গাজীপুর

‘এইডা রাস্তা না, খাল’ এইহানে মাছ ছাড়ার চিন্তা করতাছি

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সড়কটির দুই পাশে কারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। সড়কের মধ্যখানে জমে আছে পানি। সেখান দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর বাজার থেকে ঢাকার আশুলিয়ার শ্রীপুর পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজারো মানুষ।

গাজীপুরের বারেন্ডা এলাকার বাসিন্দা চা–বিক্রেতা সামছুল মিয়া বলেন, ‘এইডা একসময় আমাগো রাস্তা আছিল। এহন এইডা আমাগো খাল। আমরা এইহানে মাছ ছাড়ার চিন্তা করতাছি।’

৫এপ্রিল ২০১৯ প্রথম আলো- পত্রিকায় প্রকাশিত ‘এইডা রাস্তা না, খাল’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ সকল তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাবেক কাশিমপুর ইউনিয়ন ভেঙে সিটি করপোরেশনের সাতটি ওয়ার্ড করা হয়েছে। কাশিমপুর বাজারের পাশে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সামনে থেকে শুরু হয়ে বারেন্ডা, সারদাগঞ্জ হয়ে ওই সড়ক চলে গেছে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার শ্রীপুর পর্যন্ত। এই একটি সড়ক দিয়ে গাজীপুর সিটির চারটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা চলাফেরা করেন। সড়কটির দুই পাশে শতাধিক পোশাক, শিল্পকারখানাসহ ছোট-বড় বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। লাখো শ্রমিকের বসবাস এসব এলাকায়। তারপরও সড়কটির কোনো উন্নয়ন করা হচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। সড়কটির শুরু থেকে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও বড় গর্ত হয়ে পানি জমেছে। এখন বড় ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। এসব স্থানে সড়কের দুই পাশের মানুষের জমির ওপর দিয়ে বা বাড়ির ভেতর দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। দ্রুত সড়কটিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল করার দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

মঙ্গলবার সকালে সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, কাশিমপুর বাজার-সংলগ্ন বিএডিসি কৃষি খামার মোড় থেকে সাভারের শ্রীপুর সড়কের মাদার টেক্সটাইলের আগ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটারের বেশির ভাগ অংশই বেহাল। সড়কটির উভয় পাশে অনেকগুলো রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস আছে। রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য পরিবহন বা শিপমেন্ট করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন পণ্যবাহী ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন এবং শিল্পকারখানার শ্রমিক-কর্মচারীসহ হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। সড়কটির বেশির ভাগ জায়গা খানাখন্দে ভরা। সড়কে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করা হয়েছে। স্টেশনের আশপাশের রাস্তায় খানাখন্দে পানি জমে আছে।

সারদাগঞ্জ এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, তিনি একটি কারখানায় কাজ করেন। রাস্তা দিয়ে কাজে যাওয়ার সময় কয়েকবার জামাকাপড় কাদায় নষ্ট হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে জামা পরিবর্তন করে কাজে যেতে হয়েছে। এমন ঘটনা প্রায়ই কারও না কারও বেলায় ঘটছে।

কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, সড়কটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে ওই রাস্তা দিয়ে দ্রুত আসামি ধরতে বা কোনো কাজে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। সড়কটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।

সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাইকার ১০০ কোটি টাকায় সড়কের দুই পাশে ড্রেনেজ সিস্টেমের একটি প্রজেক্টে সড়কটির কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তিমতো টাকা না পাওয়ায় কাজটি শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, কাজটি না করলে ক্ষতি হয় দেড় কোটি টাকা আর করলে ক্ষতি হয় প্রায় সাত কোটি টাকা। তাই তিনি কাজটি করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে সম্প্রতি আমরা স্থানীয় তিনজন কাউন্সিলর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের হাতে-পায়ে ধরে কাজটি শুরু করতে বলেছি। সড়কটির জন্য এলাকাবাসীর কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। আবার বড় ব্যয়বহুল কাজ নিজেদের পক্ষে করা সম্ভব নয়।’

গাজীপুর সিটির নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ বলেন, এই সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কটি নিয়ে মন্ত্রী, মেয়র, কাউন্সিলর ও স্থানীয় বাসিন্দা—সবাই অখুশি। বাজারমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে, যার কারণে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। সড়কটির নির্মাণকাজ অনেক দিন বন্ধ ছিল। তবে এখন সেই সমস্যাগুলো কাটিয়ে শিগগিরই কাজটি শুরু করা হচ্ছে। প্রথমে রাস্তার উত্তর পাশ দিয়ে ড্রেন (নালা) হবে। আর বাকি অংশের পুরোটাই আরসিসি ঢালাই হবে।

এরকম আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button