দুর্নীতির আখড়া গাজীপুর জেলা কারাগার ‘ঘুষে মেলে সব সুবিধা’
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ‘রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ’ স্লোগানটি গাজীপুর জেলা কারাগারের মূল ফটকের ওপর সাইন বোর্ডে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। অথচ দুর্নীতি আর অনিয়মে আকণ্ঠ ডুবে রয়েছে কারাগারটির প্রতিটি ইট-পাথর। নানা ফন্দি ফিকিরে বন্দি ও দর্শনার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিনিময়ে বন্দিরা পাচ্ছেন বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। একটি বিশেষ চক্র কোটি টাকার এই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মাধ্যমে বন্দি এবং সাজাপ্রাপ্তরা প্রতিনিয়ত শিখছেন দুর্নীতির নানা কলাকৌশল। বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা দর্শনার্থীরাও সুবিধা পেতে এসব দুর্নীতির সুযোগ নিচ্ছেন। তবে কারাগার কর্তৃপক্ষ এসব দুর্নীতির খবর জানে না। তাদের ভাষ্য, দুর্নীতির কোনো খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৭ এপ্রিল ২০১৯ খোলা কাগজ- পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দুর্নীতির আখড়া গাজীপুর জেলা কারাগার ‘ঘুষে মেলে সব সুবিধা’’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ সকল তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এবং বন্দিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কারাগারের ‘তুরাগ’ এবং ‘শীতলক্ষ্যা’ ভবন দুটির পাকা মেঝেতে মোটা কয়েকটি কম্বলের ওপর বিছানার চাদর বিছিয়ে তৈরি করা প্রতিটি সিটের (এক ব্যক্তির জন্য) মাসিক ভাড়া তিন হাজার টাকা। তবে প্রথম মাসের ভাড়া অগ্রিম জমা দিয়েই সিট নিশ্চিত করতে হয় বন্দিদের। কিন্তু সিলিং ফ্যানের নিচে কাক্সিক্ষত সিট পেতে চাইলে ঘুষ এবং লবিং দুটোই লাগে। ভবন দুটির প্রতিটি ফ্লোরে চারদিকে বৃত্তাকারে সিটগুলো বিছানো থাকে। এ ছাড়া বারান্দাগুলোতেও সিটের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে যাদের প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা দিয়ে সিট ভাড়া নেওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের রাতে একই দিকে মুখ ফিরিয়ে গাদাগাদি করে ঘুমাতে হয়।
তবে যেসব বন্দি একটু নিরিবিলি থাকতে ইচ্ছুক তাদের জন্যও আছে সেলের ব্যবস্থা। ‘ক’ ও ‘খ’ নামে দুটি সেলের দশটি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে একটি সিট ভাড়া মাসিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এখানেও প্রথম মাসের টাকা অগ্রিম জমা দিতে হয়।
এছাড়া ধনী পরিবারের বন্দিদের সুস্থ শরীরে কারা হাসপাতালে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে এখানে। সেক্ষেত্রে ভাড়া বেশ চড়া। প্রতিটি সিটের জন্য মাসে গুনতে হবে ৬ হাজার টাকা। সচ্ছলরা সিট বাণিজ্যের এ সুযোগ নেওয়ায় প্রকৃত অসুস্থ বন্দিরা চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্বিতল হাসপাতালটির অধিকাংশ কক্ষে বেশ কয়েকটি করে সিট বিছানো থাকে। এভাবে কারাগারটিতে প্রতি মাসে অন্তত কোটি টাকা সিট বাণিজ্য হচ্ছে।
দর্শনার্থীদের কারাগারের ভেতরে প্রতিটি ধাপে পোহাতে হয় সীমাহীন ভোগান্তি। তবে ঘুষ দিলেই উধাও ভোগান্তি। দর্শনার্থীদের বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে টিকিট দেওয়া হয়। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও কাক্সিক্ষত মানুষটির সঙ্গে সহসাই দেখা হয় না। অথচ নিরাপত্তাকর্মীকে ২শ টাকা ঘুষ দিলে মাইকে ডেকে দ্রুত হাজির করা হয় বন্দিকে। এক্ষেত্রে সচ্ছল পরিবারের দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ‘অফিস কলের’ নামের বিশেষ ব্যবস্থায় দর্শনার্থীরা বন্দিদের সঙ্গে নিরিবিলি দেখা করার পাশাপাশি দিতে পারেন খাবার, টাকা এবং পোশাক। তবে এজন্য গুনতে হবে ২১শ টাকা।
কারাগারের ক্যান্টিন এবং ভেতরে (পিসি) ক্যান্টিনে খাবারের দাম আকাশছোঁয়া। বন্দিদের টাকা দিতে গেলেও প্রতি হাজারে একশ টাকা সার্ভিস চার্জের নামে ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া মূল ফটকের ভেতর দর্শনার্থীদের বাধ্যতামূলক মোবাইল ফোন জমা রাখতে দিতে হচ্ছে সেটপ্রতি ২০ টাকা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেল সুপার নেছার আহমেদ জানান, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনুরোধে অফিস কলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া কারাগারের ভেতর কোনো অনিয়ম কিংবা আর্থিক লেনদেন হলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ সংক্রান্ত আরো জানতে…..