ইতিহাস-ঐতিহ্য

বাংলার ১৭৫৬-৫৭ সালের ঘটনা প্রবাহ

এমএ মোমেন : বাংলার সিংহাসনে সিরাজউদ্দৌলার অধিষ্ঠান ১৫ মাসেরও কম সময়ের। কিন্তু এ সময়ের ঘটনা প্রবাহের প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল ১৯০ বছর, পরোক্ষ প্রভাব এখনো চলছে।

১৭৫৬ সালের ৯ এপ্রিল ২৩ বছর বয়সে তিনি মসনদে বসেন। ২৩ জুন ১৭৫৭ পর্যন্ত মসনদ ধরে রাখতে পেরেছেন। ২ জুলাই পলাতক থাকাকালে জ্ঞাত ঘাতকের হাতে নিহত হন। বয়স তখন ২৪ বছরের বেশি নয়।

অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ১৩০৪ বঙ্গাব্দে লিখেছেন, সিরাজ ইংরেজদের ঠিকই চিনেছেন। ‘রাজকার্যে লিপ্ত হইয়া ইংরাজের কুটিল নীতির পরিচয় পাইয়া সিরাজউদ্দৌলার ইংরাজ বিদ্বেষ বদ্ধমূল হইয়া উঠিয়াছিল। ইংরাজেরা নবাবের অনুমতি না লইয়া দুর্গ সংস্কারে হস্তক্ষেপ করিয়াছিলে এবং পলায়িত কৃষ্ণবল্লভকে পরম সমাদরে কলিকাতায় আশ্রয় দান করিয়াছিলেন—ইহাতে সিরাজউদ্দৌলার ক্রোধাগ্নিতে ঘৃতাহুতি পতিত হইয়াছিল। তিনি সিংহাসনে পদার্পণ করিবা মাত্র বৃদ্ধ মাতামহের অন্তিম উপদেশ স্মরণ করিয়া ইংরাজদিগকে শাসন করিবার জন্য তাহাদের কাশিমবাজারের “গোমস্তা” ওয়াটস সাহেবকে ডাকিয়া পাঠাইলেন।’

পরবর্তী কাহিনীর সঙ্গে পাঠক যথেষ্ট পরিচিত। এ লেখায় কাহিনীর বর্ণনা না করে সে সময় প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্র এবং তখনকার ও পরবর্তীকালের দু-একটি দলিলের ভাষ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে—

১৭৬৩ সালে ‘ইস্ট ইন্ডিয়া স্টক’-এর ১৮ ও ২৬ জুন প্রকাশিত জনৈক ওল্ড প্রোপ্রাইটরের দুটি চিঠিতে বলা হয় যখন পলাশী যুদ্ধ তুঙ্গে, তখন রবার্ট ক্লাইভ ঘুমোচ্ছিলেন। এ চিঠি অবমাননাকর মনে করে ক্লাইভের বাহিনীর একজন সদস্য রবার্ট ওমরে লিখলেন, এগুলো ডাহা মিথ্যে কথা। তিনি পাশে থেকে ক্লাইভের তত্পরতা দেখেছেন। তিনি রণাঙ্গনেই ছিলেন এবং যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। ওল্ড প্রোপ্রাইটর আসলে লন্ডনের লোম্বার্ড স্ট্রিটের উইলিয়া বেশশিয়ার এবং তিনি কোনো শেয়ারের মালিক নন।

খবরের কাগজ থেকে

ক্যালিডোনিয়ান মার্কারি, ৯ জুন ১৭৫৭

প্যারিস থেকে পাঠানো ২৭ মের একটি সংবাদ ছেপেছে। স্মরণ রাখতে হবে আরো আগে থেকেই ভারতের অধিকার নিয়ে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে এবং বরাবরই যুধ্যমান পরিস্থিতি বিরাজ করেছে।

প্যারিস ২৭ মে ইস্ট ইন্ডিজ থেকে আমরা কনস্টান্টিনোপল মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে বাংলার নবাব গঙ্গার তীরের ইংরেজদের সব স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাতে ইংরেজদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি লিভার (তখনকার ফরাসি মুদ্রা)। এ ধ্বংস সম্পন্ন করার পর বাংলার প্রিন্স করোমানডেল উপকূলের (তামিলনাড়ু) দিকে রওনা হয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, ইংরেজদের যা কিছু আছে তিনি সবই ধ্বংস করে ফেলবেন।

এডিনবরা ইভনিং কুরান্ট, ১১ জুন ১৭৫৭

৭ জুন লন্ডন থেকে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজ পোর্টফিল্ড, এডগট ও চেস্টারফিল্ড ভারতের মালাবার করোমানডেল উপকূল থেকে নিমেরিক বন্দরে (আয়ারল্যান্ড) এসে পৌঁছেছে। যেসব বিষয় জানা গেছে তার একটি হচ্ছে বাংলার নবাব আলিবর্দি খানের মৃত্যুর পর তার দৌহিত্র এবং উত্তরসূরি সিরাজউদ্দৌলা কোম্পানির কাছ থেকে অত্যন্ত উচ্চহারে কর দাবি করে যাচ্ছেন। কোম্পানি তার আদেশ মানতে রাজি হয়নি। ছয় লাখ সৈন্যের বাহিনী নিয়ে নবাব কলকাতা গিয়ে বাংলা প্রদেশে সব কোম্পানি স্থাপনা ও বাণিজ্যের অধিকর্তা হয়ে বসেছিল এবং অত্যন্ত নির্মমতা চালিয়েছেন। ইংরেজদের পরিণতি দেখে ফরাসি ও ডাচরা বিপুল অর্থের বিনিময়ে নবাবের সঙ্গে সমঝোতা স্থাপন করেছে। বাংলায় কোম্পানির অবস্থা দেখে ফোর্ট সেন্ট জর্জ (মাদ্রাজ) ও বোম্বে প্রেসিডেন্সি থেকে কিছু জরুরি সহায়তা পাঠানো হয়েছে। অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের অধীনে হিজ ম্যাজেস্টির স্কোয়াড্রনে বহুসংখ্যক সৈন্য পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা দ্রুত ফোর্ট উইলিয়ামের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে। এ ব্যাপারে তারা অত্যন্ত আশাবাদী।

কলকাতায় কোম্পানির ফ্যাক্টরির যেসব কর্মচারী ও অফিসার নিহত হয়েছে, যারা পালিয়ে আসতে পেরেছে তাদের একটি তালিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের সংখ্যা অনেক। কোম্পানির কর্মচারী ও অফিসারের বাইরে যারা নিহত হয়েছে, তখনো তাদের তালিকা করা হয়নি। তবে আমরা জেনেছি, ১৭৫ জন পালিয়ে গঙ্গায় চলে এসেছিল তাদের ধরে অন্ধকূপে ঢোকানো হয়েছে। তাদের ১৭ জন প্রাণে বেঁচেছে। শোনা যাচ্ছে কোম্পানির ফ্যাক্টরিগুলো ফরাসিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আমরা জানতে পেরেছি, সাহসী ক্যাপ্টেন ডেভিড ক্ল্যায়টনকে (কলকাতায় সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং কমান্ড্যান্ট যিনি গঙ্গায় জাহাজ মেরামত করে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন) ৬০ জন অফিসারের সঙ্গে ব্ল্যাকহোলে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং নির্মমভাবে তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করেছেন।

ক্যালিডোনিয়ান মার্কারি, ১৩ অক্টোবর ১৭৫৮

ভারতের চন্দননগর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে আক্রান্ত ও দখল হওয়ার পর ফরাসিদের হিসাবে তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫ লাখ পাউন্ড স্টার্লিংয়ের কম নয়। তাছাড়া তাদের ছলাকলা ব্যবহার করে স্থানীয়দের সঙ্গে যে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছিল, সে আস্থাও নষ্ট হয়ে গেল।

এডিনবরা ইভনিং কুরান্ট, ২৭ অক্টোবর ১৭৫৭

লন্ডন, আমরা জানতে পেরেছি যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালকরা আসছে বুধবার বাংলা প্রদেশের কলকাতায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিতে কর্মচারীদের কাজের ওপর ভিত্তি করে তাদের পুরস্কৃত করবে, যার শাস্তি প্রাপ্য তাকে শাস্তিও দেবে। পরের সপ্তাহে একটি দরবার বসবে, তাতে সরকারের সুবিধাগুলো ব্যাখ্যা করা হবে। যে সময় দেশের ভেতরে ও বিদেশে যোগ্য মানুষের সেবার জন্য আমাদের দেশ অপেক্ষমাণ, এ সময় যদি কেউ লজ্জাজনকভাবে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়, বিপদের সময় সেনাঘাঁটি ফেলে পালিয়ে যায়, উচ্চাকাঙ্ক্ষী নবাবের ডাকাত বাহিনীর হাতে কোম্পানিকে লুণ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়, তাদের যথার্থই শাস্তি প্রাপ্য। (সংক্ষেপে অনুসৃত)

গেজেট দ্য উলট্রিখট, ২ জুন ১৭৫৭

মহাদেশীয় পত্রিকার খবরের অনুবাদ এটি।

তুরস্কের বসরা থেকে ২৬ জানুয়ারি ১৭৫৭ বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যমে পাঠানো একটি চিঠি আমাদের হস্তগত হয়েছে। করোমানডেল উপকূলে, বিশেষ করে বাংলায় কোম্পানিকে নিয়ে কী ঘটছে তার সঠিক ধারণা এ চিঠিতে পাওয়া যাবে। গত জুনে বাংলার নবাব এক লাখ সেনাবহর নিয়ে কলকাতা অবরোধ করেন। গঙ্গার তীরে ইংরেজদের অধিকারে থাকা বিশিষ্ট শহর এটি। তার অবরোধ এত আকস্মিক ছিল যে খুব কমসংখ্যক লোকই এখান থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছে। অন্য সবাই নবাবের বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। বাজার ও বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে বাণিজ্যের রমরমা এ শহর বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমি গতকাল আমাদের একজন ব্যবসায়ী ব্রোকারের কাছ থেকে খবরটি পেয়েছি। তিনি বন্দর আব্বাস থেকে চিঠিতে জানিয়েছেন। তিনি বোম্বেতে বিধ্বস্ত ইংরেজ জাহাজের ক্যাপ্টেনের সূত্রে জেনেছেন। তিনি গভর্নর জেনারেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পত্র বসরায় এখানকার ইংরেজপ্রধানের কাছে হস্তান্তর করেছেন। বাংলায় ইংরেজদের কুঠি ও বাড়িতে শোকগ্রস্ত নীরবতা বিরাজ করছে এবং ইংরেজরা তাদের বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে বসরায় এসে জমায়েত হচ্ছেন।

আমি বিভিন্ন সময় বসরার দরবারে যাই। পাশা ইউফ্রেটিসে শিকারে যাওয়ায় তিন মাস ধরে যিনি শাসন করছেন, তিনিই আমাকে সবকিছু জানান। বাংলার নবাবের একজন মন্ত্রী কোনো অপরাধের কারণে পালিয়ে চন্দননগরে ফরাসিদের কাছে আশ্রয় কামনা করেছেন। নবাবের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় তারা তাকে আশ্রয় দেননি। কিন্তু কলকাতায় ইংরেজদের কাছে আশ্রয় চাইলে তারা তাকে সুরক্ষা দেন। খবর শুনে নবাব চটে যান; কিন্তু ইংরেজরা তাকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে নবাব অপমানিত বোধ করেন এবং তার সৈন্যবাহিনীকে দিয়ে কলকাতার পতন ঘটান। সেখানে যে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে সে কথা আমি আগে জানিয়েছি।

লে কুরিয়ার দি এভিগা, ২৭ মে ১৭৫৭

একুশ মে প্যারিস থেকে পাঠানো সংবাদে বলা হয়, কনস্টান্টিনোপল থেকে পাওয়া বিশ্বস্ত বাহকের খবরে ইংরেজদের ওপর মারাঠাদের নিষ্ঠুর আক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গঙ্গার তীরে তাদের দুর্গ গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। করোমানডেল উপকূলেও একই ঘটনা ঘটাতে চাচ্ছে। ফরাসি বাহিনীকে শক্তিশালী করতে আমরা সৈন্য পাঠিয়েছি। ভারত থেকে ইংরেজদের সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

লে কুরিয়ার দি এভিগা, ১ জুন ১৭৫৭

২১ জুন প্যারিসের প্রতিবেদন: ভারতে ইংরেজদের সুরক্ষা নিয়ে এখনো সব কথা বলা হয়নি। প্রতিদিন এমন কিছু ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে, যা ইংরেজদের জন্য পরিস্থিতি আরো খারাপ করে ফেলেছে। বাংলার উপকূলে অবস্থিত তাদের সব স্থাপনা হাতছাড়া হয়ে গেছে, তারপর মাদ্রাজ ও বোম্বে হারানোর আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। নবাব আলিবর্দি খানের দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা কলকাতায় নতুন করে সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছেন। এর মধ্যে ইংরেজদের ৬০ জন অফিসার নিহত হয়েছেন। নিহত সৈন্য সংখ্যা জানা যায়নি। পালিয়ে যাওয়া সৈন্যদের ১৫৪ জনকে অন্ধগহ্বরে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

মীরজাফরের পক্ষে ১৭৫৭ বিপ্লবের সম্মানী

কোম্পানি এটাকে বৈপ্লবিক কাজ বলেই অভিহিত করল। সফল বিপ্লবের নগদ পুরস্কার অনেকেই পেয়েছে। সিলেক্ট কমিটির তৃতীয় প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত:

কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে ক্লাইভকে প্রদত্ত ২ লাখ টাকা সেনাবাহিনীর টাকার সঙ্গে ধরা হয়েছে, সুতরাং তা বাদ যাবে (১২,৬১,০৭৫-২২,৫০০); মোট সম্মানী ১২,৩৮,৫৭৫ পাউন্ড স্টার্লিং।

ক্লাইভের প্রাপ্ত জায়গির অপরিবর্তিত রয়েছে।

৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৫৭ শনিবার, ক্যাপ্টেনের লগবই থেকে

মধ্যরাত ১টায় যুদ্ধজাহাজ থান্ডারের ক্যাপ্টেন ওয়ারউইক অক্টাগনের উপরিভাগে অকস্মাৎ ল্যান্ড করলেন। তার অধীনে হিজ ম্যাজেস্টির জাহাজের ছয় লেফটেন্যান্ট মরগান, কলিন্স, লুটভিগ, পেরাও, কার্ক ও রাইভ আর ৭০০ নাবিক। ওয়ারউইকের বিবরণীর সংক্ষেপ:

রাত ২টায় আমরা ক্যাপ্টেন ক্লাইভের সঙ্গে তার ক্যাম্পে যোগ দিই। ক্লাইভের সঙ্গে রয়েছেন ৬০০ ব্যাটালিয়ন সোলজার, গোলন্দাজ ২৫ জন ও ১ হাজার ৩০০ সেপাই। ক্যাপ্টেন ওয়ারউইক প্রতি দলে ২৫ জন নাবিক নিয়োগ করলেন। আমাদের দলে কামান, অগ্নিমিসাইল রয়েছে। রাত ৩টায় আমরা ব্যাটালিয়ন ভ্যানে করে পৌঁছলাম, কামান নিয়ে নাবিকরা কেন্দ্র, সিপাইরা চারপাশে। দিনের আলোয় নবাবের বাহিনীর মুখোমুখি। লেফটেন্যান্ট মরগান ও ক্যাপ্টেন ওয়ারউইক যুদ্ধের কমান্ডে ছিলেন। নবাবের ৪০০ অশ্বারোহী আমাদের আক্রমণ করে। নবাবের পদাতিক ও অশ্বারোহী সৈন্য এক লাখ, সঙ্গে ৬৫টি কামান।

যুদ্ধে ইংরেজের ক্ষতি হয়, বড় লোকক্ষয় হয় নবাবের।

মৃত ও আহত কোম্পানি সৈনিক:

সি-ম্যান নিহত ১৬, আহত ১৬

সোলজার নিহত ৩০, আহত ৪৫

গানার্স নিহত ৫, আহত ০

সেপাই নিহত ২০, আহত ১০

নবাবের পক্ষে আহত ও নিহত ১ হাজার ৩০০।

(সংক্ষেপিত)

চার্লস স্টুয়ার্টের বর্ণনা

তাঁবুতে ফিরে মীরজাফর ক্লাইভকে চিঠি লেখেন, তাতে উল্লেখ করেন অবিলম্বে তাকে অগ্রসর হয়ে রাতেই সিরাজউদ্দৌলায় শিবির আক্রমণ করতে হবে, কিন্তু গোলাগুলির কারণে সন্ত্রস্ত সংবাদবাহক ক্লাইভের কাছে পৌঁছতে পারেনি। নবাবের ভারী কামান আগে শিবির থেকে অনেক দূরে চাকাওয়ালা প্লাটফর্মে স্থাপন করা হয়, কিন্তু সেখান থেকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল না। পুরোটাই মীরজাফরের পরিকল্পনার অংশ। ক্লাইভের বাহিনী যখন কাছাকাছি এসে যায়, ফরাসি যোদ্ধা সিনফ্রে ও অন্যদের কামানের গোলা কিছু সময়ের জন্য ক্লাইভের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করে। মীরজাফরের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ক্লাইভের সঙ্গে যোগ দিতে ডান দিক থেকে যখন এগোয়, ক্লাইভের

বাহিনী শত্রু বিবেচনায় তাদের ওপর গোলাবর্ষণ করতে থাকে। কিছু ক্ষতিসাধনের পর ক্লাইভ বুঝতে পারেন, এটি তার সহায়ক শক্তি। তিনি মীরজাফরের সৈন্যদের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। অপরাহ্ন ৫টায় ক্লাইভ যখন সিরাজের শিবিরে প্রবেশ করেন, তখন দেখতে পান পরিখাগুলো পরিত্যক্ত ও সৈন্যরা পালাচ্ছেন। ২৩ জুন ১৭৫৭ বাংলা ও ভারতের ভাগ্য পরবর্তী ১৯০ বছরের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়।

ক্লাইভ মীরজাফরকে তার তাঁবুতে নিয়ে আসার জন্য ইংরেজ স্ক্র্যাফটন সাহেব ও ভারতীয় আমীর বেগকে পাঠান। মীরজাফর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, তবু আতঙ্কিত সিপাহসালার যখন এসে পৌঁছলেন, হাতির পিঠে স্থাপিত আসন ছেড়ে নামতেই বিস্মিত হলেন যে ক্লাইভের সৈন্যরা তাকে গার্ড অব অনার দিচ্ছে। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো তাকেও হত্যার পরিকল্পনা থাকতে পারে। কিন্তু ক্লাইভ তখনই তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে তাকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব হিসেবে স্যালুট জানান, প্রকৃত বন্ধুর মতোই তোষাখানা লুণ্ঠন ঠেকানোর পরামর্শ দেন, সিরাজউদ্দৌলাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে বলেন।

মীরজাফর নিজের পরিখার দিকে রওনা হন। তোষাখানা লুণ্ঠন প্রতিহত হলেও সিরাজ রাজপ্রাসাদ ছেড়ে যান, ৬ ঘণ্টা পর মীরজাফর সেখানে উপস্থিত হন। সিরাজ তখন আরো করুণ মৃত্যুর প্রতীক্ষায়।

 

লেখক: এমএ মোমেন: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button