গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশে আর্থিক প্রতারণার ব্যাপারে প্রতারকদের শেষ পরিণতি কী হয়? তারা কী শাস্তি পায়। আর শাস্তি পেলেও প্রতারিতরা কী তাদের টাকা ফেরত পান? আইনে প্রতারিতদের জন্য কী ব্যবস্থা আছে?
বাংলাদেশে ই-কমার্সের নামে আর্থিক প্রতারণায় এখন আলোচনার তুঙ্গে আছে ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটির এমডি মোহাম্মদ রাসেল সস্ত্রীক গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাদের ‘ধামাকা’ জাতীয় উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে নানা অফারে যারা টাকা দিয়েছেন তাদের এখন মাথায় হাত। তারা অফিসের সামনে এখন জড়ো হচ্ছেন তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য। তাদের কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করছেন রাসেলকে ছেড়ে দিলে তারা টাকা ফেরত পাবেন। তাই তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনও করা হচ্ছে। কিন্তু ইভ্যালি টাকা ফেরত দেবে কীভাবে? তাদের সম্পদ আছে ৬৫ কোটি টাকার৷ আর দায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এরসঙ্গে আরো একটি উদাহরণ দেয়া যাক। পিরোজপুরের এহসান গ্রুপ হালাল ব্যবসার কথা বলে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও তাদের সম্পদের পরিমান খুব সামান্যই। তাদের যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো সাইনবোর্ড সর্বস্ব।
ই-কমার্সের নামে ইভ্যালি ছাড়াও আরো নয়টি প্রতিষ্ঠান প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্রতারণা ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত নানা ধরনের ব্যবসার নামে প্রতারকরা ২১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এইসব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় হালের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে ডেসটিনি, যুবক, ইউনি পে টু ইউ ও নানা ধরনের কথিত সমবায় প্রতিষ্ঠান।
বহুল আলোচিত ডেসটিনির মালিক রফিকুল আমিনের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের পর তিনি গ্রেফতার হন। তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও প্রতারিতরা তাদের টাকা ফেরত পাননি। যুবক ও ইউনি পে টু ইউ-এর গ্রাহকদেরও একই অবস্থা।
এই পরিস্থিতি কেন? এটার জন্য আইনি ব্যবস্থার দিকে তাকানো যাক। ইভ্যালি ও এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতারণা বা আর্থিক প্রতারণার মামলা এই দুইটি ধারাতেই হয়। ৪০৬ ধারায় বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড। আর ৪২০ ধারায় প্রতারণা ও আর্থিক প্রতারণা। যার সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড। দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম জানান,”দণ্ডবিধির এই মামলায় প্রতারিতদের অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো বিধান নাই। আদালতে অপরাধ প্রমাণ হলে রাষ্ট্র সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। আর এটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।”
তিনি বলেন, দেওয়ানী মামলা করে প্রতারিতরা অর্থ ফেরত পেতে পারেন। কিন্তু সেই মামলা প্রমাণ করে আদলতের মাধ্যমে অর্থ ফেরত পেতে বছরের পর বছর লেগে যায়। এত ধৈর্য অনেকেরই থাকে না। আর দুদক মানিলন্ডারিং-এর মামলা করে প্রতারকদের ব্যাংক একাউন্ট ও সম্পদ জব্দ করলে প্রতারিতরা তা থেকে অর্থ ফেরত পেতে পারেন। কিন্তু যারা প্রতারিত তাদের প্রমাণ করতে হবে তিনি কী পরিমাণ টাকা দিয়েছেন।”
তবে প্রতারকদের সম্পদ বা হিসাবে কত টাকা আছে তা বিবেচনার বিষয়। টাকা না থাকলে ফেরত হবে কীভাবে?
খুরশিদ আলম বলেন,”রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো ক্ষতিপুরণের বিধান নেই। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলে নীতিমালা তৈরি করে যাতে কেউ প্রতারিত না হয় তার ব্যবস্থা করা। ই-কমার্সের নীতিমালা শেষ পর্যায়ে করে আরো বিপদ হয়েছে। তখন অনেকেই বিশ্বাস করে গ্রাহক হয়েছে। তবে আইন করে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করা যায়।”
সূত্র: ডয়চে ভেলে