গাজীপুর

ইউপি নির্বাচন নাগরী: মাছ চুরির পর এবার তিন প্রার্থীর বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল চুরির মামলা!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালীগঞ্জে আসন্ন নাগরী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে অংশ নেয়া ৩ প্রার্থী ও চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মাছ চুরির মামলার পর এবার মোটরসাইকেল চুরি ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) মামলাটি দায়ের করেন ৭নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থী ইব্রাহিম মৃধা।

একই দিনে প্রায় একই আসামির বিরুদ্ধে পৃথক ঘটনা উল্লেখ করে পর পর দুইটি মামলা হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

মামলার বাদী ইব্রাহিম মৃধা পারাবর্তা এলাকার মৃত ছমির উদ্দিনের ছেলে। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য এবং বর্তমানে জমির ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে।

ইউপি নির্বাচন নাগরী: চাঁদা দাবি ও মাছ চুরির অভিযোগে তিন প্রার্থীরসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা!

মামলায় ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ও বর্তমান সদস্য এবং ৫ নং ওয়ার্ডের ২ সদস্য প্রার্থী ও চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকসহ মোট ২৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত আরো ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দণ্ডবিধি ১৪৩, ২২৩, ৩৭৯, ৪২৭, ৫০৬ ও ১১৪ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে {মামলা নাম্বার ১৩ (১২)২১}।

মামলায় আসামি করা তিন প্রার্থীর দাবি হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই লাগাতার তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

এজাহারে উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী আসামিদের বিবরণ, ”বড়কাউ এলাকার মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া (৩৮), মৃত আঃ কাদের মিয়ার ছেলে সাইদুর রহমান অর্ণব (২৩), মৃত শাহাজউদ্দিনের ছেলে মজিবুর রহমান (৫৫), সেরাজুল মিয়ার ছেলে হায়দার মিয়া (৩০), হাবি মিয়ার ছেলে মারফত আলী (৪০), মোহাম্মদ আলীর ছেলে দিপু মিয়া (৩০) ও অপু মিয়া (২৮), মজিবুর রহমানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৩২) ও সাগর মিয়া (২৭), আহাদ আলীর ছেলে শিমুল মিয়া (৩২), হেকিম মিয়ার ছেলে মাঞ্জু মিয়া (৩২) ও নাইম মিয়া (২৯), ছায়েদ আলীর ছেলে আতিকুর রহমান (৪৫), জহির মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (৩০), হামিদ মিয়ার ছেলে জুয়েল (২৮), সাহাজ উদ্দিনের ছেলে নজরুল (৪৫), পারাবর্তা এলাকার বাতেন মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া (৩৮), হারুন মিয়ার ছেলে রাজীব (৩২), পানজোড়া এলাকার মাজেদের ছেলে পলাশ (৩৪), ইছব কাজীর ছেলে রাজিব কাজী (২৮), মোতালিব মিয়ার ছেলে মাহবুব (৩৮), হাবিবুর রহমান (৩২) ও রায়হান (৩০), ফজর আলীর ছেলে কবির মিয়া (৪৫), কবির মিয়ার ছেলে নাইম মিয়া (২২), আবু আলীর ছেলে পলাশ ওরফে জামাই (৪৫), কাজম আলীর ছেলে রেজাউল হক রানু (৪৫), বড়কাউ এলাকার জাফরের ছেলে রিয়াজুল (২৫) এবং কালিকুটি এলাকার আছাম উদ্দিনের ছেলে রহমত উল্লাহ (৩০)।”

জানা গেছে, মামলায় প্রধান আসামি করা সেলিম মিয়া বর্তমানে ৭ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য ও আসন্ন নির্বাচনের সদস্য পদপ্রার্থী। এছাড়াও ৮ ও ১২ নাম্বার আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হাবিবুর রহমান (মোল্লা) ও কবির মিয়া ৫নং ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। মামলায় এসব তথ্য গোপন করা হয়েছে।

বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, “আসন্ন নাগরী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৭নং ওয়ার্ডের জনগণের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বৈদ্যুতিক পাখা মার্কায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা অনুমানিক সাড়ে ৭টার সময় পূর্বাচলের ২৭ নং সেক্টরে জয়নাল চত্বরের উত্তর পাশের সড়কে নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রধান আসামি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সেলিম মিয়া উল্লিখিত অন্য আসামিরাসহ অজ্ঞাত আরও ৩০ জন আসামি দেশীয় অস্ত্রসহ অতর্কিত হামলা চালায়। সে সময় বাদীর কর্মীরা ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং অনেকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুসি ও লাথি মেরে আহত করে আসামিরা। সে সময় ১ ও ২ নং আসামির হুকুমে অন্য আসামিরা তাদের হাতে থাকা হকিস্টিক ও লোহার রড দিয়ে ২৫ থেকে ৩০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আনুমানিক প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে এবং দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে। যায় যার আনুমানিক মূল্য ৪ লাখ টাকা। সে সময় আসামিরা তাদের পক্ষের প্রার্থীকে ভোট না দিলে এবং তাদের প্রচারণায় অংশ না নিলে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।”

৭ নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য ও আসন্ন নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী সেলিম মিয়া বলেন, ”গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে আমার কর্মী-সমর্থকদের উপর প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে দুইটি প্রাইভেটকার, ২২টি মোটরসাইকেল ও ৮টি আটো রিকসা ভাঙচুর করেছে। ওই ঘটনায় থানায় এজাহার দায়ের করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো আমার ও কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা নিচ্ছে পুলিশ।”

৫ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী কবির মিয়া বলেন, ”আমাদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিজের ওয়ার্ডের নির্বাচনী প্রচারণা রেখে অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে হামলার ঘটনা পুরোটাই মিথ্যা এবং হাস্যকর। গত ১৩ ডিসেম্বর প্রতিপক্ষের লোকজন পানজোড়া মোড় এলাকায় এসে হামলা চালিয়ে আমার এবং স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ওই ঘটনায় থানায় এজাহার দায়ের করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।”

তিনি আরো বলেন, ”প্রায় সকল আসামি অপরিবর্তিত রেখে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে একের পর এক মামলা দিচ্ছে প্রতিপক্ষের লোকজন। মামলায় আসামি করাদের মধ্যে অনেকেই চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজ মিয়ার কর্মী-সমর্থক।”

চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজ মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মামলার বাদী ইব্রাহীম মৃধা বলেন, ”হামলা, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোন আসামি গ্রেফতার করেনি পুলিশ।”

সার্বিক বিষয়ে জানতে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিসুর রহমানের ব্যবহৃত সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য: এর আগে ২০ লাখ টাকা চাঁদ দাবি ও পাঁচ লাখ টাকার মাছ চুরির অভিযোগে একই দিন (১৫ ডিসেম্বর) কালিকুটি এলাকার আল আমিন মিয়া (৩২) নামে এক যুবক বাদী হয়ে নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে অংশ নেয়া এই ৩ প্রার্থী ও চেয়ারম্যান পদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে (প্রায় সকল আসামি অপরিবর্তিত রেখে) একটি মামলা দায়ের করেছে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অলিউল ইসলাম অলি (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত মোমেন মিয়া (লাঙ্গল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ্যাড. সিরাজ মিয়া (চশমা)। এছাড়াও সংরক্ষিত ৩টি ওয়ার্ডে নারী সদস্য পদে ১৪ প্রার্থী এবং ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য পদে মোট ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটা সংখ্যা ৩০ হাজার ৬৯৭ জন। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৫২৬ জন মহিলা ভোটার এবং ১৫ হাজার ১৭১ জন পুরুষ ভোটার রয়েছে।

প্রসঙ্গত: গত ১০ নভেম্বর (বুধবার) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খন্দকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ২৫ নভেম্বর। বাছাই ২৯ নভেম্বর। আপিল ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর। আপিল নিষ্পত্তি ৩ ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৬ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ৭ ডিসেম্বর। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৬ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

 

 

এ সংক্রান্ত আরো জানতে………..

ইউপি নির্বাচন নাগরী: চাঁদা দাবি ও মাছ চুরির অভিযোগে তিন প্রার্থীরসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা!

ইউপি নির্বাচন নাগরী: আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মাহফিলে ভোট প্রার্থনা, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে শোকজ

ইউপি নির্বাচন নাগরী: আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নৌকার প্রার্থীকে সতর্ক করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা

নাগরী ইউপি নির্বাচন: মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

ইউপি নির্বাচন: ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৬ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ

কালীগঞ্জের নাগরীসহ চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর

নাগরী উপনির্বাচন: আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অলি ১২ হাজার ৭৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী

নাগরী উপনির্বাচন: ‘রাতে সিল মারা ঠেকাতে’ কেন্দ্রে ব্যালট যাবে ভোরে, পাঁচ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ

নাগরী উপনির্বাচন: তিন দিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

নাগরী উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার তিন নেতা

নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আটজন

নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন ২০ অক্টোবর

নাগরী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মিয়ার ইন্তেকাল

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button