গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বৃহস্পতিবার থেকে আবারো দুই সপ্তাহের লকডাউনের সুপারিশ করেছিল জাতীয় পরামর্শক কমিটি। কিন্তু হয়েছে উল্টো। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে লকাউন শিথিল করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে প্রায় সবকিছুই চালু হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে রয়েছে অর্থনীতির প্রভাব। বিশেষ করে গরিব মানুষের বেঁচে থাকার অর্থনীতি।
মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. এম বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘পরামর্শক কমিটি তো ঘরে বসে সুপারিশ করে। তারা তো বাস্তব অবস্থা বোঝেন না। তাদের উচিত লকডাউনের সাথে মানুষের খাবার কীভাবে নিশ্চিত হবে সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেয়া।’’ তার মতে, ‘‘মানুষের খাবার নিশ্চিতকরতে না পারলে কোনোভাবেই লকডাউন কার্যকর হবে না। যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে।’’
১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত লকডাউনে ঢাকায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি না মানা ৯ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা। মানবাধিবার কর্মী নূর খান আদালত এলাকায় গিয়ে বেশ কয়েকদিন ওই আটক ব্যক্তিদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যারা আটক হয়েছেন তাদের অধিকাংশই গরিব মানুষ। তাদের যারা ছাড়াতে আসেন. তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেটের দায়ে কাজের খোঁজে তারা বাইরে বের হয়েছেন। এছাড়া তাদের উপায় ছিল না। অনেকের কাছে ছাড়িয়ে নেয়ার মতো টাকাও ছিল না।’’
নূর খানের মতে, ‘‘গরিব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা না করলে লকডাউন সম্ভব নয়।’’
আর ডা. এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘গরিব মানুষ মনে করে তারা করোনায় নয়, না খেয়ে মারা যাবে।’’
এই করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যারা দিন আনেন দিন খান, ছোট ব্যবসা করেন, যারা হোটেল ও পরিবহন কর্মী। দেশে তিন কোটি গরিব মানুষের সাথে আরো দুই কোটি ৭০ লাখ নতুন দরিদ্র যোগ হয়েছে। করোনায় চাকরি ও কাজ হরিয়েছেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ। এবার লকডাউনে পোশাক কারাখানাসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা খোলা ছিল। ফলে এখানে অভিঘাত কম।
দেশে এখন করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগের দুটো ঢেউ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। লকডাউন দেয়ার পরও সংক্রমণ কমেনি , কমেনি মুত্যু৷ ডা. এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এরকমই হবে। এর বেশি কিছু করা মনে হয় সম্ভব নয়।’’
জাতীয় পরার্শক কমিটির প্রধান ডা. মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা আরো ১৪ দিন লকডাউনের সুপারিশ করেছি। কিন্তু সেটা তো হচেছ না। ফলে সংক্রমণ আরো বাড়বে বলেই ধারণা করছি।’’
দেশের যে অর্থনৈতিক সক্ষমতা তাতে সত্যিাকার অর্থে কঠোর লকডাউন কতটা সম্ভব? সেটা করতে হলে সরকারকে ঘরে ঘরে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। সেটা সরকার পারছে না বলেই কিছুটা লকডাউন আবার কিছু অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড.খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশে মাঝেমধ্যে যেটুকু লকডাউন হচ্ছে এর বেশি সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কারণ, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অভিঘাতও সরকার কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আবার করোনাও দূর করতে চাইছে। এই দুইটি ব্যালেন্স করে সরকার আসলে কাজ করছে।’’
তার মতে, এর বাইরে গিয়ে কঠোর লকডাউন করতে গেলে সরকারকে ব্যাপকভাবে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তার কাঠামো নিয়ে কাজ করতে হবে। সেটা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়৷ সরকারের সেধরনের অবকাঠামোও নেই।
আর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘জীবন জীবিকার সাথে সামঞ্জস্য রেখে লকডাউন করা খুব কঠিন। গরিব মানুষের চাল-ডালের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
এই করোনায় গরিব মানুষের জন্য সর্বশেষ তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় ২২৬ জন মারা গেছেন। ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ২৩৬ জন।
সূত্র: ডয়চে ভেলে