দেশে বায়ুদূষণে মারা যায় বছরে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর মৃত্যুহার বাড়ছে। এ দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ২০১৭ সালে দেশে বায়ুদূষণে মারা গেছে ১ লাখ ২৩ হাজার জন। গতকাল প্রকাশিত বৈশ্বিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০১৯’ প্রতিবেদনটি যৌথভাবে তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও দ্য ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনস গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ প্রজেক্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণে ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে ৫০ লাখ মানুষ মারা গেছে। প্রতি ১০ জনে একজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। এ দূষণে মৃত্যুর হারের দিক থেকে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। ২০১৭ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশে মারা গেছে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। বায়ুদূষণে মৃত্যুহারে শীর্ষে রয়েছে চীন, ২০১৭ সালে দেশটিতে মারা গেছে ১২ লাখ মানুষ।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ সর্বোচ্চ পিএম ২ দশমিক ৫ মাত্রার বায়ুদূষণের মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশের বাতাসে ২০১৭ সালে পিএম ২ দশমিক ৫-এর উপস্থিতি ছিল ৬১ মাইক্রোগ্রাম।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, পিএম ২ দশমিক ৫ অতিসূক্ষ্ম হওয়ায় সহজেই মানুষের শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে পড়ছে, পরবর্তী সময়ে যা পুরো শরীরকে আক্রান্ত করছে। এ থেকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদে এ বস্তুকণা মাথাব্যথা, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানা ব্যাধি সৃষ্টি করছে। দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ক্যান্সার, কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাদিয়া সুলতানা বলেন, বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার কারণে হাঁপানিসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি হয়। এছাড়া এসব বস্তুকণা ফুসফুসে জমা হলে ক্যান্সারসহ কঠিন অনেক রোগ হয়। শ্বাসতন্ত্র ছাড়াও বায়ুদূষণের কারণে কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের জন্যও দায়ী এ দূষণ।
এদিকে বায়ুদূষণে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের তথ্যও বলছে, বায়ুদূষণের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার শিশুদের গড় আয়ু ২০ মাস কমে যেতে পারে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বায়ুদূষণের কারণে হাসপাতালে ভর্তির হার ও অক্ষমতা বেড়েছে। এছাড়া শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হূদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এমনকি নিউমোনিয়ার মতো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যু বেড়েছে। বিশ্বে ফুসফুসজনিত জটিলতার কারণে ৪১ শতাংশ, টাইপ টু ডায়াবেটিসের কারণে ২০, ফুসফুস ক্যান্সারে ১৯, হূদরোগে ১৬ এবং স্ট্রোকের কারণে ১১ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী বায়ুদূষণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের জন্য মূলত দায়ী অভ্যন্তরীণ দূষণ, ইটভাটা ও নির্মাণকাজ। ইটভাটার কারণে বাতাসে সূক্ষ্ম নানা ধরনের ধূলিকণা মিশে যায়। নির্মাণকাজের সময় নিয়ম না মেনে মাটি, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী দীর্ঘদিন যত্রতত্র ফেলে রাখা, রাস্তার দুই পাশে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা, সর্বোপরি যানবাহনের কালো ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে। ফলে বাড়ছে সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইডের মাত্রা।
বায়ুদূষণ কমাতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ। তিনি বলেন, বায়ুদূষণ কমাতে সরকারের অনেক কাজ রয়েছে। নতুন ইটভাটা আইন করা হয়েছে। যাতে ইটভাটা থেকে বায়ুদূষণ কমানো যায়, সেজন্য আইনে সব ধরনের বিধান রয়েছে। সনাতন চুল্লির কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ বেশি। তা দূর করতে পরিবেশবান্ধব চুল্লিসহ আধুনিক চুলা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গ্রামগঞ্জে সোলার প্যানেল পৌঁছে গেলে অভ্যন্তরীণ দূষণ কমবে। তিনি বলেন, স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের প্রতিবেদনটি ২০১৭ সালের। তবে বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সূত্র: বণিক বার্তা