অর্থনীতিআলোচিতজাতীয়সারাদেশ

নভেম্বরেই বাড়তে পারে গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ডিজেল, কেরোসিন ও এলপি গ্যাসের পর এবার গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) উচ্চমূল্য থাকায় দেশের বাজারে তা সমন্বয় করতে এ পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এ খসড়া চূড়ান্ত হওয়া সাপেক্ষে দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে চলতি মাসেই।

সংশ্লিষ্ট খাতের লোকসান কমাতে সরকার বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ বছরে সরকার ১০ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এ সময়ে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বেড়েছে ১১৮ শতাংশ। খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে ৯০ শতাংশ। দেশে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি। ওই সময় খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ ও পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম ঠিক কী পরিমাণে বাড়ানো হবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাব্য হারের ওপর।

দেশে গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি আমদানি করছে সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে উত্তোলনের পাশাপাশি আমদানীকৃত এলএনজিও জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম ক্রমেই বেড়েছে। যদিও জ্বালানি বিভাগ গ্যাস বিক্রি করছে আগের মূল্যেই। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দিতে হচ্ছে সরকারকে। এ অবস্থায় দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জ্বালানি বিভাগসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কভিড মহামারীর আগে স্বাভাবিক অবস্থায় এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে খরচ হতো ২৫০ থেকে ২৭০ কোটি টাকার মতো। বর্তমানে একই পরিমাণ এলএনজিবাহী কার্গো আমদানিতে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে এলএনজি আনতে হচ্ছে আগের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি দামে। জ্বালানি পণ্য আমদানিতে গত এক বছরের ব্যয় বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে, এতে ব্যয় হয়েছে বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে অনেক বেশি।

গ্যাস ট্যারিফ আদেশের (২০১৯) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলার খরচ ৯ টাকা ১৫ পয়সা ধরে সংস্থাটির জন্য এ বাবদ ভর্তুকি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সংস্থাটিকে নির্ধারিতের চেয়েও অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করে এলএনজি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে সরকারের খরচ হচ্ছে ২৮-৩০ ডলারের মতো। সে হিসেবে চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটি আমদানিতে ভর্তুকি হিসেবে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা।

বর্ধিত এ আমদানি খরচ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন জ্বালানি বিভাগসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বর্তমানে এলএনজি আমদানিতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে, তা বহন করার মতো সাধ্য পেট্রোবাংলার নেই। ফলে অর্থের জোগান নিশ্চিতের পাশাপাশি ভর্তুকি কমাতে মূল্য সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, এলএনজি আমদানিতে যে পরিমাণ খরচ তা মেটানোর মতো যথেষ্ট সামর্থ্য নেই পেট্রোবাংলার। আগামী মাসে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ অর্থ পেট্রোবাংলার পক্ষে জোগাড় করা কষ্টসাধ্য। কারণ পেট্রোবাংলার কাছে যে উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল, সরকার সেখান থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গিয়েছে।

অন্যদিকে, দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তার প্রভাব পড়বে বিদ্যুতেও। দেশে সরবরাহকৃত মোট গ্যাসের বড় একটি অংশ যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে অন্তত ১ হাজার ৪০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের প্রয়োজন হয়। গ্যাস সংকটে বর্তমানে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় পিডিবি চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি হিসেবে ১৬ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা।

পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর একটা প্রস্তুতি চলছে। গ্যাসের দাম কী পরিমাণ বাড়বে, সেটির ওপর ভিত্তি করে মূলত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এদিকে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে শিল্পমালিকদের। তারা বলছেন, দেশের শিল্প খাত সবেমাত্র কভিডের অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তা শিল্প খাতে বড় চাপ তৈরি করবে। একদিকে উৎপাদন খরচ বাড়বে, অন্যদিকে তা সব ধরনের ক্রেতার ওপর বড় মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহসভাপতি ফজলুল হক বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে এ রকম কিছু জল্পনা-কল্পনা আমরা শুনতে পাচ্ছি। এমন কিছু করা হলে সেটি খুবই উদ্বেগের হবে। কারণ আমরা সবেমাত্র কভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

 

 

সূত্র: বণিক বার্তা

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button