বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ভয়ানক আবিষ্কারের ফলে ধ্বংস হতে পারতো পুরো পৃথিবী!

গাজীপুর কণ্ঠ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : একটা সময় এই পৃথিবীটা কেমন ছিল? হয়ত এই প্রশ্নের বাস্তবিক উত্তর জানা নেই এই প্রজন্মের মানুষের কাছে। এটা হয়ত বলতে পারবেন অনেক আগের প্রজন্মের লোকজন। কিন্তু তাদের কোথায় পাব? তবে বহু সংকলন, বহু পাঠ্য বই থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, এই পৃথিবীটা আগে কেমন ছিল? হয়ত ওই সব বই পড়তে যারা আগ্রহী তারাও বেশ ভালোভাবে বলতে পারবেন, কেমন ছিল সেই পৃথিবী?

তবে এই সময়ে এসে, বিজ্ঞান তার আবিষ্কার আমাদের পুরো পৃথিবীটাকে পাল্টে দিয়েছে। একসময় পৃথিবীর যে রূপের কথা আমরা শুনেছি, তার শতকরা পয়েন্ট পাঁচ ভাগই হয়ত এখন নেই। আজ আমরা মহাকাশ পারি দিতে পারছি এমনকি অন্য গ্রহে বসতি বানানোর চিন্তা ভাবনাও করছি। শুধু ভাবনার মধ্যে নয়, এই ধরনের প্রক্রিয়ারও শুরু হয়েছে এরইমধ্যে। তবে এই প্রত্যেকটি বিবর্তনের পেছনে কিন্তু বিজ্ঞানীদের অবদান। তারা ছিলেন বলে এতসব পরীক্ষা হয়েছে। তারা ছিল বলে পুরো পৃথিবীটা আজ নতুন মুখ দেখেছে। তবে এই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার যেমন ভালো দিক আছে তেমনি আছে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ দিক।

আজ আমাদের আলোচনায় কিন্তু এই ঝুঁকিপূর্ণ দিকগুলো সম্পর্কে। আমরা মানুষ, এই জাতির পজেটিভ দিকগুলোর চেয়ে নেগেটিভ দিকগুলো জানার আগ্রহ খুব বেশি। তাই আজ পাঠকদের জানানোর চেষ্টা করব, কিছু কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, যা এতটাই ভয়ানক হত যদি তা বিফলে যেত নতুবা কোনো রকম ত্রুটি দেখা দিত। অর্থাৎ আবিষ্কারের সময় যদি এসবে কোনো ত্রুটি ঘটত, তাহলে পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারত।

এরই মধ্যে পৃথিবীতে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করা হয়েছে যা পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারতো অনায়াসে। এছাড়াও পৃথিবীর সমগ্র প্রাণী জগত নিমিষেই ধুলোয় মিশে যেতে পারতো। কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার কথা যা আমাদের পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে পারতো।

চলুন জেনে আসি, এমন কি উদ্ভাবন যা এতটা শক্তিশালী।

স্টারফিশ প্রাইম উদ্ভাবন: মহাশূন্যে বিভিন্ন পরিক্ষা নিরীক্ষা প্রথম চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৬২ সালের ৯ জুলাই এই দেশটি মহাশূন্যে একটি পারমানবিক বোমা উৎক্ষেপণ করেন। যার উদ্দেশ্য ছিল নিউক্লিও বোমাটির মহাশূন্যে শক্তি পরীক্ষা করা এবং মহাকাশে বোমা বিস্ফোরণ করলে কি ঘটতে পারে তা জানা। এই বিস্ফোরণটি আজো পর্যন্ত মহাকাশে মানুষের সৃষ্টি বিস্ফোরণের মধ্যে সব থেকে বড় বিস্ফোরণ।

এই পরীক্ষাটি মূলত করা হয় কোল্ডওয়ারের সময়, মোটামুটি প্রশান্ত মহাসাগর থেকে চারশো কিলোমিটার উচ্চতায়। এই বিস্ফোরণের ফলে দেড় মেগাটন ডিএনটির সমপরিমাণ শক্তির উৎপন্ন হয়। যে শক্তি ছিল হিরোসিমা বিস্ফোরণের থেকে প্রায় ১০০ গুণ বেশি। আর এই বিস্ফোরণের ফলে মহাকাশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এমনকি ওই সময় মহাকাশের তিনটি স্যাটেলাইট ধ্বংস হয়ে যায় এবং দুইটি স্যাটেলাইট খারাপ হয়ে যায়। এই বিস্ফোরণটি এতটাই বড় ছিল যে, মহাকাশের প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বৃত্তাকারে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল।

এমনকি এতে ইলেক্ট্রম্যাগ্নেটিভ পালস তৈরি হয়। ফলে মোবাইল ফোনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই বিস্ফোরণের ফলে পৃথিবীর চারপাশে একটি আর্টিফিশিয়াল রেডিয়েশন বেল্ট সৃষ্টি হয়। যা পাঁচ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, যদি ভুল করেও এই বিস্ফোরণটি আমাদের বায়ুমণ্ডলের ওপরে ঘটতো তাহলে পৃথিবীর প্রাণী জগত সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেত। এমনকি পুরো পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যেত। এছাড়াও বায়ুমণ্ডলে রেডিয়েশনের মাত্রা অনেক বেড়ে যেত এবং তা সম্পূর্ণ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরতো। প্রাণী জগতকে পুরোপুরি নষ্ট করে দিত।

বিস্ফোরণে উৎপত্তি শক্তিটি পৃথিবীর ওজনলেয়ারকে নষ্ট করে দিতে পারতো, যা আমাদের সূর্যের আল্ট্রাভায়লেট রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এটি আমাদের পৃথিবীর জেওমেট্রিক ফিল্ড এবং মাগ্নেটিভ ফিল্ডকে নষ্ট করে দিতে পারতো যা আমাদের সোলার রেডিয়েশন এবং আকস্মিক রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করে। এদিকে, এই ঘটনাটির পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ানক পরীক্ষার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেয় এবং ১৯৬৭ সালে আন্তর্জাতিক আইন আউটার স্পেস ট্রেয়াটি তৈরি করে। যেখানে বলা হয়, ভবিষ্যতে কোনো দেশই আউটার স্পেস এ নিউক্লিয়ার বোমা উৎক্ষেপণ করতে পারবে না, করলে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোলা সুপারডিপ বোরহোল পরীক্ষা: এই পরীক্ষাটি করা হয়েছিল পৃথিবীর অভ্যন্তরে কী আছে এবং কিভাবে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে এসব গবেষণার জন্য। ১৯৭০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে একটি গর্ত খোঁড়ার সিদ্ধান্ত নেন, যে গর্তটি পৃথিবীর গভীরতম গর্ত হিসেবে পরিচিত। এটি খোঁড়া হয়েছিল অপটিক সার্কেলে ১৯৬৯ সালে পৃথিবীর নিচে কি আছে তা জানার জন্য। যখন ১২ কিলোমিটার লম্বা একটি গর্ত খোঁড়া হল, ১৯৯২ সালে এসে তখনই তড়িৎগতিতে এর খনন কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ ওই গভীরতায় তাপমাত্রা বেড়ে ৩০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের থেকেও বেশি হয়ে যায়।

এর ফলে কোনো যন্ত্রপাতি বা ড্রিলিং মেশিন ঠিকমত আর কাজ করছিল না। পরে বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে গবেষণা করেন। তারা দেখেন, যদি ওইসময় এটির খনন কাজ বন্ধ করা না হত তাহলে এটি পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারতো এবং তীব্র ভূমিকম্পের সৃষ্টি করতে পারতো। এর ফলে, সুপ্ত আগ্নেয়গিরিগুলো জেগে উঠত এবং ভয়ানক সুনামির সৃষ্টি হত। এক কথায় পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারতো।

দ্যা লারজ হাড্রন কোলাইডোর পরিক্ষা: সর্বশেষ যে পরীক্ষাটি করা হয়েছিল সেটি হল, দ্যা লারজ হাড্রন কোলাইডোর পরীক্ষা। যেটি ছিল, সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত একটি পার্টিকাল এক্সিলারেটর। এটি ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মূলত পৃথিবীর সৃষ্টি কিভাবে হয়েছে এবং বিগ ব্যাং-এ কি ঘটেছিল এবং মহাবিশ্বের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য এই পার্টিকাল এক্সিলারেটর পরিক্ষা চালানো হয়। এটি পদার্থ বিজ্ঞানের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এক্সপেরিমেন্ট। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছয় মিলিয়ন ডলার নির্মিত ১৭ মাইল লম্বা এই পার্টিকাল এক্সিলারেটর-এ ৩০০ ট্রিলিয়ন প্রোটন কণাকে আলোর গতিবেগের ৯৯.৯ শতাংশ গতিবেগে পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা লাগানো হয়। মূলত মাইক্রোস্কোপিক ব্ল্যাক হোল তৈরি করার জন্য এবং সাব-অ্যাটমিক পার্টিকুলারের অস্তিত্ব জানার জন্য এই ধাক্কাটি লাগানো হয়।

এতে বিজ্ঞানীদের বড় ভয়ের কারণ ছিল যে, এই ছোট ছোট মাইক্রোস্কোপিক ব্ল্যাক হোলগুলো যদি চেইন রি-অ্যাকশনের মাধ্যমে তার আশেপাশের সব কিছুকে গ্রাস করতে শুরু করে তাহলে সম্পূর্ণ পৃথিবী একটি পরিপূর্ণ ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে। এতে মহাবিশ্বে পৃথিবীর কোনো চিহ্নই থাকবে না। কিন্তু সফল পরীক্ষণের ফলে সে রকম কিছুই ঘটেনি। একটি ব্ল্যাক হোল যখন তার এনার্জি মহাকাশে ছড়িয়ে দেয় তখন তাকে হকিং রেডিয়েশন বলে এবং ব্ল্যাক হোলটি যত ছোট হবে তত তাড়াতাড়ি তার এনার্জি মহাকাশে ছড়িয়ে পড়বে। তাই এক্ষেত্রে এই পরীক্ষা দ্বারা সৃষ্ট ব্ল্যাক হোলগুলোর এনার্জির রেডিয়েট করেই শেষ হয়ে যেত এবং পৃথিবী ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেত। মূলত এই তিনটি পরীক্ষা সফল ছিল বলে আজ আমরা অনেক বড় বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছি।

যদিও এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে পৃথিবী, ব্ল্যাক হোল এবং সাবঅ্যাটমিক পার্টিকুলারের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে একটি নতুন কণা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। যার নাম দেয়া হয় হিক্স বসন পার্টিকাল। এটিকে গড পার্টিকালও বলা হয়। কারণ বিজ্ঞানীদের মতে, এই পার্টিকালটির দ্বারা অন্য পার্টিকাল সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, সে সময় এই খবরটি পৃথিবীর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আমরা এটিকে ভুয়া খবর বলেই উড়িয়ে দিয়েছি, কিন্তু এটি ছিল বাস্তব। আর এই পরীক্ষাগুলো বাস্তব ও সফল ছিল বলে আজো পৃথিবী ঠিকে আছে আর আমরাও বেঁচে আছি, তা না হলে আমাদের আজ কোনো অস্তিত্বই থাকতো না।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button