আইন-আদালতআলোচিত

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ফারুকীর বিরুদ্ধে ‘ভ্রূণ হত্যার মামলা’ করেছে সাবেক স্ত্রী

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া গর্ভপাত করানো ও ভয় দেখানোর অভিযোগে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-লজিস্টিকস) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এসপি পদমর্যাদার এআইজি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীর সাবেক স্ত্রী আয়শা ইসলাম বাদী হয়ে মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই নালিশি মামলা করেন।

বুধবার (১৬ মার্চ) রাতে এ খবর প্রকাশ করেছে প্রথম আলো অনলাইন

প্রথম আলোর খবর বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার মো. জাফর আহমেদ বুধবার বলেন, এক নারী এআইজি মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে সিএমএম আদালতের নালিশি দরখাস্ত করেছেন। আদালত বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তের জন্য ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) উপকমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আরজিতে বলা হয়, ২০১৯ সালে মহিউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে ফেসবুকে আয়শার পরিচয় হয়। সম্পর্কের প্রথম থেকে আয়শা ইসলামকে দেখা করতে প্রলুব্ধ করেন ফারুকী। এরপর তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আয়শার বাসায় যাতায়াত করেন। প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আয়শাকে বিয়ে করতে চান তিনি। পরে আয়শার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে আয়শা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।

২০২০ সালের ১৮ মার্চ ফারুকী চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলেন, আয়শাকে ভিটামিন ওষুধ খাওয়ানোর কথা বলে গর্ভপাত করানোর ওষুধ খাইয়ে দেন বলে আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওষুধটি গর্ভপাতের ছিল বলে ফারুকী পরে আয়শার কাছে স্বীকার করেন। এ সময় আয়শা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান ফারুকী। সেখানে গর্ভপাত করার সময় স্বামীর নামের স্থলে ফারুকী সই করেন। কিন্তু গর্ভপাতে আয়শার সম্মতি ছিল না।

আরজিতে আরও বলা হয়, গর্ভপাতের পর ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন আয়শা। তবে পরে ফারুকী কৌশলে তাঁর সঙ্গে আবারও সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং সহকর্মীদের কাছে আয়শাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি আয়শাকে বিয়ে করার কথা বলে চাপের মুখে তাঁর স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন। গত বছরের ১৬ এপ্রিল আয়শা জানতে পারেন, তিনি আবারও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় ফারুকী আবারও আয়শার গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করেন।

ভ্রূণ হত্যা করতে না দেওয়ায় ফারুকী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং আয়শা ও গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার আরজিতে। এতে আরও বলা হয়েছে, আয়শা আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে ফারুকী বিয়ে করতে সম্মত হন। শেষমেশ গত বছরের ৬ জুন মুসলিম শরিয়াহ আইন অনুযায়ী আয়শাকে বিয়ে করেন।

এরপর আয়শার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান তিনি। গর্ভের সন্তানকেও হত্যার চেষ্টা করেন ফারুকী। ওই বছরের ২৫ আগস্ট আয়শা নিজের ও গর্ভের সন্তানের জীবন রক্ষার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে আবেদন করেন। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর একই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে আবেদন করেন।

এর আগেই আয়শাকে তালাক দেন ফারুকী। গত বছরের ২৩ নভেম্বর আয়শা কন্যাসন্তান জন্ম দেন। সন্তানের ভরণপোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতে পৃথক একটি মামলা করেছেন আয়শা।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে এআইজি ফারুকীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি। অভিযোগের বিষয়বস্তু উল্লেখ করে ফারুকীর বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। পরে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

মামলার বাদী আয়শা ইসলাম বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর তাঁর সাক্ষ্য নিলেও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত কমিটির কাছে ফারুকীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আয়শা অভিযোগ করেন, ফারুকী মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে হয়রানি করছেন। তাঁর সঙ্গে করা হয়রানির ন্যায়বিচার ও সন্তানের ন্যায্য অধিকার চান।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button