিষ্ট দিন বলতে এখানে জিলহজ মাসের প্রথম দশককে বোঝানো হয়েছে (ইবনে কাসির)।
তাছাড়া সুরা ফাজরের ১-২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ দশ রাতের। এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, তা হলো জিলহজের প্রথম ১০ রাত।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৫৩৫)। ইবনে আব্বাস রা:, মুজাহিদ ও ইকরামা রহ:-এর মতে, ১০ রাত বলতে জিলহজের ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ মাসের ১০ দিনের মর্যাদা প্রমাণিত।
হাদিসে বর্ণিত এ মাসের বেশ কিছু আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করা সহজ।
আমলগুলো হলো-
এক. নখ, চুল, দাড়ি না কাটা।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যার কোরবানির পশু রয়েছে বা যার পক্ষ দিয়ে কোরবানি করা হবে সে যেন জিলহজ মাসের নতুন চাঁদ ওঠার পর থেকে কোরবানি করার আগ পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটে। যারা কোরবানি দিবেন না তারাও এ আমলটি করলে কোরবানির সওয়ার পাবেন।
দুই. এক থেকে নয় তারিখ পর্যন্ত নফল রোজা রাখা।
উম্মে ছালমা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলল্লাহ সা: চারটি কাজ কখনই ছাড়তেন না এক. আশুরার রোজা। দুই. জিলহজ্জ মাসের এক থেকে নয় তারিখে রোজা। তিন প্রতি আরবি মাসের ১৩ -১৫ তারিখের রোজা। চার. ফজরের দু’রাকাত সুন্নত নামাজ। (মুসনাদে আহমেদ)
তিন. বেশি বেশি তাকবীর পাঠ করা। ( এক- নয় তারিখ আসর পর্যন্ত)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন এ দশ দিনের আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় আমল আল্লাহর কাছে আর নেই। তাই এ দিনগুলোতে তোমরা তাজবিহ (সুবহানাল্লাহ) তাকবীর( আল্লাহু আকবার)তাহলিল( লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) পড়া বাড়িয়ে দাও।
ইবনে ওমর রা: আবু হুরায়রা রা: এ ১০ দিন অর্থাৎ জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে রাস্তাঘাটে, মিনায়, বিছানায়, মজলিসে এবং প্রত্যেক ফরজ নামাযের পরে জোরে জোরে তাকবীর পাঠ করতেন। (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।) যেন লোকেরা তা শুনে আমল করেন।(বুখারী)
৪) কোরবানি করা।
জিলহজ্ব মাসের ১০-১২ তারিখের মধ্যে যার কাছে নেসাব পরিমাণ মাল (নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে) আছে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। নারী-পুরুষ সবার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য। (ইবনে মাজা)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি পশু কেনার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহ না আসে।
(৫) নফল ইবাদত বেশি বেশি করা। যেমন, তওবা ইস্তেগফার, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও মুনাজাত।
মুসলিমদের উচিত জিলহজ মাসের বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদার অংশীদার হওয়ার জন্য নির্ধারিত আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করা।