‘কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার’ উদ্বোধন করলেন মেহের আফরোজ চুমকি
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : শিক্ষার প্রসারে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার’ উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে পাঠাগার চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগারের শুভ উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিক।
‘কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার’ উদ্বোধন শেষে পাঠাগার চত্বরে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা রোপন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মেহের আফরোজ চুমকি এমপি।
অনুষ্ঠানে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলামের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সুবেদার আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে রচিত ‘চৌদ্দ নম্বর আসামি’ গ্রন্থটি অতিথিদের হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ, কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীনা আক্তার, কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এসএম রবীন হোসেন, কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ.এম অবুবকর চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম প্রমূখ।
এছড়াও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মী, কালীগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিকের উদ্যোগে ও স্থানীয়দের অর্থায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্বাবধানে নির্মিত ২১’শ বর্গফুট আয়তনের এক কক্ষবিশিষ্ট আধুনিক সুবিধা সম্বলিত পাঠাগারের মূল ভবন নির্মিত হয়েছে। পাঠাগারের সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।
কালীগঞ্জ পুরাতন ব্যাংকের মোড় এলাকায় কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ২.৫ বিঘা জমির চারদিকে ৮ ফুট উচ্চতার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে অত্যাধুনিক নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার। নির্মিত কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগারের মূল ভবনের দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট ও প্রস্থ ৩৫ ফুট। ভেতরে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণ করা হয়েছে। বই রাখার জন্য পাঠাগারের দুই দেয়ালে অত্যাধুনিক তাক (সেলফ) নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও বই রাখার জন্য ছোট ছোট তাক বিশিষ্ট বৃত্তা আকৃতির (গোলাকার) অত্যাধুনিক চারটি টেবিল এবং বৃত্তা আকৃতির তিনটি পিলারে তাক নির্মাণ করা হয়েছে। বাহিরে খোলা জায়গায় নির্মাণ হবে “ময়েজউদ্দিন মুক্তমঞ্চ”। এছড়াও বই আকৃতির একটি ফলক ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা
পাঠাগার বিনামূল্যে শিক্ষাগত সম্পদ প্রদান করে। এছাড়াও গৃহহীন এবং অপ্রতুল জনগোষ্ঠীর শিক্ষার জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল পাঠাগার। তাঁরা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে। ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাঠাগার সমাজকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
বেশকিছু কারণে পাঠাগার অপরিহার্য, প্রথম এবং প্রধান সুবিধা হল বিনামূল্যে বই পাওয়া যায়। সব ধরনের বইয়ের প্রাপ্যতা থাকে। পড়াশোনার জন্য একটি সুশৃঙ্খল এলাকায় পরিণত হয় পাঠাগার। ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকে। শুধু কাগজের বই বা ইন্টারনেটের চেয়ে আরও বেশি কিছুর সংগ্রহশালায় পরিণত থাকে পাঠাগার। পাঠাগার হল কমিউনিটি হাব। মানুষকে তথ্যের সাথে সংযুক্ত করার পাশাপাশি, পাঠাগার মানুষকে মানুষের সাথে সংযুক্ত করে। স্কুল চলাকালীন শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো পাঠাগার।
নির্মিত পাঠাগারের ভেতর ও বাহিরের চিত্র
কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগারে প্রবেশ করার জন্য প্রধান সড়ক থেকে নতুন নির্মিত ১০ ফুট প্রস্থ এবং ১৪৭ ফুট দৈর্ঘ্য একটি সড়ক পারি দিতে হবে। এরপর প্রবেশদ্বারে রয়েছে দুই কপাট বিশিষ্ট কাঠের দরজা। কপাটের ভেতরেই ২১’শ বগফুট আয়তনের নির্মিত (ভবন) পাঠাগার। সড়কের বা দিকে নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ টাইলস দিয়ে দৃষ্টিনন্দন বই আকৃতির একটি ফলক ভাস্কর্য। এর পাশেই ফুলের বাগান করা হবে। আর ডান দিকে রয়েছে সম্পূর্ণ ঢালাই করা বিশাল খোলা জায়গায়। খোলা জায়গায় নির্মাণ করা হবে ময়েজউদ্দিন মুক্তমঞ্চ। পাঠাগারের প্রবেশের পর প্রথমেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধু কর্নার। এতে এমনভাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি উপস্থাপন করা হয়েছে যেন জীবন্ত বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ডায়াসে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। এর ডান দিকে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। এছাড়াও রয়েছে অভ্যর্থনা বুথ এবং অফিস কক্ষ। বই রাখার জন্য দুই দেয়ালে নির্মাণ করা হয়েছে ২৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট উচ্চতার এবং ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৮ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মেলামাইন বোর্ডের তৈরী তাক (শেলফ)। এছাড়াও বই রাখার জন্য ছোট ছোট তাক বিশিষ্ট বৃত্তা আকৃতির চারটি টেবিল ও বৃত্তা আকৃতির তিনটি পিলারে অত্যাধুনিক তাক নির্মাণ করা হয়েছে। টেবিলের বাহিরে দিকে বই থাকবে আর ভেতরে বসবে পাঠকরা। টেবিলের মাঝখানে পাতাবাহারের গাছ স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সব মিলে পাঠাগারের বিভিন্ন তাকে ছোট-বড় প্রায় ৫০ হাজার বই সংরক্ষণ করা যাবে। পুরো পাঠাগারে অভ্যন্তরীণ নকশা (ইন্টেরিয়র ডিজাইন) করা হয়েছে। রয়েছে অত্যাধুনিক আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। রয়েছে সংবাদপত্র পড়ার ব্যবস্থা।
পাঠাগার নির্মাণে অর্থ সংগ্রহ
সম্পূর্ণ পাঠাগার নির্মাণে আনুমানিক প্রায় ১ কোটি টাকা অর্থ ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব রাজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকী অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তির দেয়া অনুদান থেকে। অনুদান হিসেবে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা নগদ অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী দিয়েছেন।
পাঠাগারের সদস্য
পাঠাগারে তালিকাভুক্ত পাঠক হিসেবে স্থায়ী সদস্য (আজীবন), সাধারণ সদস্য এবং শিক্ষার্থী সদস্য হিসেবে এই তিন শ্রেণীতে নিবন্ধন করতে পারবে। এছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্যও পাঠাগারে প্রবেশাধীকার উন্মুক্ত থাকবে।
স্থায়ী সদস্য হতে অনুদান হিসেবে পাঠাগারের তহবিলে ৫০ হাজার টাকা জমা করার বিধান নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সাধারণ সদস্য হতে ১ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও কালীগঞ্জ উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করলেই পাঠাগারের শিক্ষার্থী সদস্য হিসেবে গণ্য হবে।
কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগারে ইতিমধ্যে স্থায়ী সদস্য (আজীবন) হিসেবে ১৮ জন এবং সাধারণ সদস্য হিসেবে প্রায় ৩’শ জন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
পাঠাগার পরিচালনা কমিটি
পাঠাগার পরিচালনার জন্য একজন প্রধান উপদেষ্টা, দুইজন উপদেষ্টা, একজন সভাপতি, একজন সদস্য সচিব এবং উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা (দপ্তর প্রধান) ও ৮ জন সার্বক্ষণিক সদস্য বিশিষ্ট পাঠাগার পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে পদাধিকার বলে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, উপদেষ্টা হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ এবং কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এসএম রবীন হোসেন।
সভাপতি হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিক এবং সদস্য সচিব হিসেবে কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও কালীগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা (দপ্তর প্রধান) এবং অধ্যক্ষ সরকারি কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ, অধ্যক্ষ কালীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, অধ্যক্ষ দুর্বাটি এমইউ কামিল মাদ্রাসা, অধ্যক্ষ জামালপুর কলেজ, অধ্যক্ষ আজমতপুর আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ, প্রধান শিক্ষক কালীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রধান শিক্ষক মসলিন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয় ও বালীগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সার্বক্ষণিক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
উদ্যোক্তার দৃষ্টিতে পাঠাগার
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিকের উদ্যোগেই পাঠাগার নির্মাণ শুরু হয়। তাঁর পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানেই নির্মাণ কাজ শেষে পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়েছে।
ইউএনও শিবলী সাদিক বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলায় যোগদানের পর জানতে পারি এ উপজেলায় শিক্ষক হার মাত্র ৫৯ শতাংশ। পরে খোঁজ নিয়ে জানি জ্ঞানপিপাসুদের জ্ঞানচর্চার জন্য কালীগঞ্জে প্রাতিষ্ঠানিক কোন পাঠাগার নেই। তাই কালীগঞ্জে শিক্ষার প্রসার এবং জ্ঞানপিপাসু মানুষের কথা বিবেচনায় করে পাঠাগার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। সে সময়ই বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করি। তিনি পাঠাগার নির্মাণের জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ইউএনও শিবলী সাদিক আরো বলেন, এর প্রায় দুই বছর পর চলতি বছরের শুরুতে (জানুয়ারি মাস) করোনা মহামারি কারণে যখন সারাদেশে লকডাউন চলছে সে সময় বিভিন্ন সামাজিক কাজ করার সুবাদে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কালীগঞ্জ আর এর এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাঈম আহমেদের সঙ্গে পাঠাগার নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং তাঁর উৎসাহে পাঠাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই। এরপর স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করলে তিনিও পাঠাগার নির্মাণের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ইউএনও বলেন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, অর্জিত শিক্ষার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি, সামাজিক ও গণতান্ত্রিক চেতনা, মূল্যবোধের বিকাশ এবং সর্বোপরি অর্থ-সামাজিক প্রয়োজনে তথ্য পরিবেশন ও উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ জ্ঞানপিপাসু মানুষের কথা বিবেচনা করে পাঠাগার নির্মাণের পরিকল্পনা করি। সে সময় কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান মানিকসহ স্থানীয় শিক্ষা অনুরাগীদের উৎসাহে পাঠাগারের জন্য ওই মাসেই জমি নির্বাচন করে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পাঠাগারে একসঙ্গে প্রায় ৩০-৪০ জন পাঠক বই পড়তে পারবে। পাঠাগারে সাধারন সদস্য হতে ১ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন করলেই পাঠাগারের সধারণ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আর স্থায়ী সদস্য (আজীবন) হতে ৫০ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঠাগারের নিরাপত্তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে চারদিকে বসানো হবে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। রোববার ছাড়া প্রতিদিন পাঠাগার খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগারে ইতিমধ্যে স্থায়ী সদস্য (আজীবন) হিসেবে ১৮ জন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
পাঠাগার নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ইউএনও বলেন, সকল প্রকার পাঠকদের জন্য ‘কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগারে’ ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২ হাজার বই সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও ময়েজউদ্দিন মুক্তমঞ্চে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ ময়েজউদ্দিনসহ জাতীয় বীরদের সম্পর্কে শিক্ষামূলক বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শিশুদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগীতাসহ জাতীয় দিবসে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। দর্শনার্থীদের জন্য পাঠাগারে পরিদর্শন বই সংরক্ষণ করা হবে। পরিদর্শন বইতে পাঠক ও দর্শনার্থীরা পাঠাগার সম্পর্কে তাদের মতামত ও পরামর্শ লিপিবদ্ধ করেতে পারবেন। পরবর্তীতে তাঁদের লিপিবদ্ধ করা মতামতের ভিত্তিতে পাঠাগার পরিচালনা করতে ওই পরামর্শ বিবেচনা নেয়া হবে। আশা করা হচ্ছে এলাকায় শিক্ষা প্রসারের মূল কেন্দ্রে পরিণত হবে কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার। অনুদানের অর্থে নিজস্ব তহবিল থেকেই পাঠাগার পরিচালনা করা হবে।
পাঠাগার নির্মাণে সহায়তায় করা সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ইউএনও শিবলী সাদিক।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আনুমানিক প্রায় ২৬’শ বছর পূর্বে প্রাগৈতিহাসিক থেকে ঐতিহাসিক যুগের সন্ধিক্ষনে প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা নগরী তক্ষশীলা ও প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যে (অধুনা ভারতের বিহার রাজ্য) অবস্থিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীব সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
গ্রন্থাগার বা প্রকৃত অর্থে “পাঠাগার” হলো বই, পুস্তিকা ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রির একটি সংগ্রহশালা, যেখানে পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকে এবং পাঠক সেখানে পাঠ, গবেষণা কিংবা তথ্যানুসন্ধান করতে পারেন। বাংলা ‘গ্রন্থাগার’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে গ্রন্থ+আগার এবং ‘পাঠাগার’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে পাঠ+আগার পাওয়া যায়। অর্থাৎ গ্রন্থসজ্জিত পাঠ করার আগার বা স্থান হলো গ্রন্থাগার/পাঠাগার। গ্রন্থাগারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তি হলেন গ্রন্থাগারিক। পাঠাগারের মূল লক্ষ্য থাকে তথ্যসংশ্লিষ্ট উপাদান সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সংগঠন, সমন্বয় এবং পাঠকের জন্য তা উন্মুক্ত করা।
সাধারণ সকল জনগণের জন্য উন্মুক্ত গ্রন্থাগারকে গণগ্রন্থাগার বলা হয়। স্বাভাবিকভাবে এধরনের গ্রন্থাগার অন্যান্য সকল গ্রন্থাগার থেকে আকার এবং সংগ্রহের দিক দিয়ে যথেষ্ট বড় হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ঢাকায় রয়েছে এরকম একটি গণগ্রন্থাগার, যা পাবলিক লাইব্রেরি নামে বহুল পরিচিত।
বিভিন্ন স্কুলে ছাত্র ও শিক্ষকদের জ্ঞানপিপাসা মেটাবার জন্য এবং তাদেরকে জ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট রাখার জন্য আকর্ষণীয় করে এধরনের পাঠাগার প্রস্তুত করা হয়। আন্তর্জাতিক গ্রন্থগার পরিষদ ও প্রতিষ্ঠান ও সংঘ বা IFLA বিদ্যালয় গ্রন্থাগার ইস্তাহার ১৯৯৯-তে বিদ্যালয় গ্রন্থাগার সম্পর্কে যে দিকনির্দেশ করা হয়েছে তা এই রকম- ” সকলের শিক্ষাদান ও শিক্ষণের নিমিত্ত বিদ্যালয় গ্রন্থাগার। আজকের তথ্য এবং জ্ঞান-নির্ভর সমাজে সফলভাবে কর্মনির্বাহের জন্য মৌলিক তথ্য ও ধারণাসমূহ বিদ্যালয় গ্রন্থাগার যোগান দেয়। বিদ্যালয় গ্রন্থাগার বিদ্যার্থীদের আজীবন জ্ঞানার্জনের দক্ষতাসমূহ গড়ে তোলে এবং তাদের কল্পনাশক্তিকে উন্নত করে, যাতে তারা দায়িত্বশীল নাগরিকের জীবন নির্বাহ করতে সক্ষম হয়।”
বিদ্যালয় গ্রন্থাগার থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতর। সাধারণত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য এধরনের গ্রন্থাগার উচ্চমানসম্পন্ন তথ্য উপাদান সংরক্ষণ করে থাকে। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারটি এরকমই একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। বিশেষ কোনো বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজনে আলাদা যে গ্রন্থাগার খোলা হয়, তাকে গবেষণা গ্রন্থাগার বলে। বাংলাদেশের ঢাকার বিজ্ঞানবিষয়ক এরকম একটি গ্রন্থাগার হলো ব্যান্সডক লাইব্রেরী। বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, জাদুঘর, ধর্মীয় সংগঠন তাদের নিজস্ব গ্রন্থাগার পরিচালনা করে থাকে, যেগুলো তাদের কর্মী বা সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় আলাদা উপকরণ সংরক্ষণ করে। পৃথিবীর অনেক দেশের সরকার থেকে বিশেষ কিছু গ্রন্থাগার পরিচালনা করা হয় দেশের এমনকি সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনে তথ্য সরবরাহের স্বার্থে, যেগুলো সরকার ও দেশ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশী-বিদেশী তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে। বিভিন্ন দেশেই গাড়িতে করে বহনযোগ্য গ্রন্থাগার রয়েছে, যেগুলো পাঠকের দ্বারে দ্বারে তথ্যসামগ্রি পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশে এই কাজটি প্রথম চালু করে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। ভেনিজুয়েলায় মমবয় বিশ্ববিদ্যালয় দুটি খচ্চরকে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহার করে পাহাড়ি গ্রামের মানুষদের বই সরবরাহ করে থাকে, গ্রামের লোকেরা যাকে বলে “বিবিলোমুলাস” (বাংলায়: বইয়ের খচ্চর)। একটি সমাজের সংঘবদ্ধ মানুষেরা তাদের কল্যাণার্থে এ ধরনের গ্রন্থালয় প্রতিষ্ঠা করে। তাঁরা সদস্যদের দ্বারা বাড়িতে বাড়িতে বই পৌঁছে দেয়।
এ সংক্রান্ত আরো জানতে…………..
শিক্ষার প্রসারে উদ্বোধনের অপেক্ষায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘কালীগঞ্জ কেন্দ্রীয় পাঠাগার’
কালীগঞ্জে ইউএনও’র উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে ‘ঈশা খাঁ’র আধুনিক সমাধিস্থ