যৌন নির্যাতনে নারী ভিকটিমের জবানবন্দি নেবেন নারী ম্যাজিস্ট্রেট
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে অর্পণের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি সার্কুলার জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এ সার্কুলার জারি করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান সার্কুলার জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সার্কুলারে বলা হয়, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এ বর্ণিত অপরাধ সংঘটনে ওয়াকিবহাল ব্যক্তির জবানবন্দি উক্ত আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়। অপরাধের তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে লিপিবদ্ধকৃত উক্ত জবানবন্দি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস এর গোচরীভূত হয়েছে, বর্তমানে বেশকিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী বা শিশুদের জবানবন্দি পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। একজন পুরুষ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নারী বা শিশু ভিকটিম ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিতে সংকোচবোধ করেন। ফলে এরূপ নির্যাতনের শিকার শিশু বা নারী ঘটনার প্রকৃত বিবরণ দিতে অনেক সময় ইতস্তত বোধ করেন। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করা আবশ্যক। এতে নারী ও শিশু ভিকটিমরা সহজে ও নিঃসঙ্কোচে তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে পারবে। এমতাস্থায়, সংঘটিত অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অর্পণের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণকে নির্দেশিত হয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করা গেল।’
তবে সংশ্লিষ্ট জেলায় বা মহানগরীতে নারী ম্যাজিস্ট্রেট কর্মরত না থাকলে অন্য কোনও যোগ্য ম্যাজিস্ট্রেটকে এই দায়িত্ব অর্পণ করা যেতে পারে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সার্কুলারের নির্দেশনা অনুসরণে কোনও সমস্যা বা অসুবিধা দেখা দিলে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনার জন্যও বলা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ২২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনও অপরাধের তদন্তকারী কোনও পুলিশ কর্মকর্তা বা তদন্তকারী অন্য কোনও ব্যক্তি কিংবা অকুস্থলে কোনও আসামিকে ধরার সময় কোনও পুলিশ কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বা ঘটনাটি নিজের চোখে দেখেছেন এমন কোনও ব্যক্তির জবানবন্দি অপরাধের দ্রুত বিচারের স্বার্থে কোনও ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অবিলম্বে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন, তাহলে তিনি কোনও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই ব্যক্তির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার জন্য লিখিতভাবে বা অন্য কোনোভাবে অনুরোধ করতে পারবেন।’
(২) উপধারা (১)-এ উল্লেখিত ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থল বা অন্য কোনও যথাযথ স্থানে ওই ব্যক্তির জবানবন্দি গ্রহণ করবেন এবং গৃহীত জবানবন্দি তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে শামিল করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে তদন্তকারী কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে সরাসরি পাঠাবেন।
(৩) যদি উপধারা (১)-এ উল্লেখিত কোনও অপরাধের জন্য অভিযুক্ত কোনও ব্যক্তির বিচার কোনও ট্রাইব্যুনালে শুরু হয় এবং দেখা যায় যে, উপধারা (২)-এর অধীন জবানবন্দি প্রদানকারী ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রয়োজন, কিন্তু তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন বা তিনি সাক্ষ্য দিতে অক্ষম বা তাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় বা তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার চেষ্টা বিলম্ব, ব্যয় বা অসুবিধার ব্যাপার হবে, যা পরিস্থিতি অনুসারে কাম্য হবে না, তাহলে ট্রাইব্যুনাল ওই জবানবন্দি মামলায় সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করতে পারবে; তবে শর্ত থাকে যে, শুধুমাত্র ওই সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারবে না৷